২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বিআরটি ও আইটিএস প্রকল্পের নির্মাণকাজ থেমে আছে

-


বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে বাসের জন্য পৃথক লেন (বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি) নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে। যদিও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো তথ্যই দিতে পারেননি প্রকল্প কর্মকর্তারা। টঙ্গীতে একটি সেতু ও গাজীপুরে একটি উড়াল সড়কের সামান্য অংশ ছাড়া সরেজমিন ঘুরে আর কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।
ঢাকার চারটি ইন্টারসেকশনে পরীক্ষামূলকভাবে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) স্থাপনের কাজ শুরু হয় গত বছরের ডিসেম্বরে। মহাখালীতে ওই সময় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হয়। গত ছয় মাসে মহাখালী ইন্টারসেকশনে দেড় ফুট উচ্চতার কয়েকটি দেয়াল ছাড়া আর কোনো কাজ এগোয়নি। বিআরটি বাস্তবায়ন হচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সুপারিশের আলোকে। অন্য দিকে আইটিএস প্রকল্পটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছে সংস্থাটি।
ঢাকার বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কটিতে হচ্ছে বাসের জন্য পৃথক লেন। বাস লেনের দৈর্ঘ্য ২০ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার। এ লেনে নির্বিঘেœ যান চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হবে ছয়টি উড়াল সড়ক। এর বাইরে বিদ্যমান টঙ্গী সেতুটি সংস্কার করে ১০ লেনে উন্নীত করা হবে। এ লেনে ৫০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চালানোর পরিকল্পনা করছে ডিটিসিএ। এ জন্য ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড গঠন করা হয়েছে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় দুই হাজার ৩৯ কোটি টাকা। যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ), সেতু বিভাগ (বিবিএ) ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের সাথে রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
বিআরটি নির্মাণে ধীরগতির জন্য বর্ষা ও রাস্তায় অতিরিক্ত ট্রাফিককে দুষছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। বর্তমান অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক সানাউল হক জানিয়েছেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২২ শতাংশ আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে। ঈদের কারণে রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেশি ছিল। ওই সময় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশনা ছিল। এমনিতেও রাস্তায় অতিরিক্ত ট্রাফিকে নির্মাণকাজ ব্যাহত হচ্ছে। অন্য দিকে চলমান বর্ষাও নির্মাণকাজ এগিয়ে নিতে বিপত্তি তৈরি করছে। এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় টঙ্গী সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে। ১০ লেনের এ সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি ১০ শতাংশ। অবাক করার বিষয় হলো গত জানুয়ারিতেও অগ্রগতি সম্পর্কে একই তথ্য দিয়েছিলেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। অর্থাৎ গত ছয় মাসে এখানে কোনো কাজই এগোয়নি। গত বছরের নভেম্বরে বিমানবন্দর এলাকায় একটি টেস্ট পাইলের কাজ চলছিল। সে কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, টেস্ট পাইল সম্পন্ন করতে লোড টেস্ট এখনো বাকি। তবে এ সময়ে গাজীপুর চৌরাস্তায় একটি উড়াল সড়কের ১৫৫টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে।
অন্য দিকে ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হচ্ছে ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম বা আইটিএস। বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ ও ডিটিসিএ সূত্রে জানা গেছে, এ ব্যবস্থায় ক্যামেরা (সিসিটিভি) বা রাস্তায় বসানো ভেহিক্যাল ডিটেক্টরের (গাড়ি শনাক্তকরণ যন্ত্র) মাধ্যমে গাড়ির সংখ্যা হিসাব করা হয়। নির্দিষ্ট সময়ে একটি লেন দিয়ে কতগুলো গাড়ি পার হলো, সে হিসাব রাখে এ যন্ত্র। এ অনুযায়ী যে লেনে চাপ বেশি থাকে, সেদিকের গাড়িগুলোর জন্য জ্বলে ওঠে সবুজ সিগন্যাল বাতি। কোনো গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করলে সেটিকে শনাক্ত করে। রাস্তায় থাকা পথচারীদেরও হিসাব করে আইটিএস। সে অনুযায়ী সঙ্কেত দেয় পথচারী পারাপারের। সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় একটি কন্ট্রোল রুম থেকে। প্রাথমিকভাবে এটি গুলশান-১, মহাখালী, পল্টন ও ফুলবাড়িয়ায় স্থাপন করার কথা। এ জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা।
গত ডিসেম্বরে ঢাকার মহাখালী ইন্টারসেকশনে শুরু হয় আইটিএস স্থাপনের কাজ। তবে কাজের অগ্রগতি বলতে দেড় ফুট উচ্চতার কয়েকটি দেয়াল। এর বাইরে আর কোনো কাজ হয়নি এ প্রকল্পের। কাজ না হলেও গত বছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দের প্রায় সবটাই (৩৫ কোটি) দেয়া হয়েছে।
আইটিএস প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আইটিএসের জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, সেগুলো জাইকা সরবরাহ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কোনো সরঞ্জাম সরবরাহ করেনি। এ কারণে প্রকল্পের কাজ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement