ফোবানা সম্মেলন, গেইলর্ড হচ্ছে এক টুকরো বাংলাদেশ
- আলমগীর কবির, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে
- ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৩৯, আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৯:৫০
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন, কোনো অঙ্গরাজ্যের অংশ না হলেও এর চারপাশটা ঘিরে রেখেছে মেরিল্যান্ড। আর মেরিল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়াকে বিভক্ত করেছে পটোম্যাক নদী। শান্ত প্রবাহের এই নদীর ওপর একটি সেতু ‘উড্রো উইলসন মেমোরিজ ব্রিজ’। এর পিঠে দাঁড়ালে ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যাণ্ড এবং ভার্জিনিয়ার সীমান্ত দেখা যায়।
ওই এলাকার সুন্দর আরো বাড়িয়ে তুলেছে গেইলর্ড কনভেনশন সেন্টার। হোটেলটি পটোম্যাক উপকূলে, ওয়াশিংটন ডিসি থেকে নিচের দিকে এবং ভার্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রিয়ার পাশে। সারা দুনিয়ায় এই সাততারকা হোটেলের নামডাক অনেক। নির্বাচিত হওয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্টরা প্রথম বড় সংবাদ সম্মেলনটি করেন এই হোটেলে।
গেইলর্ড হোটেলেই এবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফোবানা সম্মেলন। ফোবানার পুরো নাম ‘ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন ইন নর্থ আমেরিকা’। উত্তর আমেরিকাপ্রবাসী বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এটি। গেইলর্ড কনভেনশন সেন্টারে বসছে এর ৩৫তম আয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর বিভিন্ন রাজ্যে গড়ে ওঠা বাংলাদেশিদের ছোট সংগঠনগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছে ফোবানা। প্রতিবছর এর সম্মেলন হয়। একেক বছর আয়োজন করে একেকটি অঙ্গরাজ্য। এবার স্বাগতিক রাজ্য মেরিল্যান্ড। ওয়াশিংটনের এই আয়োজক সংস্থাটির নাম আমেরিকান বাংলাদেশি ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি। এর কনভেনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন জিআই রাসেল। আর সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন জাকারিয়া চৌধুরী।
সম্মেলনটি হচ্ছে স্থানীয় সময় আগামীকাল (শুক্রবার)। বাংলাদেশের হিসেবে সে সময়টা গড়িয়ে যাবে শনিবারে। মেরিল্যান্ডে বৃহস্পতিবার চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। বিকেলের দিকে কনভেনার জিআই রাসেলকে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় গেইলর্ড কনভেনশন সেন্টারে। সেন্টারের লবি থেকে পটোম্যাকের সুন্দর স্পস্ট। উড্রো উইলসন মেমোরি ব্রিজের চমৎকার শৈলি যে কারো নজর কাড়তে বাধ্য।
মেরিল্যান্ডের বাতাস শুকনো। আর বিকেলের ঝলমলে আলো তৈরি করেছে মোহনীয় জাল। তাপমাত্রা তখন মাইনাস পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে তুলনায় ঢাকা থেকে গায়ে চড়িয়ে যাওয়া শীতের পোশাক খুবই নগণ্য। দেখলে মনে হয় ওখানকার শীত সহ্য করা কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু শীত যখন হাঁড়ে গিয়ে বিঁধে তখন সবটাই ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বাইরে বেশি সময় দাঁড়ানো গেলো না। বাধ্য হয়েই সেন্টারের অন্দরমহলে ঢুকে যেতে হলো।
সেখানে বসেই অনুষ্ঠান নিয়ে কথা হয় জিআই রাসেলের সাথে। তিনি শুরু করেন গেইলর্ড সম্মেলন কেন্দ্র দিয়েই। এবারের ফোবানা কনভেশন নিয়ে তার বাড়তি আনন্দ। একে তো আয়োজন করছে তার সংস্থা। তার ওপর পৃথিবীর প্রথম কাতারের সাত-তারকা হোটেলে।
রাসেল বলেন, ‘এখানে মূলত মার্কিন সরকারি সম্মেলনগুলো হয়। আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্স এখানে অনুষ্ঠান করে। এবার কেবল ব্যতিক্রম। আমরা অনুমতি পেয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্ত্রী উপলক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট যখন ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন এই গেইলর্ড হোটেলেই সংবাদ সম্মেলন করেন। তাই এটিকে ইউএসএ'র হাই অফিশিয়াল হোটেলও বলা হয়।’
গেইলর্ড হোটেলে এর আগে বাংলাদেশের কোনো অনুষ্ঠান হয়নি বলেও জানান তিনি। এটি ৩৫তম আয়োজনের বড় অর্জন। এছাড়া এবারের আয়োজনে থাকছে ট্রেড এক্সপো’র মতো একটি সংযোজন। এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পাওয়া সহজ হয়।
রাসেল বলেন, ‘স্থানীয় মেয়রের অনুমতি নিয়ে আমরা এবার এটি শুরু করতে পেরেছি। এখন থেকে প্রতি বছরই থাকবে। আরো কয়েকটি দেশ আমাদের সাথে যোগ দেবে।’
ওয়াশিংটনে ট্রেড এক্সপো করে বাংলাদেশের লাভ কী?
প্রশ্নের জবাবে জিআই রাসেল বলেন, ‘বাংলাদেশের পণ্য পৃথিবীর সবার সামনে আমরা এই এক্সপোর মাধ্যমে তুলে ধরতে পারবো। অন্যদেশ এখান থেকে বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে।’
সবশেষ তিনদিনের অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথম দিন আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হবে বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের মাধ্যমে। এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন হবে। থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ বছর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর উদযাপনের আয়োজনও। মূলত এই কনভেনশন সেন্টারটি একটি মিনি বাংলাদেশ পরিণত হবে।’
তিনি জানান, দ্বিতীয় দিন কালচারাল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ট্রেড শো, আইটি এবং গার্মেন্টসের রফতানি পণ্যগুলো এখানে উপস্থাপন হবে।
তৃতীয় দিন হবে ম্যারাথন দৌড়। ওইদিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে বিনিয়োগকারী বাংলাদেশীদের সম্মাননা দেয়া হবে। এছাড়া আলাদা করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তো থাকছেই।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ৩৫তম ফোবানা সম্মেলন নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন হয়েছিল। সেখানে জিআই রাসেলের সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের চেয়ারপারসন জাকারিয়া চৌধুরী, মেম্বার সেক্রেটারি শিব্বির আহমেদ, স্বাগতিক কমিটির নিরাপত্তা বিষয়ক সাবকমিটির চেয়ারপারসন দেওয়ান জমিরসহ ফোবানার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
ওই সম্মেলনে চেয়ারম্যান জাকারিয়া চৌধুরি জানিয়েছিলেন, ফোবানা কালচারাল এবং সামাজিক সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হলেও এটি এখন একটি মানবিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। এ বছর করোনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সহায়তা করেছে সংস্থাটি। এছাড়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অনেকেকেই ফোবানা স্কলার্শিপ দেয়া হয়।
জি আই রাসেল বলেন, সম্মেলনের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। তিনদিনব্যাপী আয়োজিত এই ফোবানা সম্মেলনে ফ্যাশন শো, মিস ফোবানা, ম্যাগাজিন, বিজনেস লঞ্চ, বইমেলা, মিউজিক আইডল, ড্যান্স আইডল, সেমিনার, ইয়ুথ ফোরাম, ইন্টারফেইথ ডায়ালগসহ নানা ইভেন্টের প্রন্তুতি নেয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের দুই শীর্ষ নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ এবং ওয়ার্দা রিহ্যাব অংশগ্রহণ করছেন। ওই পর্বে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, রবি চৌধুরী, শফি মন্ডল, লায়লা, লুইপাসহ জনপ্রিয় তারকারা ইতোমধ্যে ওয়াশিংটনে এসে পৌঁছেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে এক টুকরো বাংলাদেশকে পেতে কেবল একটি রাতের ব্যবধান। সকাল হলেই উত্তর আমেরিকার নানা প্রান্ত থেকে আসা বাংলাদেশিরা জড়ো হবেন পটোম্যাক নদীর পাশে। এখানে গাছের রঙ সবুজ নয়, লাল আর হলুদের মিশেল।