লক্ষ্মীবাজারের বাহারি স্ট্রিট ফুড
- মোঃ সাদমান হাফিজ
- ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:২৬
পরিবার-পরিজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে নানা পদের খাবারের স্বাদ নিতে নিতে আড্ডা দিতে কার না ভালো লাগে! সন্ধ্যার পর থেকে রাজধানীর নানা জায়গায় বেশ জমজমাট পরিবেশ তৈরি হয় স্ট্রিট ফুড কোর্টগুলো। এমনই এক পরিবেশের দেখা মেলে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের রাস্তার দু’পাশ ধরে। ছোট ছোট দোকান আর বসার ছোট টুল বা চেয়ার নিয়ে বেশ আলোকজ্জ্বল এই স্ট্রিট ফুডের পসরাগুলো।
একসময় স্ট্রিট ফুড বলতে ছিল হাতে গোণা কিছু খাবার।সিঙ্গারা-পুরি, ঝালমুড়ি, ফুচকা, আইসক্রিম এসব ছিল এক সময়ের স্ট্রিট ফুডের ধরণ। তবে এখন এতে অনেক নতুন ধরণ যোগ হয়েছে। কী নেই এখন স্ট্রিট ফুডের মধ্যে! পিজ্জা-বার্গার থেকে শুরু করে কাবাব, চা-কফি,পাস্তা, নুডুলস সবই পাওয়া যায় এই ফুড কোর্টগুলোতে।
লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিটফুডের মধ্যে বর্তমান সময়ের কিছু জনপ্রিয় খাবার নিচে তুলে ধরা হলো-
দোসা
দক্ষিণ ভারতীয় এ খাবারটি লক্ষ্মীবাজারের ফুড কোর্টগুলোতে বেশ জনপ্রিয়। এখানে কয়েকটি ফুড কোর্টে নানা ধরণের দোসা পাওয়া যায়। ধরণ অনুযায়ী দোসার দাম ৮০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
‘দোসা এক্সপ্রেস’ নামের ফুড কোর্টের বিক্রেতা সজীব হোসেনকে দোসা বানানো কোথা থেকে শিখলেন, বিক্রয় কেমন এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি টাকা দিয়ে এক চাচার কাছ থেকে শিখছি। তিনি ভারত থেকে শিখে এসেছিলেন।আমরা এখানে যারা বিক্রি করছি সবাই শিখেই আসছি। দোসা বানানো তেমন কঠিন কিছু নয়।’
বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দোসা ছোট-বড় সবাই পছন্দ করে। একটু ঠান্ডা পড়লে বেশি বিক্রি হয়। অনেক ধরণের দোসা পাওয়া গেলেও মাসালা দোসাই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়।’
ওয়াফেল
লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুডগুলোর মধ্যে বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়াফেল।এখানে ভ্যানিলা, চকলেটসহ নানা ধরণের ফ্লেভারযুক্ত ওয়াফেল পাওয়া যায়। ধরণ অনুযায়ী ওয়াফেলের দাম ১১০ থেকে ১৫০ টাকা হয়ে থাকে।
‘ড. ওয়াফেল’ নামের ফুড কোর্টের কিশোর বিক্রেতা শামীম জানান, তিনি আগে ওয়ারীতে ওয়াফেলের দোকানে কাজ করতেন। সেখান থেকেই তিনি ওয়াফেল বানানো শিখেছে। পরে তিনি লক্ষ্মীবাজারে এ দোকান দিয়েছেন।এখানে তিনি ও তার ভাই একত্রে কাজ করেন।
বিক্রি প্রসঙ্গে শামীম বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় ভাই-আপুরা এগুলো বেশি পছন্দ করে। মধ্যবয়সী কেউ তেমন একটা এখানে আসে না। এখানে অন্য কোনো ওয়াফেলের দোকান না থাকায় বিক্রি ভালোই হয়।’
রোলার আইসক্রিম
লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুডগুলোর মধ্যে রোলার আইসক্রিম ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।রোলার আইসক্রিমের দুটি ফুড কোর্ট রয়েছে। এখানে বিভিন্ন ফলের ও চকলেটের নানা ধরণের আইসক্রিম পাওয়া যায়। ধরণভেদে এসব আইসক্রিমের দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
‘রোলার আইসক্রিম’ নামের ফুড কোর্টের বিক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, তিনি কয়েক মাস ধরে এখানে বিক্রি শুরু করেছেন। তার পাশাপাশি আরেকটি দোকান রয়েছে। রোলার আইসক্রিমের ভালো চাহিদা রয়েছে। ভিন্ন ধরনের আইসক্রিমের স্বাদ নিতে তার দোকানে ভিড় করে নানা বয়সী লোকজন।
পিজ্জা
লক্ষ্মীবাজারে একটি ফুডকোর্ট রয়েছে যেখানে পিজ্জা পাওয়া যায়।এখানে চোখের সামনে নিমিষেই কাঠের আগুনে তৈরি হয় নানা ধরনের পিজ্জা।‘বর্ন ফায়ার পিজ্জা' নামের দোকানটিতে পিজ্জার স্বাদ নিতে নানা বয়সের মানুষ আসেন এখানে। বিভিন্ন ফ্লেভার ওআকার অনুযায়ী নানা ধরণের পিজ্জা রয়েছে যা ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়।
এখানে পিজ্জা খেতে আসা সাদেক হোসেন জানান, ‘আমি এখানে প্রায়ইস্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসি।রেস্টুরেন্টের চেয়ে এখানে অনেক অল্প টাকায় পিজ্জা পাওয়া যায়। মানের দিক থেকেও আমার তুলনামূলক একই মনে হয়। তাই ছুটির দিনে প্রায়ই আমার এখানে আসা হয়।‘
মটকা চা
লক্ষ্মীবাজার পরিচিত স্ট্রিট ফুডের অন্যতম মটকা চায়ের জন্য। এখানে মটকাচায়ের বেশ কয়েকটি দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে মাটির কাপে পুড়িয়ে চা বানানো হয়।এটি দেখতে ও ভিন্ন স্বাদের জন্য বেশ পরিচিতি পেয়েছে।শহরের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে এই চায়ের স্বাদ নিতে আসে।৩০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০ টাকা পর্যন্ত নানা ধরণের মটকাচা এখানে পাওয়া যায়।
পাশেই কবি নজরুল কলেজের একদল শিক্ষার্থী এখানে এসেছেন মটকা চা খেতে। তাদের মধ্যে রিয়া মনি জানান, ‘আমার এখানকার চা অনেক পছন্দের। আমরা বন্ধু-বান্ধবরা মিলে প্রায়ই এখানে চা খেতে আসি। আমার এখানে আইসক্রিম দিয়ে বানানো মটকা চা খুবই ভালো লাগে। আমি এখানে এলে অবশ্যই এটি ট্রাই করি।‘
মোমো
লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুডের যতগুলো দোকান রয়েছে তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক দোকানেই মোমো বিক্রি করা হয়। এখানে নানা ধরনের মোমো পাওয়া যায়। বেশিরভাগ দোকানেই ১০০ টাকায় ৭/৮টি মোমো পাওয়া যায়।
‘ফারিহা ফুডকর্নার’ নামের দোকানটির বিক্রেতা রাকিব হাসানমোমো তৈরি করা শেখা ও বিক্রয় সম্পর্কে জানান,‘আমি ইউটিউব দেখে দেখেই মোমো বানানো শিখছি।ইউটিউবে সার্চ দিলেই মোমোবানানোর অনেক ভিডিও পাওয়া যায়।এগুলো দেখে আস্তে আস্তে মোমো বানানো শিখছি। মোমো মূলত মেয়েরাই বেশি পছন্দ করে। এখানে নানা ধরণের মোমো পাওয়া যায়। তবে চিকেন মোমোই বেশি বিক্রয় হয়। আমি ১০০ টাকায় আটটি মোমো বিক্রি করি।‘
এছাড়াও লক্ষ্মীবাজারের স্ট্রিট ফুডগুলো ঘুরে দেখা যায় যে এখানে নানা ধরনের জুস, কফি, জিলাপি,শিক কাবাব, রেশমি কাবাব, ঝাল মুড়ি, ফুচকা, নুডুলস, পাস্তা, হালিম, জিলাপি, চিতই পিঠা, ভাপা পিঠা, পটেটো ফ্রাই, বার্গার, নানা পদের আচার, সিঙ্গারা-সমুচা এরকম পুরনো কিংবা আধুনিক সব ধরনের খাবারেরই দেখা মেলে।তবে স্ট্রিট ফুডের গতানুগতিক ধারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। চাহিদা অনুযায়ী এখন বার্গার, পাস্তা, নুডুলসের আধিক্য বেড়েছে।
এখানে যারা স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা করছে তাদের বেশির ভাগই তরুণ। রেস্টুরেন্টের বাইরেও এখানকার ফুড কোর্টগুলোর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। খাবারের মানের দিক থেকেও সমপর্যায়ে বলা যায়। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এ ব্যবসায় আসার ফলে স্ট্রিট ফুডের ধারণাই পরিবর্তন হয়ে গেছে।