শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে রওশন এরশাদ
- সাইফুল মাহমুদ ময়মনসিংহ অফিস
- ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৪:৪২
ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে দেশের অষ্টম বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের নির্বাচনী প্রচারণা। এ আসনে এবার লড়াই হবে নবীন আর প্রবীণের মধ্যে। বিগত পাঁচটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মূলত বিএনপির সাথেই লড়াই হয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির। এ আসনে বিএনপি দুইবার, আওয়ামী লীগ একবার ও জাতীয় পার্টি দুইবার বিজয়ী হয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক, ১৯৯৬ সালের জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদ, ২০০১ সালে বিএনপির দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ।
এবারো মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ। রওশন এরশাদের তুলনায় তিনি বয়সে তরুণ ও নবীন প্রার্থী। মহাজোটের আসন বণ্টনে রওশন এরশাদ এ আসনটি বেছে নেন। জাতীয় পার্টির অবস্থান এখানে তেমন শক্তিশালী না হওয়ায় আওয়ামী লীগের ওপরই সওয়ার হতে চান তিনি।
তার বিজয় নির্ভর করছে নৌকার অনুসারী সাধারণ ভোটারদের ওপর। কারণ তিনি লড়াই করছেন লাঙ্গল নিয়ে। নৌকার অনুসারীদের অনেকেই লাঙ্গলের পরিবর্তে ধানের শীষকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। অবশ্য মহাজোটের এক যৌথ নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় রওশন এরশাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটা বড় দল। এক সময় আমরাও (জাতীয় পার্টি) বড় দল ছিলাম। নানা কারণে এখন ছোট দল হয়ে গেছি। কিন্তু এই ছোট দলের সহযোগিতা নিয়েই আপনারা বড় দল ক্ষমতায় আছেন, ভালো আছেন।’ মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তাকে (রওশন এরশাদ) বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
রওশন এরশাদ হেভিওয়েট প্রার্থী হলেও শহর ও গ্রামাঞ্চলে তার প্রচারণা শুরু করতে বেশ দেরি হয়। তবে বিএনপি ও তার সমর্থকেরা প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই শহর ও গ্রামাঞ্চলের ঘরে ঘরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সাধারণ ভোটারদের মতে, বিএনপির লোকজন বিগত নির্বাচনে ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত ছিল বলে এবার তারা জয়লাভের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের ‘ক্যারিশমা’ করা কঠিন হবে। তাছাড়া ময়মনসিংহের রাজনীতির সাথে বেগম রওশন এরশাদ তেমন সম্পৃক্ত নন। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি খুবই নড়বড়ে। দলের নেতাকর্মীদের সাথে বেগম রওশন এরশাদের যোগাযোগও খুব কম। এমন বাস্তবতায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মহাজোটের জয় রওশন এরশাদের জন্য এবার অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তারা।
এ দিকে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে বিএনপির প্রার্থী আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গণসংযোগ করছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। তিনি বলেন, এবার ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয় নেতাকর্মীরা হামলা, মামলা জেল-জুলুম উপেক্ষা করে দিন-রাত ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করছেন। মহাজোট তথা সরকার ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচারণায় বাধা এবং ভোটারদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে মিথ্যা মামলায় নেতাকর্মীদের আসামি করে হয়রানি করছে। প্রতীক বরাদ্দের পর জেলার ১১টি আসনেই গায়েবি ও সাজানো মিথ্যা মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কয়েক শ’ নেতাকর্মী এখনো জেলে রয়েছেন। প্রার্থীসহ অনেকেই হুলিয়া নিয়ে মাঠে কাজ করছেন।
এক দশক পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়ায় এবারের নির্বাচনে তরুণ ও নতুন ভোটারদের প্রত্যাশার কমতি নেই। তারা নিরাপদে ভোট দিতে চান। চান সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাদের প্রত্যাশা যারাই সরকার আসবে তাদের বেকার সমস্যার সমাধান, দারিদ্র্যমোচন ও দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। নবীন ও তরুণ ভোটাররাই এবার জয়ের মালা পরাবেন বলে অনেকেরই ধারণা।
২০১৫ সালের ১৩ অক্টোবর বৃহত্তর ময়মনসিংহের চারটি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ দেশের অষ্টম বিভাগ গঠিত হওয়ার পর প্রথমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সংসদ নির্বাচন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনসহ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসন। এ আসনের ১৭৬টি ভোট কেন্দ্রে পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ৩১ জন ভোটর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নতুন ভোটার রয়েছেন ৫৫ হাজার ১৯৬ জন। মহাজোটের প্রার্থী রওশন এরশাদ ও বিএনপির আবু ওয়াহাব আকন্দ ওয়াহিদ ছাড়াও সিপিবির এমদাদুল হক মিল্লাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ডা: নাসির উদ্দিন ও এনপিপির হামিদুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।