সোয়াজিল্যান্ডে আতঙ্কে বাংলাদেশীরা
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৬ জুলাই ২০২১, ২৩:২৬
সোয়াজিল্যান্ড নামে পরিচিত আফ্রিকার দেশ এসোয়াতিনিতে সহিংসতার জেরে বিপাকে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
স্থানীয়দের রোষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের পাশাপাশি, লুটতরাজের শিকার হয়েছেন তারা। আতঙ্কে দেশটি ছাড়ার কথা ভাবছেন অনেকে।
আফ্রিকার শেষ পূর্ণ রাজতন্ত্রের দেশ সোয়াজিল্যান্ড বা এসোয়াতিনিতে গত সপ্তাহ থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা চলছে। রাজতন্ত্র বিরোধী বিক্ষোভ দমনে সরকার সেনাবাহিনীও মাঠে নামিয়েছে। দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অন্তত ২০ জন নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
এদিকে সহিংসতার ঘটনায় বিপদে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত বিদেশীরা। বিশেষ করে দেশটিতে থাকা বিপুল এশিয়ানদের ব্যবসা-বাণিজ্য জ্বালিয়ে দেওয়া ও লুটতরাজের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডয়চে ভেলের কাছে সেখানে বসবাসরত একাধিক বাংলাদেশী জানিয়েছেন, তাদের দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর করা হয়েছে। অনেকে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।
১৯৯৮ সাল থেকে দেশটিতে বসবাস করছেন ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, গত দুই যুগে সেখানে এমন পরিস্থিতিতে তারা কখনো পড়েননি। বলেন, ‘বাংলাদেশীসহ বেশিরভাগ এশিয়ান দোকান, সম্পদে অগ্নিসংযোগ বা লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে। আমাদের ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশীরই দোকানপাট আক্রান্ত হয়েছে। অনেক বাংলাদেশী এখন সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। তাদের পরনে যে জামাকাপড় শুধু সেটিই আছে। এমনকি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’
আশরাফুল আলমের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত বাংলাদেশী কাজ করেন। দেশটির রাজধানী বাবানেতে তার বাড়িতে এখন আশ্রয় নিয়েছেন নারী ও শিশুসহ আশপাশের প্রায় ৬০ জন বাংলাদেশী। তাদেরই একজন বদরুজ্জামান চৌধুরী। তার একাধিক ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা রয়েছে দেশটিতে। এরমধ্যে একটিতে ভাংচুর করা হয়, বাকিগুলোতে হামলা করা হলেও নিরাপত্তাক্ষীরা সেগুলো রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তিনি।
ডয়চে ভেলেকে এই প্রবাসী বলেন, ‘অনেক বাংলাদেশী মিলে একটি জায়গায় থাকার চেষ্টা করছি। আমরা এখানে ৬০ জনের মতো একসাথে আছি। এছাড়া মানজিনি নামের আরেকটি বড় শহরেও অনেকে একসাথে থাকছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে আমাদের খাবারে সংকট দেখা দেবে।’
ঘরে এসেও হামলা করা হতে পারে এমন আতঙ্কে ভুগছেন তারা। ‘ওদের একটা মাইন্ডসেট হয়েছে আমরা বোধহয় ওদের সবকিছু নিয়ে নিচ্ছি। যারা আন্দোলন করছেন তারা হয়তো ওদের মনে এমন একটি বিষয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন,’ বলেন বদরুজ্জামান।
এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশীদের অনেকে প্রতিবেশী দক্ষিণ আফ্রিকায় আশ্রয় নেয়ার কথা ভাবছেন। তবে পরিস্থিতির কারণে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকা ও মোজাম্বিকের সীমান্ত ঘেরা ছোট দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাসও নেই। সহায়তার জন্য তাই তারা যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কাছের দূতাবাস প্রিটোরিয়াতে।
সেখানে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের দায়িত্বে থাকা নুর-ই হেলাল সাইফুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আমাদের তথ্য অনুযায়ী সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো হচ্ছে।’
সেখানকার বাংলাদেশিদের সাউথ আফ্রিকায় স্থানান্তর সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কারো যদি ভিসা থাকে তিনি চাইলে নিজ দায়িত্ব সাউথ আফ্রিকায় আসতে পারেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু করা হচ্ছে না। ওখানকার পরিস্থিতি এত খারাপ হয়নি যে সাউথ আফ্রিকা সরকার তাদের বিনা ভিসায় ঢুকতে দিবে।... আমরা যোগাযোগ রাখছি, তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দিচ্ছি। বাংলাদেশের সরকারও বিষয়টা জানে। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না পরিস্থিতি এত খারাপ যে ওই দেশ ত্যাগ করে চলে আসতে হবে।’
বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানিয়েছেন, সাউথ আফ্রিকায় বাংলাদেশ দূতাবাস এই বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে।
এদিকে সোয়াজিল্যান্ডের পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। জেনেভায় সংস্থাটির মুখপাত্র লিজ থ্রোশেল সাংবাদিকদের কাছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণের সমালোচনার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত তবে আবারো অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কায় আমরা উদ্বেগে রয়েছি।’
প্রবাসীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সোয়াজিল্যান্ডে বর্তমানে প্রায় ১৮ শ’ বাংলাদেশী বসবাস করেন। যাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ব্যবসার সাথে যুক্ত।
সূত্র : ডয়চে ভেলে