ভোটারমুক্ত নির্বাচন ও জ্বালাযুক্ত ফলাফল
- মীযানুল করীম
- ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২২:০৪, আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২২:৪৩
অনেক কলেজের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে- এই প্রতিষ্ঠান ‘রাজনীতিমুক্ত’। কোনো কোনো কলেজ আরো এগিয়ে ঘোষণা দেয় যে, তারা ‘ধূমপানমুক্ত’ও। বাংলাদেশে এমনকি, শিক্ষার্থীমুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও আছে। সব সম্ভবের অদ্ভুত এ দেশে এখন চলছে ‘ভোটারমুক্ত’ ভোটাভুটি বা নির্বাচন। কাঁঠালের আমসত্ত্ব কিংবা সোনার পাথরবাটি নিছক কথার কথা। তবে ভোটারবিহীন নির্বাচন বাংলাদেশে জলজ্যান্ত বাস্তব।
দেড় শ’ বছর আগে মাইকেল মধুসূদন দত্ত লিখেছিলেন, ‘অলীক কুনাট্যরঙ্গে/মজে লোকে রাঢ়ে বঙ্গে;/নিরখিয়া প্রাণে নাহি সয়।’ আজকের স্বাধীন বঙ্গদেশে রাজনীতির নির্বাচনী কিংবা আর কোনো রঙ্গমঞ্চে যতই অলীক অমূলক কুনাট্য কিংবা অপনাট্য মঞ্চস্থ হোক না কেন, বিবেকবানের প্রাণে না সইলেও সাক্ষী গোপালের মতো এসব কিছু বিনাবাক্যে অবলোকন করে যেতে হবে। তা না হলে ‘খবর আছে’।
ভোটাররাই নির্বাচনের প্রাণ। কিন্তু আজকাল নির্বাচনের জন্য ভোটার নন, ‘ভোট গণনাকারী’র কদর অনেক বেশি। কারা জিতবেন, অর্থাৎ কাদের নাম ‘বিজয়ী’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে, এর সিলেকশন নাকি আগেভাগেই সাঙ্গ হয়ে যায়। রাশিয়ার চামারসন্তান স্টালিন অকারণে বলেননি, ‘নির্বাচনে ভোটার থাকে, তবে যিনি ভোট গণনা করেন তিনি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
স্টালিন না হয় এক নেতা এক দল এক প্রার্থীর দেশের কমরেড (আসলে বেশি ‘রেড’) হিসেবে উক্তিটি করেছিলেন। কিন্তু দৃশ্যত বহুদলের অনেক প্রার্থীর এই বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সচিব বলে দিয়েছেন, ‘কতজন ভোট দিয়েছেন, সেটা আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং এবার নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটারের অংশগ্রহণের হার বাড়ানোকে বেশি গুরুত্ব দিলে শান্তি বিঘিœত হতো।’
এর সোজা মানে হলো, নির্বাচন হবে ‘অংশগ্রহণমূলক’ যেখানে বিরোধী দল, এমনকি সাধারণ ভোটারদেরও অংশগ্রহণ নেই। দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ এ নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য কী গুরুতর ও দীর্ঘস্থায়ী অশান্তি বয়ে আনতে পারে, সে কথা সরকার ভাবছে না। এহেন নির্বাচন বাহ্যিকভাবে যেমনই হোক, আসলে ‘সাজানো’ বলেই জনগণ মনে করে। নির্বাচনকে বলা হয়, গণতন্ত্র নামের সৌধের ভিত্তি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে নির্বাচনের যে চেহারা ও চরিত্র, তা যে গণতন্ত্রের প্রাসাদকে নড়বড়ে করে দিচ্ছে, তা বোঝার জন্য বুদ্ধিজীবী হতে হয় না।
ভোটাররা আগে নিজের ভোট নিজেই দিতেন। তবে ক্রমেই দিন বদলে যেতে থাকে। এবার একজনের ভোট অন্যজন দেয়া শুরু হলো। এটা কিন্তু পরার্থপরতা নয়; বরং বিশেষ দল বা প্রার্থীর স্বার্থ রক্ষা করার চরম পন্থা হিসেবেই এই কাণ্ড করা হয়েছে। সাধারণ ভোটাররা দেখলেন, ‘আপনার ভোট আমি দেবো’ সেøাগান রূপায়ণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা যাদের, এদের সাথে এঁটে ওঠা যাবে না। কারণ, বিত্ত ও বাহিনীর মদদ ওরাই পাবে। ভোটাররা তাই এখন ভোটকেন্দ্রবিমুখ। তারা ভোট না দিলে যে ফল হবে, দিলেও তাই হবে; এমন বিশ্বাস থেকে জনগণ আর ভোট দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
তা ছাড়া, সরকার যতই উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিক কিংবা বিরোধী দলকে ‘জিরো’ বানানোর তালে থাকুক, বিরোধী দল নির্বাচনে না নামলে ভোটের না থাকে উত্তাপ, না থাকে আকর্ষণ। তখন নির্বাচন নেহায়েত নিয়ম রক্ষার আনুষ্ঠানিকতায় পর্যবসিত হয়। এ কারণে কোনো কোনো স্থানে আয়োজন সত্ত্বেও ভোটাররা ভোট দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। এ দিকে, ভোটকেন্দ্রে কর্মকর্তা ও কর্মীদের ঘুমানো, ঝিমানো আড্ডামারা আর হাইতোলা ছাড়া কাজ ছিল না।
এবার উপজেলা নির্বাচন ছিল ‘একদলীয়’। তবে সরকারের প্রত্যাশামাফিক তা ‘একতরফা’ হতে পারেনি। এর কারণ ক্ষমতাসীন দলের গ্রুপিং, কোন্দল ও বিদ্রোহ। এত দিন দলটির নেতাকর্মী-ক্যাডাররা বিরোধী দলের বিপন্ন লোকজনকে ধোলাই দিয়েছেন পুলিশের ছত্রছায়ায়। এখন নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকায় নিজেরাই নিজেদের প্রতিপক্ষ। একই দলের এক অংশ অন্য অংশের ওপর অস্ত্র নিয়ে চড়াও হচ্ছে। এতে সন্ত্রাস-সহিংসতার যে মাত্রা, তা নিছক নির্বাচনী উত্তাপ-উত্তেজনার সীমা ছাড়িয়ে উন্মাদনা ও উচ্ছৃঙ্খলতার পর্যায়ে পৌঁছেছে।
বিগত সংসদ নির্বাচনের আগে সিইসির একটি বিভ্রান্তিকর উক্তি ছিল, ‘নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ থাকবে; তবে এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হবে না; আশা করি।’ সবাই জানেন, উত্তাপ ছাড়া উত্তপ্ত হয় না। আসলে তিনি ওই কথা দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন, সেটাই বোঝা গেল না। ডুব দিয়ে গোসল করবেন, আবার চুল রাখতে চাইবেন শুকনো- এ দুটো কাজ তো একসাথে করা অসম্ভব।
অতএব, দলের কলহ-কোন্দল-কিলাকিলি উপজেলা নির্বাচনের ক্রমবর্ধমান উত্তাপকে চরম উত্তপ্ত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে অনিবার্যভাবেই। এতে আওয়ামী লীগের নৌকা চৈত্রের কালবৈশাখী ঝড়ে ডুবে গেছে ১৩৬ উপজেলায়। অথচ দলীয় শীর্ষ নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, উপজেলার নির্বাচনী বৈতরণী সহজেই তাদের তরণী প্রতীকধারীরা উতরে যাবেন।
এ ক্ষেত্রে মুজিবের কোট আর হাসিনার উন্নয়নকে ভরসা মনে করা হয়েছিল। বাস্তবে নৌকার বিপরীতে আনারসসহ কয়েকটি প্রতীকের প্রার্থীরা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন ভোটাভুটিতে। ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সূচ্যগ্র মোদিনী’- এই ধনুর্ভঙ্গ পণের প্রমাণ রাখতে চেয়েছেন অফিসিয়াল এবং আন-অফিসিয়াল সব আওয়ামী প্রার্থী। ভোটার ম্যানেজ করা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা, হোন্ডা ও ডাণ্ডার জোর, ‘গাজর ও লাঠি’ নীতির প্রয়োগ, নরম ও গরম কায়দাকৌশল ইত্যাদি সব কিছু মিলে যিনি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম; তিনিই ভোটের ফল ভোগ করতে পেরেছেন। এভাবে নৌকাকে উল্টে দিয়ে বা ফুটো করে বহু উপজেলায় অন্য কোনো মার্কার প্রার্থীর হয়েছে পোয়াবারো।
এবার সরকারসমর্থক পত্রপত্রিকাও লিখেছিল, উপজেলা নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। নেতৃত্বের আনুগত্য ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলার এ পরীক্ষায় আওয়ামী লীগ দৃশ্যত পাস করেছে। তবে মোটেও ভালো ফল করেনি এবং এ কারণে দলের গায়ে এটা বিরাট ধাক্কা বৈকি। কেন্দ্র থেকে অনেক নীতিমালা, নির্দেশনা, হুঁশিয়ারি ও সতর্কবাণী দেয়া হয়েছে। তবে এর বেশির ভাগই কাজে লাগানো যায়নি। তাই হাইকমান্ডকে পিছু হঠার অভিযোগ শুনতে হয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে (যে করেই হোক) ভূমিধস বিজয়ের পরই কয়েক ধাপে হলো গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলা নির্বাচন। কিন্তু দলের এমপিদের অন্তত ৪৫ জনসহ প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাদের বড় একাংশের মদদে বিদ্রোহের অভাবনীয় ঘনঘটা ক্ষমতাসীনদের ভাগ্যাকাশে চৈত্র মাসেই কালবৈশাখীর বিপর্যয় ডেকে এনেছে। শীর্ষ নেতাদের ধারণা ছিল, বিএনপি ও জামায়াত যেহেতু বাইরে, তাই এই নির্বাচনে ‘ঝামেলা হবে না’ এবং ইলেকশনের ‘ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার’রা পরিকল্পনামাফিক উপজেলা কুক্সিক্ষগত করার কল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
কারণ, সবাই তো আসলে নৌকার মাঝিমাল্লা। মানে ‘আমরা আমরাই তো’; কিন্তু ময়দানে দেখা গেছে কবি কিশোর সুকান্তের কবিতার পঙ্ক্তি ৭৫ বছর পরে অন্যভাবে সত্য হয়ে গেছে, ‘বিদ্রোহ আজ বিদ্রোহ চারিদিকে, /আমি যাই তারি দিনপঞ্জিকা লিখে।/এত বিদ্রোহ দেখেনি তো আগে কেউ;/দিকে দিকে জাগে অবাধ্যতার ঢেউ।’
এমন এক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সাজানো ফলাফলেও একরকম লেজেগোবরে দশা। ভোটারবিহীন নির্বাচন ‘শান্তিপূর্ণ’ হওয়ার ঢেঁকুর অমেরুদণ্ডী নির্বাচন কমিশন তুলতে পারে; কিন্তু উপজেলা এখন ক্ষমতাসীন মহলের জন্য এরশাদ আমলের ‘উপজ্বালা’ শুধু নয়; দুঃসহ জ্বালা হয়ে উঠেছে। সামনের দিনগুলোতে বিভিন্ন স্থানে পরস্পরবিরোধী গ্রুপের এমপি আর উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্বে ক্ষমতা দেখানোর খেলা কেমন জমে ওঠে, দেশের মানুষ তা দেখার অপেক্ষায়।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনে কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হলো যা আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর এবং দুশ্চিন্তার বিষয়। যেমন- ক) দলের ভেতর কোন্দল ও বিভেদ, গ্রুপিং ও গালাগালি ভয়াবহ মাত্রায় উন্নীত হয়েছে। খ) ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার লোভ এবং প্রতিপক্ষ গ্রুপের প্রার্থীকে ঠেকানোর জেদ অনেক নেতাই সংবরণ করতে পারেন না। গ) দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ লঙ্ঘন করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া এবং নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থীর প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করার মতো দলীয় লোকের সংখ্যা ও শক্তি নিছক কম নয়।
এমন পরিস্থিতির একটা বড় কারণ হলো, কথিত বিদ্রোহীরা জানেন- তারা দলের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে নিজেরা জিতে গেলে আজ হোক কিংবা দু-চার দিন পরে হোক দলীয় নেতৃত্ব তাদের শুধু কাছে টানা নয়, কোলে তুলে নেবে ‘দলের স্বার্থেই’।
সুদূর অতীতে গ্রিক মহাবীর আলেকজান্ডার ইউরোপ ছাড়িয়ে, মধ্যপ্রাচ্য মাড়িয়ে, ইরান-আফগানদের তাড়িয়ে ভারতবর্ষ জয় করতে এসেছিলেন। তবে উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল থেকেই তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন। বিস্মিত আলেকজান্ডার সেনাপতির উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ।’ আজ এই মহাবীর বেঁচে থাকলে আরো বিস্মিত হয়ে দেখতেন, ‘কত রঙ্গে ভরা এই ভঙ্গ বঙ্গদেশ।’ প্রাচীনকালের বঙ্গীয় জনপদের বৃহদংশ নিয়ে গঠিত আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গীকার বা আভিজাত্য ছাড়া রাজনীতিক হওয়া যায়; ছাত্র না হয়েও হওয়া সম্ভব ছাত্রনেতা।
‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’ আর কালো ছেলের নাম কার্তিক’ প্রবাদ-প্রবচন এখানেই প্রচলিত। তেমনি ভোটার ছাড়া নির্বাচনও এ দেশেরই বাস্তবতা। সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ একেবারে নগণ্য থাকলেও উত্তাপ-উত্তেজনার জোগান দিয়েছে একই দলের প্রার্থীদের মধ্যে হানাহানি, নয় হত্যাকাণ্ড। তদুপরি কোথাও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রাণ গেছে গুলি খেয়ে; কোথাও বা নৌযান ডুবে।
দেশবাসী যেভাবে নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে এবং বর্তমান স্টাইলের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছে, তাতে ভবিষ্যতে ভোট গ্রহণের জন্য এত ব্যয়-বরাদ্দ, সাজ-সরঞ্জাম ও উদ্যোগ আয়োজনের কতটা প্রয়োজন থাকবে, কে জানে। তখন বাড়ি থেকে কোলে তুলে আনতে চাইলেও হয়তো ভোটাররা ব্যালটে সিল মারার জন্য ভোটকেন্দ্রে হাজির হতে রাজি হবেন না। আর কোনো কোনো স্থানে তাদের ভোট দেয়ার জন্য ব্যালট পেপার যদি না থাকে (এমন অঘটন এ দেশের সাম্প্রতিক নজির), তখন কী উপায়?
উপজেলা নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের জন্য মধুর তো নয়ই, অম্লমধুর বলেও প্রমাণিত হয়নি। তারা এ নির্বাচন থেকে পেয়েছেন তিক্ত অভিজ্ঞতা। একদলীয় এ নির্বাচনে অর্ধেকের অনেক বেশি আসনে নৌকা মার্কা প্রার্থীই উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। তবে আশা করা হয়েছিল বড়জোর ৫-১০টি জায়গায় ‘বিদ্রোহী’ থাকবে হয়তো; বাদবাকি সব উপজেলায় নৌকার পালে হাওয়া লাগবেই।
কিন্তু দলের চেয়ে কোন্দলের দাপট আর কেন্দ্রের কঠোর সাবধানবাণী উপেক্ষা করে বিদ্রোহের ব্যাপকতা; তদুপরি নৌকার মাঝি হিসেবে এমপি হওয়া বহু নেতার আড়ালে ও প্রকাশ্যে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া, ইত্যাকার আলামত দেখে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন সত্যিই উদ্বিগ্ন। উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত বারবার বদলিয়ে কেন্দ্রকে পিছুটান দিতে হয়েছিল কলহ-কোন্দলের কারণে। তবুও ঘরোয়া বিবাদ ও বিভেদ, হুমকি ও হামলা থামেনি। প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল, নির্বাচনে চেয়ারম্যান ছাড়া ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দল একক প্রার্থী দেবে।
কিন্তু পদের চেয়ে প্রার্থীর সংখ্যা দলের মধ্যেই বেশি হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত রদ করে দিতে হয়। বলা হলো, ‘এমপি ও মন্ত্রীরা দলীয় প্রতীকধারী প্রার্থী, অর্থাৎ কেন্দ্রের মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করলে কড়া ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দলের এমপিরা এতে কান না দিয়ে সরাসরি বা কৌশলে বিদ্রোহী আপন লোকের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। ফলে অপ্রত্যাশিত নৌকাডুবি ঘটেছে বহু জায়গায়। এমনকি নৌকাওয়ালা, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানেরও পরাজয় ঘটার নজির আছে। এ অবস্থায় আগামী দিনে গৃহদাহ অনেক বাড়তে পারে বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শঙ্কিত।
গত শুক্রবার একটি জাতীয় দৈনিকের প্রথম পাতার খবর : ‘উপজেলা নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতায় স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার বিষয়ে ভাবছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করা এবং বিদ্রোহীদের সামাল দেয়া, ব্যক্তির বিরোধিতা করতে গিয়ে নৌকাবিরোধী অবস্থানের কারণেই স্থানীয় সরকারে দলীয় নির্বাচন থেকে পিছু হটছে ক্ষমতাসীন দলটি।’
পাদটীকা : ‘ভাই, আপনি কোন দল?’
প্রশ্নটা শুনে এক নেতা বললেন, ‘ঠিকই বলেছেন, আসলে আমি সারা বছরই কোন্দলে থাকি (‘কোন দল’ আর ‘কোন্দল’-এর ধ্বনিগত সাদৃশ্য লক্ষণীয়)। এবার উপজেলা নির্বাচনে দেখা গেছে, হ্যাটট্রিক বিজয়ী শাসক দলটিতে ‘দল’-এর চেয়ে ‘কোন্দল’ অনেক বেশি।