২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের অপমান

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবাদ বর্জনের ঘোষণা

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সংবাদ বর্জনের ঘোষণা - ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে দাওয়াত দিয়ে হলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আর এর প্রতিবাদে ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকদের সংগঠন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ব্রিটেনে সফররত আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের খবর প্রকাশে বিরত থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চোখের চিকিৎসার জন্য ১৫ দিনের সফরে যুক্তরাজ্য অবস্থান করছেন। তার এই সফরে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেত্রীর সাথে নেতা-কর্মীদের একটি মত বিনিময়ের আয়োজন করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী চোখের চিকিৎসার পর সময় দিতে পারছিলেন না। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের শোকের মাস আগষ্ট শুরু হলে নেতা কর্মীরা একটি আলোচনা সভা করার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করে।

নেতা কর্মীদের অনুরোধে ৩ আগষ্ট শনিবার সেন্ট্রাল লন্ডনের মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে আলোচনা সভার আয়োজন নিয়ে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। এরই অংশ হিসেবে আলোচনা সভায় অংশ গ্রহণের জন্য দাওয়াত পত্রের ব্যবস্থা করা হয়, যা ছাড়া কাউকে হলে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। আমন্ত্রণ পত্রে উল্লেখ করা হয়:

১. নিরাপত্তাজনিত কারণে হলের প্রবেশপথে পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।

২. পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং আমন্ত্রণপত্র সাথে রাখতে হবে।

৩.কোন মোবাইল ফোন, হ্যান্ডব্যাগ এবং ক্যামেরা সাথে রাখা যাবে না।

যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ আয়োজিত ওই আলোচনা সভার দাওয়াত পত্রে অনুষ্ঠান শুরুর সময় দেয়া হয় দুপুর ১টা আর হলের দরজা খোলার সময় দেয়া হয় সকাল ১১টা। ১১টায় হলের দরজা খোলার সাথে সাথে শত শত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা হলে প্রবেশ করতে শুরু করে। আলোচনা সভায় অংশগ্রহণকারী নেতা কর্মীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দুপুর ১টার পরও অনেক নেতা কর্মীদের হলে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। দুপুর সাড়ে বারটার দিকে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট নাহাস পাশা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট নবাব উদ্দিন হলে প্রবেশ করতে যায় হাতে দাওয়াত পত্র নিয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফের সদস্যরা তাদের সেসময় ফিরিয়ে দেয়। এর একটু পরেই ব্রিটেনের বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল টিভি ওয়ানের স্টাফ রিপোর্টার কয়েস আলী প্রবেশ করতে গেলে তাকেও ফিরিয়ে দেয়া হয়। দাওয়াত পত্র দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ার সাংবাদিকরা। পরে শোক দিবসের আলোচনা সভা চলাকালে হলের ভেতরে থাকা অন্যান্য সাংবাদিকরা এখবর পেয়ে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ক্লাবের হোয়াটসআপ গ্রুপে। সিনিয়র সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়ে অপমান করায় হলের ভেতরে থাকা সাংবাদিকরা তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুষ্ঠান বর্জন করে বাইরে বের হয়ে আসে।

জানা যায়, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় ৯ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মীদের দাওয়াত দিয়ে পরে তা বাতিল করা হয়। কিন্তু কি কারণে তা বাতিল করা হয়েছে তা এখনও কেউ জানতে পারেনি। বাতিল হওয়া নামের তালিকায় আছেন, লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ব্রিটেনের প্রাচীন সংবাদপত্র সাপ্তাহিক জনমতের চিফ এডিটর ও বিডিনিউজ২৪ এর ব্রিটেন প্রতিনিধি সৈয়দ নাহাস পাশা, সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদক নবাব উদ্দিন, এনটিভি ইউরোপের সিইও সাবরিনা হোসাইন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের ইউকে করেসপন্ডেন্ট হাসান হাফিজুর রহমান, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের ইউরোপ ব্যুারো চিফ এ এস এম মাসুম, সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিক মতিউর রহমান, সাপ্তাহিক দেশ এর সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, চ্যানেল এস এর হেড অব নিউজ কামাল মেহেদী, টিভি ওয়ানের স্টাফ রিপোর্টার কয়েস আলী।

সিনিয়র সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়েও হলে প্রবেশ করতে না দেয়া এবং আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠান বর্জন করার খবর ব্রিটেনের সাংবাদিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের হোয়াটসআপ গ্রুপের মাধ্যমে আলোচনা করে বিকাল ৬টা ১৫ মিনিটে জরুরী সভার আহবান করা হয়। জরুরী সভায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মেম্বাররা ছাড়াও ব্রিটেনের বাংলা মিডিয়ায় কর্মরত অনেক সাংবাদিক অংশ নেয়। তারা সবাই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। সভা শেষে সকলের সাথে আলোচনা মোতাবেক সিদ্ধান্তসমূহ উপস্থিত সাংবাদিকদের পড়ে শুনান প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট এমদাদুল হক চৌধুরী।

তিনি জানান, যতদিন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ না করে বা সম্মানজনক সুরাহা না করে ততদিন পর্যন্ত ব্রিটেনের সকল বাংলা মিডিয়া তাদের ও তাদের সব অঙ্গ সংগঠনের খবর প্রকাশ থেকে বিরত থাকবে। এছাড়া সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে ওই ঘটনার প্রতিবাদে ও প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেনের সব বাংলা সংবাদপত্র একটি খালি জায়গা রাখা হবে। প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হবে, কি কারণে সিনিয়র সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করতে দেয়া হলো না। আরো কিছু সাংবাদিকদের দাওয়াত দিয়ে কি কারণে পরে তাদের আমন্ত্রণ বাতিল করা হলো তাও জানতে চাওয়া হবে। এছাড়া এ ঘটনার জন্য যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে বলে জানান এমদাদুল হক চৌধুরী।


আরো সংবাদ



premium cement