ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তা কম
- ফয়েজ হিমেল
- ০৩ জুলাই ২০১৮, ০০:০০
ঢাকার যানজটের প্রধান কারণ রাস্তার সঙ্কট। ঢাকায় যে পরিমাণ জমি রয়েছে তার জন্য ২৫ শতাংশ রাস্তা দরকার। সেখানে অলিগলিসহ আছে মাত্র ৭ শতাংশ। মেইন রোড আছে ৩ শতাংশ। এই ৩ ভাগের ৩০ শতাংশ দখল করে আছে দখলদাররা। যার মধ্যে একটি অংশ হচ্ছে হকার। রাজধানীর ৭০ শতাংশ ফুটপাথ প্রাইভেট গাড়ি দখল করে রেখেছে। ভাবতে অবাক লাগে রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তার পাশেই যেসব দোকান ও আবাসিক ভবন রয়েছে তাদের কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে রাস্তার অর্ধেকটা তারা দখল করে গাড়ি পার্কিং করে। দিনের পর দিন এ অবস্থা চললেও এগুলো দেখার কেউ নেই।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জাতীয় সংসদে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি আধুনিক নগরীতে মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রাস্তা বা সড়ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকায় আছে মাত্র সাত থেকে আট ভাগ। এর মানে হলো, প্রয়োজনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সড়ক আছে এই শহরে। ঢাকা শহরের মোট এলাকা ১৩৫৩ বর্গ কিলোমিটার আর ঢাকার বর্তমান রাস্তার আয়তন ২,২০০ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২১০ কিলোমিটার প্রধান সড়ক।
অন্য দিকে ট্রাফিক বিভাগের হিসাব মতে, সেই সড়কের কম করে হলেও ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং এবং নানা ধরনের দখলদারদের হাতে। এ ছাড়া ফুটপাথ হকারদের দখলে থাকায় প্রধান সড়কেই হেঁটে চলেন নগরবাসী। ফলে যানজটের সাথে আছে জনজট।
আরেকটি মজার হিসাবও আছে। ঢাকায় ১৫ শতাংশ যাত্রী দখল করে আছেন মোট সড়কের ৭০ শতাংশ। কিভাবে? স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান বা এসটিপির হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ঢাকায় কমবেশি ১৫ শতাংশ যাত্রী প্রাইভেট গাড়িতে যাতায়াত করেন। এই প্রাইভেট কারের দখলে থাকে ৭০ শতাংশেরও বেশি রাস্তা। বাকি ৮৫ শতাংশ যাত্রী অন্য কোনো ধরনের গণপরিবহন ব্যবহার করেন। অর্থাৎ তারা গণপরিবহন সড়কের মাত্র ৩০ শতাংশ এলাকা ব্যবহারের সুযোগ পান।
রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা বিআরটিএ-র হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় ৯ লাখ ১৩ হাজার ৬২২টি নিবন্ধিত মোটরযান রয়েছে। এর মধ্যে বাস ২৩ হাজার ১১৯টি এবং মিনিবাস ১০ হাজার সাতটি। অন্য দিকে প্রাইভেট কার রয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ৭২২টি। ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায় পৌনে দুই কোটি। তার মানে, জনসংখ্যার হিসেবে শতকরা এক ভাগেরও কম মানুষের প্রাইভেট কার রয়েছে। কিন্তু সড়ক চলে গেছে প্রাইভেট কারের দখলে।
ঢাকায় মতিঝিলে সাধারণ বীমা অফিসের উল্টো দিকে একটি বহুতল ভবনে ৩৭০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা আছে। এর পাশাপাশি ৩৭ তলা সিটি সেন্টারেও প্রায় ৫৫০টি গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া বসতবাড়ি এবং কিছু কিছু অফিসে নিজস্ব গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে ঢাকায়। এর বাইরে পুরো রাজধানীতে আর কোনো সুনির্দিষ্ট পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই অফিস এবং ব্যবসায় বাণিজ্য চলাকালে ৮০ শতাংশ গাড়ি রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং করা হয়। শুধু তাই নয়, সেগুলো থেকে নিয়মিত টোলও আদায় করা হয়।