পেনশনারদের সমস্যা
- ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:৫৫
পেনশনারদের সমস্যা নিয়ে ‘নয়া দিগন্ত’ পত্রিকায় অনেক লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। নয়া দিগন্তের এই সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রশংসনীয়।
সম্প্রতি শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পেনশন পুনরায় ফিরিয়ে দিয়ে সরকার তাদের সীমাহীন দুর্দশা লাঘবের ক্ষেত্রে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সেসব পেনশনারদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি যারা ১ জুলাই ২০১৫ সালের আগে অবসরে গেছেন। তখন তাদের মূল বেতন অপেক্ষাকৃত কম ছিল। ১ জুলাই ’১৫ থেকে কার্যকর, বর্তমান জাতীয় স্কেলে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দ্বিগুণ করা হয়েছে। ফলে ১ জুলাই ’১৫ থেকে যারা অবসরে গেছেন বা এখনো যাচ্ছেন, তাদের মূল বেতন অনেক বেশি বিধায়, পেনশনের পরিমাণও বেশি। তা ছাড়া, ১ জুলাই ’১৫ সালের আগে যারা অবসরে গেছেন, তাদের সর্বশেষ মূল বেতনের ৪০ শতাংশ মাসিক পেনশন হিসাবে পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমান স্কেলে অবসরপ্রাপ্তরা মাসিক পেনশন পাচ্ছেন সর্বশেষ মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ।
এর ফলে, মাত্র একদিন আগে ও পরে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পেনশন-বৈষম্য দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একই অফিসে একই পদে ও একই স্কেলে কর্মরত ছিলেন- এমন দুইজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পেনশন-বৈষম্য প্রায় আট হাজার টাকা। অধিকন্তু, ওই প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার অধীনে কর্মরত ছিলেন, এমন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে অবসরে যাওয়ার কারণে তারা তাদের নিয়ন্ত্রণকারী ওই প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার চেয়েও অনেক বেশি পেনশন পাচ্ছেন। এ সমস্যার আশু সমাধান জরুরি। এ ক্ষেত্রে কেউ পেনশন সমতার কথা বলছেন। কিন্তু এতে অনেক জটিলতা দেখা দেবে। কারণ দুইজন পেনশনারের চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা-কনিষ্ঠতা, চাকরির রেকর্ড, বিভিন্ন প্রকার স্কেল প্রাপ্তির তথ্য যাচাইপূর্বক সমতার কেস নিষ্পন্ন করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং ওই শ্রেণিভুক্ত পেনশনারের বর্তমানে প্রাপ্ত পেনশন শতভাগ বৃদ্ধি করলেই পেনশন-বৈষম্য অনেকাংশে নিরসন হবে।
অপর দিকে, ওষুধ, টেস্ট ও ডাক্তারের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসাব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় পেনশনারদের চিকিৎসাভাতা দ্বিগুণ করা প্রয়োজন এবং সত্তোরোর্র্ধ্ব পেনশনারদের চিকিৎসা ভাতা মাসিক সাত হাজার টাকা করা দরকার।
রাষ্ট্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্মানজনক জীবনধারণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেমন রাষ্ট্রের, তদ্রুপ, পেনশনারদের সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। কারণ, তারা একসময় রাষ্ট্রেরই সেবক ছিলেন। দুর্মূল্যের বাজারে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা এবং বর্ধিত চিকিৎসাব্যয় নির্বাহের জন্য উল্লিখিত প্রস্তাবগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
মকবুল হোসেন শওকত
সাবেক ডিএও, রংপুর এবং জীবন সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, জয়পুরহাট জেলা শাখা