জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে
- ০৫ জুন ২০১৮, ০০:০০
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শহরের হারিয়ে যাওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধার করে এর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ড্রেনের সংস্কার করতে হবে, অর্থাৎ রাজধানীকে ঘিরে খাল-ড্রেন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে হবে। শুধু পাম্প দিয়ে পানি সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না।
গত শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি উদ্যোগ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে নগর বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বি আইপি) সহসভাপতি অধ্যাপক ড. মো: আকতার মাহমুদ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, নগরীতে প্রতি বছর জুন থেকে সেপ্টেম্বরে গড়ে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। কিন্তু মাত্র ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। মূল প্রবন্ধে জলাবদ্ধতার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়, এগুলো হচ্ছে রাজউকের বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ও ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারা, ভূ-উপরিস্থ ড্রেন পরিষ্কার না থাকা, ড্রেনেজ চ্যানেল ডি-লিংক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সঠিক ব্যবস্থাপনা না করা, শক্ত নগর পরিসর ও রান-অফ ওয়াটার না থাকা এবং খাল ও পুকুর ভারাট হয়ে যাওয়া। এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রণীত মাস্টার প্ল্যানের পূর্ণ বাস্তবায়ন, লেক সংরক্ষণ ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বারিপাত ধারণ করা, সব বক্স কালভার্ট ভেঙে উন্মুক্ত করে দেয়া, সব খাল, স্টর্ম ড্রেন ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাকে আলাদাভাবে ব্যবস্থাপনা করা, সিএস বা আরএস ম্যাপ অনুযায়ী সব ধরনের দখল উচ্ছেদ করা, খালগুলো সংরক্ষণ করে সব ধরনের বর্জ্য অপসারণ করা এবং যেখানে খাল প্রশস্তকরণ সম্ভব নয়, সেখানে রিটেইনিং ওয়াল করে হাঁটার পথ তৈরি করা।
আলোচনায় অংশ নেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান মুন্সি, বি আইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ, রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার পরিচালক শহীদ উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক, স্থপতি ইকবাল হাবিব, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর ও ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হাসিবুর রহমান মানিক, কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব দুলাল কৃষ্ণা সাহা, বেসরকারি সংস্থা ডরপের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আমির খসরু প্রমুখ।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা আরো বাড়াতে হবে উল্লেখ করে নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প নেয়ার আগে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় না। অনেক সময় দেখা যায় যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, তাতে জলাবদ্ধতা আরো বাড়ে। এ ছাড়া বিগত বছরগুলোয় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের নামে ঢাকাকে বালতির মতো করে ফেলা হয়েছে। এখন বালতি থেকে পাম্পিং স্টেশনের মাধ্যমে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। সেচে সেচে জলাবদ্ধতা নিরসন করা যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তবভিত্তিক সমন্বিত পরিকল্পনা ও উদ্যোগ।
বি আইডব্লিউটিএর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমদ বলেন, ঢাকা থেকে পানি অপসারণের পথ পরিষ্কার রাখতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তবেই জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।
রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রাজধানীর রাস্তার লেভেল এক নয়, এ কারণে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যাগুলো কমিয়ে আসবে।
ঢাকা ওয়াসা পরিচালক শহীদ উদ্দিন বলেন, ২০১১ সাল থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে একহাতে নেয়ার জন্য বলে আসছি। একাধিক সেবা সংস্থার হাতে দায়িত্ব থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। আর বৃষ্টির পর পানি নিষ্কাশনের যে লাইন আছে, সেই লাইন দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে যে সময় লাগে শুধু সেই সময়ই জলাবদ্ধতা থাকে। এটি দীর্ঘক্ষণ নয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাছের খান বলেন, উন্নয়নকাজে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। অন্যথায় জলাবদ্ধতা কমবে না।