২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিরিয়ানি নিয়ে দুই রাজ্যের যুদ্ধ

খাদ্য
বিরিয়ানি নিয়ে লড়াই বেঁধেছে দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্যে। - ছবি: বিবিসি

রসগোল্লার আবিষ্কার কোথায়- তা নিয়ে এর আগে তুমুল হৈচৈ আর আইনি লড়াই হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আর ওড়িশার মধ্যে। রসগোল্লার পরে এবার বিরিয়ানি নিয়ে লড়াই বেঁধেছে দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্যে।

ভারতের হায়দ্রাবাদ শহরের বিরিয়ানি পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছে আগেই।

একসময়ে অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী ছিল হায়দ্রাবাদ শহর। কিন্তু পুরনো অন্ধ্র ভেঙ্গে এখন তৈরি হয়েছে নতুন রাজ্য তেলেঙ্গানা। আর রাজধানী হায়দ্রাবাদ পড়েছে তেলেঙ্গানার ভাগ্যে।

অন্ধ্র প্রদেশ সরকারের সব দপ্তরই এখন চলে গেছে বিজয়ওয়াডার কাছে, তাদের নতুন তৈরি হওয়া রাজধানী শহর অমরাবতীতে।

আর পুরনো রাজধানী শহরের সঙ্গে সঙ্গেই তারা হারাতে বসেছে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির ব্র্যান্ড ভ্যালুও।

তাই অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্য চেষ্টা করছে নিজস্ব বিরিয়ানি ব্র্যান্ড তৈরি করতে। খুঁজেও পেয়েছে তারা নিজস্ব এক রেসিপির বিরিয়ানি। এর নাম 'বঙ্গু বিরিয়ানি'।

বিশাখাপতনমের কাছে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র আরাকু উপত্যকার আদিবাসীদের রন্ধনপ্রণালী থেকে এসেছে এই বঙ্গু বিরিয়ানি। এই নামের রহস্য হল বঙ্গু বা বাঁশের খোলে দমে রান্না করা হয় এই বিরিয়ানি।

অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চন্দ্রবাবু নাইডু, তিনি নতুন অন্ধ্র প্রদেশেরও মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি পর্যটন দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে বঙ্গু বিরিয়ানিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সবরকম প্রচেষ্টা চালাতে হবে, তৈরি করতে হবে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির পাল্টা ব্র্যান্ড।

এই নিয়েই বেঁধেছে বিরিয়ানির লড়াই।

‘এটা ছেলেমানুষি হচ্ছে। একে আঞ্চলিকতাবাদ ছাড়া আর কি বলব? অন্ধ্রের নিজস্ব কি অসাধারণ সব আমিষ খাবার রয়েছে, যেমন গোঙ্গুরা মাংসাম। শত শত বছরের পুরনো চিরাচরিত সেই খাবার ছেড়ে বিরিয়ানি নিয়ে পড়েছে ওরা। আর বিরিয়ানিটা তো অন্ধ্রের নিজস্ব রেসিপিও নয়। সেটা তো নিজামদের হাত ধরে গেছে হায়দ্রাবাদে।’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন ভারতের প্রখ্যাত খাদ্য সমালোচক-ঐতিহাসিক ও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক পুষ্পেশ পন্থ।

তার মতে, ‘অন্ধ্রের নিজস্ব খাবারে তো চাল, মরিচ আর সামুদ্রিক মাছের চলন বেশি। আবার পুথারেকু বা পেপার সু্‌ইটের মতো মিষ্টি রয়েছে, যেটা তৈরি করা সত্যিই একটা শিল্পকর্ম। সেইসব রেসিপিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করতে পারত ওরা। সেটা না করে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির পাল্টা একটা বিরিয়ানির ব্র্যান্ড তৈরি করার কোনও যুক্তি দেখছি না আমি।’

ভোজন রসিকদের খাদ্য তালিকায় বিরিয়ানি খুবই পছন্দের একটি খাবার


তবে বঙ্গু বিরিয়ানিকে যেভাবে জনপ্রিয় করে তোলার চেষ্টা হচ্ছে, তাতে সমর্থনও রয়েছে অনেকের।

যেমন হায়দ্রাবাদের সেলেব্রিটি শেফ মি. ইয়াদাগিরি। তিনি বঙ্গু বিরিয়ানির চিরাচরিত রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে যোগ করেছেন নিজের কিছু কৌশল।

মি. ইয়াদাগিরি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি পুরো পৃথিবীতে জনপ্রিয় ঠিকই, কিন্তু বঙ্গু বিরিয়ানি বা কিছুটা একই পদ্ধতিতে তৈরি কাবাবের মতো বঙ্গু চিকেনও খুবই সুস্বাদু। এগুলো এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। কিন্তু খাদ্য রসিকদের খুশি করার মতো বা সাধারণ মানুষের জিভে জল আনবেই এগুলো। তবে হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির সঙ্গে পাল্লা দিতে এখনও সময় লাগবে বঙ্গু বিরিয়ানি বা বঙ্গু চিকেনের।’

'বঙ্গু বিরিয়ানি' কি?

বেশ মোটাসোটা বাঁশের খোলে রান্না হয় এই বিরিয়ানি, যা হায়দ্রাবাদী, লক্ষ্ণৌ পোলাও (যা লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানি নামে পরিচিত), কলকাতা বিরিয়ানি বা কেরালার বিরিয়ানি রান্নার থেকে একেবারে আলাদা পদ্ধতি।

‘হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি বা লক্ষ্ণৌ বিরিয়ানি অথবা কলকাতা বিরিয়ানি যেমন হান্ডিতে দম দিয়ে তৈরি হয়, বঙ্গু বিরিয়ানিতে দম দেওয়া হয় বাঁশের খোলের ভেতরেই,’ বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন শেফ মি. ইয়াদাগিরি।

‘ভেজানো কাঁচা চালের সঙ্গে পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম, ধনেপাতা, পুদিনা পাতা, তেজপাতা, ঘি সব একসঙ্গে পুরে দিতে হবে বাঁশের খোলের ভেতরে। তার মধ্যেই হাড় ছাড়া মুরগীর টুকরো দিতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে পরিমাণ মতো জল। তারপরে বাঁশের খোলের মুখ বন্ধ করে কাঠকয়লার আঁচে দিতে হবে। আধঘণ্টা থেকে ৩৫ মিনিট মতো ভাপে সেদ্ধ হবে বাঁশের খোলের ভেতরে থাকা চাল, মাংস আর সবজি,’ বলছিলেন মি. ইয়াদাগিরি।

বঙ্গু চিকেন তৈরি করতে হলে মুরগির মাংসে কাবাবে যেসব মশলা দেওয়া হয়, সেগুলো মাখিয়ে একই পদ্ধতিতে বাঁশের খোলের ভেতরে পুড়ে দিতে হবে।

তারপরে কয়লার আঁচে বাঁশের খোলটা দিয়ে দিলেই হবে। আধঘণ্টা পরে একবার পরখ করে নিতে হবে যে মুরগী ঠিকমতো রান্না হয়েছে কি না।

পুষ্পেশ পন্থ অবশ্য বলছেন, ‘এমনিতেই বিরিয়ানি নিয়ে একটু বেশিই হৈচৈ হয়, হাইপ তোলা হয়। এখন দেখছি রসগোল্লার লড়াইয়ের পরে বিরিয়ানি নিয়েও দুই রাজ্যে লড়াই বাধল।’  সূত্র বিবিসি বাংলা

আরো পড়ুন:

রসগোল্লা নিয়ে লড়াই!
নয়া দিগন্ত অনলাইন, ০৯ মার্চ ২০১৬
ভারতের রসগোল্লার আবিষ্কারক কে, তা নিয়ে ওড়িশা আর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মধ্যে আইনি লড়াই শুরু হয়েছে।

ওড়িশার দাবি, শত শত বছর ধরে পুরির জগন্নাথ মন্দিরে দেবতার ভোগে রসগোল্লা ভোগ দেয়া হচ্ছে।

তবে কলকাতার দাবি, রসগোল্লা সেখানেই তৈরি হয়েছে।

ভারতের সবচেয়ে বড় মন্দিরগুলোর একটি, পুরির জগন্নাথ মন্দিরের সামনে হাজার হাজার ভক্ত ভিড় করে। সম্প্রতি এই মন্দিরটি ভিন্ন কারণে সবার আলোচনায় এসেছে।

কারণ রসগোল্লা নিয়ে ভারতের দুটি রাজ্যের মধ্যে যে বিবাদ শুরু হয়েছে।

ওড়িশা দাবি করছে, রসগোল্লা তারাই আবিষ্কার করেছে, কারণ শত শত বছর ধরে এই মন্দিরের দেবতাদের ভোগে রসগোল্লা দেয়া হচ্ছে।

মন্দিরের মুখপাত্র, সুধীর চ্যাটার্জি সে কথাই বলছেন। তিনি বলছেন, "প্রতিবছরের অন্তত একবার দেবতার উদ্দেশ্যে এই রসগোল্লা দেয়া হয়। যখন জগমোহনকে এখানে নিয়ে আসা হয় এবং যখন তাকে আবার ফিরিয়ে নেয়া হয়, সে সময় তার সামনে এই মিষ্টি দেয়া হয়।"

কিন্তু প্রতিবেশী রাজ্যের রাজধানী কলকাতার দাবি, রসগোল্লার আসল আবিষ্কারক তারাই। কারণ সেখানেও বহু বছর ধরে রসগোল্লা বিক্রি করা হচ্ছে, মানুষ এটি খেয়ে আসছে।

কলকাতার কে সি দাস পরিবারের দাবি, এটির আসল আবিষ্কারক আসলে তারাই।

উত্তর কলকাতার বাড়িতে বসে রসগোল্লার সেই গল্পই বলছেন দিমেন দাস। "আমরা মনে করি, রসগোল্লা মানেই ভারত। এটা ভারতের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির একটি অংশ, ভারতের জাতীয় মিষ্টিও বলা চলে। অনেক দিন আগে, এটা নবীন চন্দ্র দাস নামের আমার একজন পূর্বপুরুষ আবিষ্কার করেন। মানুষজন তার কাছে এমন মিষ্টি খেতে চাইত, যা তাদের তৃষ্ণাও মেটাবে। তিনবছর চেষ্টা করে তিনি রসগোল্লা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।"

ওড়িশার রসগোল্লা তাদের মতো নয়, স্বাদে গন্ধে বা সেগুলোর উপাদানও এক নয়।

তাই তাদের দাবির কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না দিমেন দাস।

তবে রসগোল্লার এই বিরোধে একটি বিষয় পরিস্কার- ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যেও প্রতিযোগিতা বাড়ছে।

অনেক স্বাধীন দেশের মতো, ভারতের অনেক রাজ্যই এখন অনেক জিনিসের অধিকার নিজেদের করে রাখতে চায়।

অর্থনীতি আর ব্যবসা বিশ্লেষক মুগ্ধ পাতারিয়া বলেন, "ভারত আসলে একটি মাত্র বাজার নয়, এখানে অনেক বাজার তৈরি হয়েছে। এটা এমন নয় যে, ভারতই শুধু বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে। ভারতের ভেতরেও প্রতিযোগিতা চলছে।"

ভারতীয় আইনের শ্লথগতির কারণে, রসগোল্লা আবিষ্কারের কৃত্বিত্ব কে পাবে, তা নিয়ে হয়তো দীর্ঘদিন ধরেই আইনি লড়াই চলবে।

তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, ভারতে বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতার কারণে দেশটির রাজ্যগুলোকে হয়তো আরো অনেক বিষয়েই পরস্পরের মুখোমুখি হতে হবে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
ডেঙ্গুতে আরো ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১২১৪ বক্তৃতায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত ও ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা আ’লীগের সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর কারাগারে কাঁঠালিয়ায় শাহজাহান ওমরের গ্রেফতারে বিএনপির আনন্দ মিছিল ইউক্রেন রাশিয়া ইউকে স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে সেনাকুঞ্জে হাস্যোজ্জ্বল খালেদা জিয়া ও ড. ইউনূসের কুশল বিনিময় পারমাণবিক বোমা বিষয়ে ইরানের অসহযোগিতার অভিযোগ পশ্চিমা বিশ্বের, আইএইএ’র ভিন্নমত ‘সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে ছাত্রদল’ ধামরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ শ্রমিক নিহতের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ আন্দোলনে সাধারণের পক্ষে দাঁড়িয়ে আস্থার প্রতীক হয়েছে সেনাবাহিনী : ড. ইউনূস

সকল