প্রবাস মানে একাকী জীবনের গান
- সবুজ আহমেদ
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০৯:১১
ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সুস্থ স্বাভাবিক দেহে এক বুক আশা নিয়ে দেশ হতে বিদেশে আসেন বহু বাংলাদেশী। পরিবারের সবাইকে সুখে রাখার দায়িত্ব একা বহন করতে গিয়ে মানসিক চাপে নিজেকে নিংড়ে দিতে দ্বিধা করে না একেকজন প্রবাসী। যেন শুকনো তেজপাতার মতো একেকটা প্রবাসীর জীবন। দেশে থেকে কত স্বপ্নই না দেখে, অর্থ উপার্জন করে দরিদ্রতা ঘোচাবে, সংসারে অভাব থাকবে না স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, মূলত হাসি খুশিতে সে আশায় বিদেশে আসে। বেকার জীবনকে ছুটি দিয়ে প্রত্যাশার হাজার ফিরিস্তি নিয়ে হাজার, কোটি কিলোমিটার দূরে এসে পরদেশে পরের অধীন কর্মময় জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করে।
পরাধীন দেশে পদার্পণ করার সাথে সাথেই ভিনদেশী শ্রমিকদের সাথে শ্রমের বিভাজন তারপর হাড়ভাঙা খাটুনির জীবন সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। ঊষার আলো উদয় আর সূর্যাস্ত মাঝে ভাগ্যের চাকা ঘুরপাক খায়। জীবনের চাকা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যায় প্রতিটি প্রবাসী।
প্রবাস এমন একটা জায়গা ডাক নাম তার জেলখানা। অসুস্থ হলেও এখানে দেখার কেউ থাকে না, সেবা বলতে নিজের দেখভাল নিজেকে করতে হয়, এখানে রেঁধে রাখার কেউ নেই, কাজ শেষ করে এসে রাঁধতে হয় অতঃপর খেতে হয়। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনিচ্ছার অনেক কিছু করতে হয়, মানতে হয়, মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। প্রবাসে সময়ের মূল্য মানে দুষ্প্রাপ্য বাঘের চোখ?
সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা একদম হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই, ঘড়ির কাঁটার মতো জীবন ছকে বাঁধা, চোখে দেখলেও সব কিছু বলা যায় না, হিসাব করে পা ফেলতে হয়, নিয়ম করে ঘুম থেকে উঠে কাপড় কেচে কর্মস্থলের দিকে হাজিরা দিতে ছুটতে হয়, দেরি হলে মাস শেষে মাইনে কেটে রাখে, মন চাইলেও কেউ কারো জন্য কিছু করতে পারে না এমন কি কারো সাথে সৌজন্যমূলক দেখা করা সুযোগ মেলে না, এখানে জীবন মানে গন্ধহীন ধূপ, জ্বলতে থাকে গলে ক্ষয় হওয়া পর্যন্ত মোমবাতির মতো, চলতে থাকে অবিরত অবিরাম, কোথাও থামে না বিরতিহীন এ যাত্রা।
লেখক : সৌদি আরব প্রবাসী