সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ বাংলাদেশি নিহত
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৪ জুলাই ২০১৮, ২০:৫০
সৌদি আরবের জেদ্দায় সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। বুধবার স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৫টায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। আহতদের স্থানীয় চারটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, ঘটনার সময় ১৬ জন বাংলাদেশি শ্রমিক একটি মিনিবাসে চড়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জেদ্দার মোহাম্মদীয়া নামক স্থানে মিনিবাসটি দুর্ঘটনায় পড়ে। এ সময় ঘটনাস্থলেই ৫ জন নিহত হন। গুরুতর আহত হন ১১ জন। আহতদের কিং আবুদল আজিজ, কিং ফাহাদ, কিং আব্দুল্লাহ ও সৌদি-জার্মান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জেদ্দা কনস্যুলেট সূত্রে জানা গেছে। কনস্যুলেটের কাউন্সিলর (শ্রম) আমিনুল ইসলাম ঢাকার একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালকে বলেছেন, ‘এসব হাসপাতালে আমাদের লোক রয়েছেন। হতাহতদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।’
নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচায় পাওয়া গেছে। তার নাম মো. মনিরুল ইসলাম। তিনি নড়াইল জেলার সদর উপজেলার মহিসওলা গ্রামের মো. মোহসিন হোসাইনের ছেলে। আহতদের মধ্যে চার জনের জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, মো. ইসরাফিল শেখ, সুজন আহমেদ, মো. ইলাহী ও মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। মো. ইসরাফিল শেখ নড়াইল জেলার সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের ইসারত শেখের ছেলে, সুজন আহমেদ সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জের বাগলা গ্রামের শামসুদ্দীনের ছেলে। মো. ইলাহী মাগুরা জেলার সদর উপজেলার শেখ দুদু মিয়ার ছেলে এবং মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া হবিগঞ্জের বাহুবল থানার ফোনারফদা গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে।
আরো পড়ুন : ঢাকায় বাসের চাকায় পৃষ্ট হয়ে পাঠাও যাত্রীর করুণ মৃত্যু
প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে দক্ষিণখানের বাসা থেকে মহাখালী অফিসে যাওয়ার জন্য পাঠাও রাইড কল করেন নাজমুল হাসান ফুয়াদ (৩২)। ফুয়াদকে নিয়ে পাঠাও রাইডটি বিমানবন্দর গোল চত্ত্বরে পৌঁছায়। এ সময় বিআরটিসি’র একটি দ্বিতল বাস পেছন থেকে ফুয়াদকে আরোহী পাঠাও রাইডটিকে ধাক্কা দেয়। এতে পাঠাও থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন ফুয়াদ। কিন্তু ঘাতক চালক বাসটি না থামিয়ে ফুয়াদের মাথার উপর দিয়েই চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ফুয়াদ। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফুয়াদ স্ত্রী শামসুন্নাহারকে নিয়ে দক্ষিণখান মোল্লারটেক এলাকার শহর ‘ই’ মদিনার ১৩৭ নম্বর বাসায় থাকতেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হাজীগঞ্জ উপজেলার সুনাইমুড়ি গ্রামে। বাবার নাম আবুল বাশার। ফুয়াদ মহাখালীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘এএনডি টেলিকম’ এর সিনিয়র একাউন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুয়াদকে নিয়ে আরোহী পাঠাওটি বিমানবন্দর গোল চত্ত্বর অতিক্রম করছিলো। এ সময় বিআরটিসি’র দ্বিতল বাসটি (ঢাকা মেট্রো ব-১১-৬২৫৯) পেছন থেকে পাঠাওকে ধাক্কা দেয়। এতে ফুয়াদ রাস্তায় ছিটকে পড়ে যান। তখন বাসটির চাকা ফুয়াদের মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে চাকায় ফুয়াদের মাথা পৃষ্ট হয়ে মগজ বেরিয়ে যায়। তার নিথর দেহটি কংক্রিটের উপর ছটপট করতে থাকে। দেখা যায়, ঘটনাস্থলটি মগজ আর রক্তে লালচে হয়ে আছে।
নিহত ফুয়াদের মামা জাফরুল্লাহ সুজন জানান, ফুয়াদ অফিসের যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। পরে পুলিশ ফুয়াদের লাশ থানায় নেয়। সেখানে সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
বিমানবন্দর থানার এসআই শরীফ হোসেন জানান, দুর্ঘটনায় পাঠাও চালক মিরাজুল ইসলামও কিছুটা আহত হয়েছেন। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাসায় চলে গেছেন। ঘাতক বিআরটিসি বাসের চালক আজিজুল হক সোহাগকে বাসসহ আটক করা হয়েছে।
বিমানবন্দর থানার ওসি নূর-ই-আজম মিয়া বলেন, এ ঘটনায় নিহতের মামা বাদী হয়ে মামলা করবেন। মামলায় চালক আজিজুলকে গ্রেফতার দেখিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার কোর্টে প্রেরণ করা হবে।