কাদের দখলে কোরবানির পশুহাট?
- আহমেদ ইফতেখার
- ২৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীতে যেসব অস্থায়ী পশুহাট বসবে এবারো সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। ২০টি পশুহাটের মধ্যে ১২টিরই ইজারা পেয়েছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও অনুসারীরা। বাকি আটটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনই বিশাল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে চলেছে।
এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ২০টি স্থানে পশুহাটের ইজারা দেয়ার দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৩টি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় সাতটি পশুহাট বসার কথা রয়েছে। নিয়মানুযায়ী ঈদের তিন দিন আগে শুরু হবে এসব হাট। চলবে ঈদের পর দিন পর্যন্ত। এ মুহূর্তে হাটগুলোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। কম টাকায় হাটের ইজারা নিতে প্রথম থেকেই সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। সিটি করপোরেশনের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীও যোগ দেন এ সিন্ডিকেটে। এভাবে ১২টি হাট স্বল্পমূল্যে পেয়েছেন এসব নেতাকর্মী। দরপত্র বাক্সগুলো খুলে ও পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কয়েকটি হাটের ক্ষেত্রে ন্যূনতমসংখ্যক দরপত্রও জমা পড়েনি। নিয়মানুযায়ী, যেকোনো হাট ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যূনতম তিনটি দরপত্র জমা পড়তে হবে। না হলে পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে হবে।
এ দিকে ডিএনসিসিতে যেসব হাটের ইজারা দেয়ার প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোর ইজারাদার হিসেবে যাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যুক্ত। তাদের কয়েকজন পদধারী নেতা। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর গোলচত্বর-সংলগ্ন খালি জায়গার হাটটি ইজারা পেয়েছেন উত্তরখানের ১৭০/৯ বেথুলীর বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম। তিনি উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। এ হাটটি গত বছর তিন কোটি ৭৫ লাখ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছিল। অথচ এবার তাকে এটি ইজারা দেয়া হয়েছে মাত্র দুই কোটি ২১ লাখ টাকায়। নিয়মানুযায়ী এটি গত বছরের চেয়ে অন্তত ১০ শতাংশ বেশি মূল্যে ইজারা দেয়ার কথা।
একই অবস্থা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অধীন হাটগুলোরও। উত্তর শাহজাহানপুরের খিলগাঁও রেলগেটসংলগ্ন মৈত্রী সঙ্ঘের মাঠ পেয়েছেন শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ। তিনি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের পরিচালক (ফাইন্যান্স) ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক।
হাজারীবাগ হাটের ইজারা পেয়েছেন জাহিদুল কবির। তিনি ২২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তরিকুল ইসলামের ভাই। রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ পেয়েছেন রহমতগঞ্জ মুসলিম সোসাইটির পক্ষে ডাল ব্যবসায়ী সমিতি ও বাংলাদেশ মনিহারী বণিক সমিতির সভাপতি হাজী শফি মাহমুদ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।
শ্যামপুর বালুর মাঠ পেয়েছেন শেখ মাসুক রহমান। তিনি কদমতলী থানা জাতীয় পার্টির সাধারণ ও জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলার ভাগ্নে।
অবাক করার বিষয় হলো প্রথম দফায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ১২টি হাটের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও এর মধ্যে সাতটি হাটের বিপরীতে কোনো দরপত্রই জমা পড়েনি। অথচ এগুলোর বিপরীতে ২৭টি দরপত্র বিক্রি হয়েছিল। সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেটটি সাধারণ ইজারাদারদের দরপত্র জমা দিতে দেয়নি। এমনকি তারা নিজেরাও জমা দেননি। কারণ কোনো দরপত্রই জমা না পড়লে ঈদের আগে খুবই কম মূল্যে সেগুলো ইজারা নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। এসব হাট হলো মেরাদিয়া বাজারসংলগ্ন খালি জায়গা, ব্রাদার্স ইউনিয়নের বালুর মাঠ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের আশপাশের খালি জায়গা, আরমানিটোলা খেলার মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্ট এন্ড ক্লাব মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা ও সাদেক হোসেন খোকা মাঠের আশপাশের খালি জায়গা।
ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, তারা কাউকে মুখ চিনে হাটের ইজারা দেবেন না। কাগজপত্র ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ দরদাতাই হাটের ইজারা পাবেন।