২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিভিন্ন দেশে ঈদের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার

বিভিন্ন দেশে ঈদের ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় খাবার। -

ঈদ মানে আনন্দ, উৎসব, প্রিয়জনকে পাশে নিয়ে সময় কাটানো। নতুন পোশাক ও ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি ঈদে অন্যতম আকর্ষণই থাকে মিষ্টি, ঝাল স্বাদের মুখরোচক বিভিন্ন খাবার। তবে দেশ ভেদে ঈদের ঐতিহ্যবাহী খাবারে ভিন্নতা রয়েছে। আর এ খাবারগুলো ওই দেশের ঈদ আয়োজনে যোগ করে ভিন্ন মাত্রা।

তুরস্কে ‘লোকুম’

বিভিন্ন রঙের মিষ্টির টুকরো এই ‘লোকুম’ মূলত টার্কিশ ডিলাইট। বরফি আকৃতির বিশেষ এই মিষ্টি তুরস্কের সব ঘরেই ঈদের দিন তৈরি করা হয়। চিনি, স্টার্চ আর খেজুর, বাদামের মতো উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় এই ডেজার্টটি। এই মিষ্টি তৈরিতে নানারকম রঙও ব্যবহার করা হয়। শুধু ঈদ নয়, তুরস্কের যেকোনোও উৎসব আয়োজনে এই মিষ্টি থাকে সবার ঘরে ঘরে।

মরোক্কোর ‘তাজিন’

মরোক্কোতে ঈদের বিশেষ খাবারের নাম হলো ‘তাজিন’। ঐতিহ্যগতভাবে এটি রান্নাতে ব্যবহার করা হয় মাটির পাত্র, যেটার নাম তাজিন। আর ওই মাটির পাত্রের নামানুসারে রান্নার নামকরণও হয়েছে তাজিন। সাধারণত ভেড়া ও গরুর গোশত দিয়ে তৈরি করা এ খাবারটি। তবে গোশতের সাথে নানারকম সবজি ও মশলার মিশ্রণও থাকে এতে। খাবারটি ধীরে ধীরে রান্না করা হয়। মরক্কোর বিশেষ এ খাবারটি পুরো আফ্রিকাতেই জনপ্রিয়। বিশেষ করে আলজেরিয়াতে এটি বেশ জনপ্রিয়।

আফগানিস্তানের ‘বোলানি’

আফগানিস্তানে ঈদের দিন সকালে বিশেষভাবে যে খাবারটি রান্না করা হয়, সেটা হলো বোলানি। পাতলা রুটির ভেতরে সবজি, আলু, ডাল বা কুমড়ার পুর দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয় এই খাবারটি। পরিবেশন করা হয় টক দইয়ের সাথে। ঈদ ছাড়াও আফগানিস্তানের মুসলিমদের কাছে এই খাবারটি ভীষণ জনপ্রিয়।

বসনিয়ার ‘তুফাহিজা’

বসনিয়ার এতিহ্যবাহী এক খাবার হলো তুফাহিজা। এই বিশেষ রেসিপিটি ঈদসহ বিশেষ দিনে বসনিয়ানরা তৈরি করে থাকে। আপেল সেদ্ধ করে তৈরি করা হয় এটি। সেদ্ধ আপেলের মধ্যে আখরোট বাদামে ভরাট করা হয় এবং হুইপড ক্রিম দিয়ে ওপরে সাজানো হয়।

মধ্যপ্রাচ্যে ল্যাম্ব রোস্ট ও মাখন দিয়ে তৈরি কুকি বা বিস্কুট

ঈদ আয়োজনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গোশত জাতীয় খাবার বিশেষ করে ’ল্যাম্ব রোস্ট’ ভীষণ জনপ্রিয়। এছাড়া পুরো রমজান মাস জুড়ে ও ঈদের দিন মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে বিশেষ এক ধরনের কুকি বা বিস্কুট খুবই জনপ্রিয়। মাখন দিয়ে তৈরি বিশেষ এই কুকি বা বিস্কুটের মধ্যে খেজুরের পেস্ট বা আখরোট বা পেস্তা বাদামের পুর দিয়ে ওপরে বাদাম ও হাল্কা চিনির গুঁড়া ছড়িয়ে দেয়া হয়।

বিভিন্ন দেশে অবশ্য এর ভিন্ন ভিন্ন নাম। যেমন সিরিয়া, লেবাননে এর নাম মামুল, ইরাকে বলা হয় ক্লাইচা এবং মিশরে এর নাম কাহাক।

লেবাননে ঈদ উদযাপন মামুল ছাড়া অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হয়। বাটার, খেজুর ও বাদাম দিয়ে তৈরি করা হয় ছোট ছোট কুকিজ। লেবাননের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ঈদে মামুল পরিবেশন করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ‘সেমাই’

বাংলাদেশসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে ঈদের দিনে সেমাই পরিবেশন করা। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় হাতে বানানো চালের সেমাইও পরিবেশন করে। শুধু ঘি, চিনি দিয়ে সেমাই রান্না করা যায়। আবার ঘন দুধ ও চিনি দিয়েও অনেকে রান্না করে থাকে।

পাকিস্তান ও ভারতে ‘শীর খুরমা’

ঘন দুধ দিয়ে রান্না করা সেমাই পাকিস্তান ও ভারতের মুসলিমদের কাছে পরিচিত ‘শীর খুরমা’ নামে। বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্নভাবে এই মিষ্টান্ন তৈরি করে মুসলিমরা। প্রচুর বাদাম ও খেজুর দিয়ে অনেকে তৈরি করে এটি। পিস্তাচিও, আখরোট, আমন্ডস, কিশিমিশসহ নানারকম বাদাম ব্যবহার করে অনেকে। আর সাথে ঘন দুধ ও চিনিতো আছেই।

মিয়ানমারে ‘শাই মাই’

মিয়ানমারের মানুষেরা ঈদের দিন তাদের ঐতিহ্যবাহী এক খাবার ‘শাই মাই’ তৈরি করে। বাংলাদেশের সেমাইয়ের মতোই রান্না, তবে তা ভিন্ন উপায়ে। নারকেল, কিসমিস ও কাজু বাদাম ভাজা দিয়ে তারা ‘শাই মাই’ পরিবেশন করে থাকে।

রাশিয়ায় ‘মানতি’

রাশিয়ার জনসংখ্যার কমপক্ষে ১৫ ভাগ মুসলিম। ঈদের দিনে তাদের অনেকের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার ‘মানতি’। এটি এক ধরনের ডাম্পলিং বা পুলি পিঠা। মাখানো আটার ভেতর ভেড়া বা গরুর গোশতের কিমার পুর দিয়ে তা ভাপে দেয়া হয়। পরিবেশন করা হয় মাখন ও সাওয়ার ক্রিম দিয়ে।

রাশিয়ায় অঞ্চল ভেদে মানতির রেসিপি একেক রকম। কিন্তু যদি বলা হয় রাশিয়ায় ঈদের দিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার কী? উত্তর হবে- মানতি।

চীনে ‘সাঙজা’

চীনের বেশিরভাগ মুসলিমদের কাছে ঈদের দিনের প্রিয় খাবার হলো সেখানকার ঐতিহ্যবাহী ‘সাঙজা’। ময়দার লেই দিয়ে মোটা করে নুডলস বানিয়ে তা ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হয়। তারপর তা পিরামিডের মতো করে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়।

চীনের মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশের উইগুর মুসলিমদের খুবই জনপ্রিয় খাবার এটি। ঈদের আগে তাদের দোকানে ঢুকলে মুচমুচে সাঙজার দেখা মিলবেই।

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ‘কেটুপাত’

ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় ঈদ আয়োজনে রাখা হয় নানা ধরনের মুখরোচক মিষ্টি। এর পাশাপাশি থাকে ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘কেটুপাত’। পাম গাছের পাতায় মোড়া এক ধরনের চালের আটার পিঠার মতো এটি।

গোশতের বিভিন্ন আইটেমের সাথে কেটুপাত পরিবেশন করা হয়।

ব্রিটেন জুড়ে ‘বিরিয়ানি’

ব্রিটেনের মুসলিমদের কাছে ঈদের দিনে জনপ্রিয় একটি খাবার হলো বিরিয়ানি। চাল, গোশত ও সবজি দিয়ে তৈরি এই মুখরোচক খাবারটির সাথে থাকে দই ও পুদিনার চাটনি। খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রিটেনে বিরিয়ানির জনপ্রিয়তার অন্যতম একটি কারণ হলো এখানকার জনসংখ্যার পাঁচ ভাগ দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত।

সোমালিয়ায় জনপ্রিয় ‘ক্যাম্বাবুর’

পাতলা রুটি বা প্যানকেকের মতো দেখতে খাবারটি সোমালিয়ায় খুবই জনপ্রিয়। গোশত বা সবজির সাথে গরম গরম পরিবেশন করা হয় ঐতিহ্যবাহী এই প্যানকেক। চিনি ও দই দিয়ে আলাদাভাবেও খাওয়া হয় এটি।

ইথিওপিয়ায় এটির নাম ইনজেরা এবং সেখানেও ঈদ উৎসবসহ অন্যসব আয়োজনে খুব জনপ্রিয় এ খাবারটি। ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি ইরিত্রিয়া, ইয়েমেন ও সুদানেও বেশ জনপ্রিয়।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement