মাসুদা ভাট্টি নারী। কিন্তু আফরোজা আব্বাস আর প্রিয়াংকারা কি নারী না?
- হাসান আমান
- ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৩:২০
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেক ‘নতুনের’ সাথে পরিচয় ঘটল জাতির। বাংলাদেশে ভোটার ও সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচন মানে উৎসব। কিন্তু ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মানে ভয়, হামলা-মামলা ও শঙ্কার। হামলা-মামলা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষও। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অধিকাংশই ভোটের মাঠে নেই। হয় জেলে না হয় পলাতক বা ফেরারি। আর প্রার্থীরাও জীবনের ভয়ে সাধারণ ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন না। যদিও বা যাচ্ছেন সেখানে তারা ক্ষমতাসীনদের হামলার শিকার হচ্ছেন। ধানের শীষের হেভিওয়েট প্রার্থীরাও হামলা থেকে রক্ষা রেহাই পাচ্ছেন না।
তবে এবার নতুন আরেকটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। এবার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নারী প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার হচ্ছেন। যা এর আগে কখনো ভাবা যায়নি। ঢাকায় আফরোজা আব্বাস একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছেন। অল্পের কারণে তিনি বড় ধরণের বিপদ থেকে রক্ষা পান। তার উদ্যমী প্রচারণা ভোটারদের নজর কেড়েছে।
শেরপুরে ডা. সানসিলা সাবরিনা প্রিয়াংঙ্কাও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। তিনি ফেসবুক লাইভে এসে তার পরিবার ও নেতাকর্মীদের রক্ষার জন্য প্রশাসন ও দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন। তার লাইভ বক্তৃতার নিচে অনেক দর্শক প্রশাসনের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। তারা এই কনিষ্ঠ নারী প্রার্থীকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
আবার কক্সবাজারের হাসিনা আহমেদ। যিনি নবম জাতীয় সংসদের একজন সদস্যও বটে। তিনিও ক্ষমতানসীনদের হামলার শিকার হয়েছেন। তিনিও হামলার জন্য প্রশাসন ও ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে দায়ী করেছেন। তিনিও তার জীবনের শঙ্কার কথা বলেছেন। তার স্বামী সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারতে এক প্রকার বন্দী জীবন-যাপন করছেন। এই সংগ্রামী নারীকেও নির্বাচনে চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
এছাড়া জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপাও ভয়ে নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছেন।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, সংসদের নেতা নারী, বিরোধীদলের নেতা নারী, স্পিকার নারী। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদে একাধিক সদস্যও নারী।
আফরোজা আব্বাস ও ডা. প্রিয়াঙ্কার উপর হামলার প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও কলামিস্ট ড. আসিফ নজরুল তার ফেসবুকে একটি স্টাটাস দেন। তিনি বলেন, ‘একটা জিনিষ মনে হলো হঠাৎ। মাসুদা ভাট্টি নারী। কিন্তু আফরোজা আব্বাস আর প্রিয়াংকারা কি নারী না? তাদের উপর হামলায় নারীবাদীদের প্রতিক্রিয়া নেই কেন?’
নারীদের উপর হামলা করে আমরা কি প্রমাণ করতে চাইছি? দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, নারীরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। তারপরও তাদেরকেই কেন আমরা টার্গেট করছি?
অবশ্য এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের নারীবাদীরা বড্ড নিরব। এখানে তারা নারীর সামাজিক পরিচয় খোঁজে, তার রাজনৈতিক পরিচয় খোঁজে। তার আদর্শিক মতাদর্শ খোঁজে। নারীত্ব এখানে তাদের কাছে গৌণ।
( মতামত লেখকের নিজস্ব অভিমত, এরজন্য নয়া দিগন্ত দায়ী নয়)