হঠাৎ বদলে যেতে পারে পারে রাজনীতি
- মঈন উদ্দিন খান
- ২৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:১৮
শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কোনো লক্ষণ ফুটে না উঠলে ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে রাজনীতি। রাজনীতির ময়দান ছেড়ে দিতে নারাজ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, তখন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচনের দিনকে ঘিরে শক্তভাবে মাঠে নামতে পারে। এতে করে সরকার ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায়ের বদলে ঐক্যফ্রন্টকে সাথে নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি সত্যিকারার্থেই নির্বাচনে থাকতে চায় এবং ভোটে জিততে চায়। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে দলটির শঙ্কা ততই বাড়ছে।
একাধিক নেতা বলেছেন, নির্বাচনের মাঠ অসমতল জেনেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। ভোট দিতে তারা উন্মুখ। এখন নির্বাচন কমিশন ও সরকার যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ দেখাতে না পারে তাহলে আপনা-আপনিই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে।
জানা গেছে, স্বল্পমেয়াদি একটি কঠোর কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা ছিল বিএনপির হাইকমান্ডের। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মতো সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচিতে দল ও দলের বাইরে থাকা ‘প্রভাবশালী’ কোনো কোনো পক্ষ সম্মত না থাকায়, কৌশল পাল্টে সরকারবিরোধী একটি শক্তিশালী জোটগঠনে মনোযোগ দেয় দলটি। যার আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে। এরপর প্রবীণ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনসহ ফ্রন্টের নেতৃত্বে থাকা বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরা একটি অবাধ নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তু‘ত করতে ভিন্ন কৌশলে সামনে অগ্রসর হয়। সরকারপক্ষের সাথে আলোচনায় বসেন তারা। সেই আলোচনায় কোনো ফল না হলেও ভোটে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর সরকারের সমীকরণও পাল্টে ফেলতে হয়েছে। এখন একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পুরো চাপ তাদের ওপরেই। যদি তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পরিস্থিতির দায় তাদেরকেই বহন করতে হবে।
নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পরও পরিস্থিতি একটুও পাল্টায়নি। আশাবাদীরা মনে করেছিলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসায় হামলা-মামলা- গ্রেফতারের বদলে ধীরে ধীরে নির্বাচনী আমেজ শুরু হবে। কিন্তু সে রকম লক্ষণ এখনো ফুটে ওঠেনি। প্রতিদিন গ্রেফতার অভিযান চলছে। শিডিউল ঘোষণার আগে দেশজুড়ে যেসব গায়েবি মামলা করা হয়েছিল, সেই মামলায় বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পুরনো অনেক মামলার রায় হচ্ছে কিংবা জেলে যেতে হচ্ছে শীর্ষ নেতাদের। নির্বাচন কমিশন নিজের সাংবিধানিক শক্তির ওপর ভর করে দাঁড়াতেই পারছে না। সরকার যেভাবে প্রশাসনকে সাজিয়েছে, ঠিক সেভাবেই সব রয়েছে।
এ রকম প্রতিকূল পরিস্থিতির পরও বিএনপি এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ওপর সব ধরনের চাপ প্রয়োগ করে তারা এগোতে চায়। ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্ট পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রশাসনে ব্যাপক রদবদলের দাবি জানিয়েছে। প্রতিদিনই বিএনপি কিংবা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নানা অনিয়ম তুলে ধরা হচ্ছে। অন্য দিকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও মাঠে থাকার কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নেয়া সাক্ষাৎকারে দলের হাইকমান্ড প্রার্থীদের কাছে জানতে চেয়েছে, ভোটকেন্দ্র পাহারা দিয়ে ফল বুঝে নিতে পারবে কি না। কোনো অনিয়ম হলে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে কি না। তখন প্রত্যাশীরা সমস্বরে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছেন। বিএনপির এ ধরনের প্রস্তুতিমূলক বার্তায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রতিক্রিয়াও দেখিয়েছেন। তিনি বিএনপির কথায় গৃহযুদ্ধের আভাস পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করছেন।
অন্য দিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট না হলে বাংলাদেশ আগামীতে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে।
বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী বলেছেন, তারা নির্বাচনের মাঠে মাটি কামড়ে পড়ে থাকবেন। ভোট কেন্দ্র ছাড়বেন না তারা। জানা গেছে, নির্বাচনের দিনকে ঘিরে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করছেন বিএনপির প্রার্থীরা। হাইকমান্ডও তাদের সে ধরনের নির্দেশনা দিয়েছে। বিরোধী দলের এ ধরনের নির্দেশনা আমলে নিয়ে ক্ষমতাসীনেরাও তাদের রণকৌশল সাজাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কিংবা অতীতের মতো ভোটকেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা ঘটলে সংঘর্ষ বেধে যেতে পারে।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট শিগগিরই প্রচারণায় নেমে নির্বাচন দিনের মাঠ আরো শক্তভাবে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করছে। জানা গেছে, ধানের শীষের প্রার্থী বিজয়ী করতে দুুইভাবে প্রচারণা চালানো হবে। বিএনপির জেলার নেতারা থানায় যাবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা যাবেন জেলায়। অন্য দিকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বেশ কয়েকটি বিভাগে সমাবেশ করবেন। ড. কামাল হোসেন ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি সমাবেশে থাকবেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে তারা ‘ডু অর ডাই’ হিসেবে নিয়েছেন। কারণ সরকার বিএনপি ও এর নেতৃত্বকে ঘায়েল করতে যে পথে এগোচ্ছে, তা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়েই কেবল প্রতিহত করা সম্ভব।