যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনারের সাথে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের মতবিনিময়
- যুক্তরাজ্য সংবাদদাতা
- ২৪ জুন ২০১৯, ১০:৫৯
বাংলাদেশ ও কমিউনিটির সামগ্রিক কল্যাণে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় করেছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম। গত বুধবার পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেনে লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাব অফিস পরিদর্শনে এসে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম মূলত ক্লাবের নব নির্বাচিত নির্বাহী কমিটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনন্দন জানাতে এ সৌজন্য সাক্ষাতে এসেছিলেন। সভার শুরুতেই তিনি প্রেস ক্লাবের আয়োজনে পরে কোন এক সময় সকল সাংবাদিকের উপস্থিতিতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরী। লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মুহাম্মদ জুবায়েরের পরিচালনায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে হাইকমিশনার বলেন, তিনি সামগ্রিকভাবে মিডিয়ার সাথে কাজ করতে চান। প্রেস ক্লাবকে সাথে নিয়ে দেশ ও কমিউনিটির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে চান। অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের এই সভায় ক্লাব সভাপতি জোরালো ভাষায়, হাইকমিশনের সাথে সাংবাদিকদের সম্পর্ক, আমন্ত্রণ জানানোর ইস্যু নিয়েও প্রশ্ন ও দাবী-দাওয়া তুলে ধরেন। তবে হাইকমিশনের আচরণে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির কোনো অভিপ্রায় নেই বলে নিশ্চিত করেন হাইকমিশনার। এক্ষেত্রে হাইকমিশনার ও মিনিস্টার প্রেস উভয়েই সকল মিডিয়া ও দল-মত নির্বিশেষে সাংবাদিকদের সাথে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
হাইকমিশনার আরো বলেন, তিনি সব সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানাতে চান। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ভিন্নমত পথের সাংবাদিক-সম্পাদকদের প্রশ্নের জবাব দেন। তবে হাইকমিশন সবসময় নানা বাস্তবতা আর জায়গার কারণেও সবাইকে আমন্ত্রণ জানাতে পারে না।
হাইকমিশনের সাথে ব্রিটেনে বাংলা মিডিয়া ও কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সকল সাংবাদিকের সাথে সমান আচরণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রেসক্লাব সভাপতি বলেন, হাইকমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ ও আমন্ত্রণের বেলায় কোনো কোনো সাংবাদিককে বাদ দেয়া হয়। এই বিভাজনের চর্চা অব্যাহত থাকলে প্রেসক্লাবের পক্ষে হাইকমিশনের সুন্দর সম্পর্ক রক্ষা করে কাজ করা দুঃসাধ্য হবে। তবে হাইকমিশনের আচরণে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির কোনো অভিপ্রায় নেই বলে নিশ্চিত করেন হাইকমিশনার। এক্ষেত্রে হাইকমিশনার ও প্রেস মিনিস্টার উভয়েই সকল মিডিয়া ও দল-মত নির্বিশেষে সাংবাদিকদের সাথে একযোগে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় ট্রেড-ট্যুরিজম থেকে শুরু করে হাইকমিশনের সার্ভিস নিয়ে আলোচনা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিত্বদের রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানোর কথাও তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রবাসী বাঙালিদের অসামান্য অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হাইকমিশনের উদ্যোগী ভূমিকা পালনের ওপর জোর দিয়ে সভাপতি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মঋণ আছে এই প্রবাসীদের কাছ। কিন্তু প্রায় পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের ভাগ্যে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি জোটেনি। অথচ এরা বঙ্গবন্ধুকে ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করা থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধকালে এবং এর আগে পরে দেশের জন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এদেরকে রাষ্ট্র সম্মান জানালে জাতিই সম্মানিত হবে। জবাবে হাইকমিশনার একমত পোষণ করে লিখিতভাবে বিষয়টি দাখিলের আহবান জানিয়ে বলেন, হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সুপারিশটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিবেচনার জন্য পাঠানো হবে।
সভায় হাইকমিশনার জানান, গত প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে সেবার পরিধি বাড়লেও হাইকমিশনের জায়গা বৃদ্ধি পায়নি। সম্প্রতি পার্শ¦বর্তী ভবনের একটি ফ্লাট কেনা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এর ফলে আমাদের কার্যালয়ের পরিসর বাড়বে। আর সেবা প্রদানে নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও সকলের প্রতি সুন্দর আচরণের ঘাটতি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন হাইকমিশনার।
এছাড়া এখানকার নানা কমিউনিটি ইস্যুতে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের সাথে মিলে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে হাইকমিশনার জানান, বাংলাদেশ ভবনের বিক্রির অর্থ এখনো ব্যাংকে পড়ে আছে। এই অর্থ দিয়ে লন্ডনে নতুন ভবন কেনার কথা বিবেচনায় রয়েছে দূতাবাসের। এই সেন্টারটি হবে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষা ও বিকাশের কেন্দ্র।
সভায় ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরীসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দও আলোচনায় অংশ নেন। প্রশ্ন ও মন্তব্যে অংশগ্রহকারীরা হলেন, এসিসটেন্ট সেক্রেটারি মতিউর রহমান চৌধুরী, কমিউনিক্যাশন্স সেক্রেটারি আবদুল কাইয়ুম, ট্রেনিং সেক্রেটারি ইব্রাহিম খলিল, আইটি সেক্রেটারি সালেহ আহমদ, ইভেন্ট সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা, নির্বাহী সদস্য যথাক্রমে আবদুল কাইয়ুম,পলি রহমান, শাহনাজ সুলতানা ও ইমরান আহমদ। বুধবারের প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠান শেষে হাইকমিশনার নির্বাহী সদস্যদের নিয়ে ব্রিকলেনের বিখ্যাত টি একচেইঞ্জে চা চক্রে মিলিত হন।