২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বাগদাদির বোনকে আটক করেছে তুরস্ক

বাগদাদির বড় বোন রাশমিয়া আওয়াদ - আল-জাজিরা

মার্কিন অভিযানে নিহত উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতিষ্ঠাতা আবু বকর আল বাগদাদির বড় বোনকে আটক করেছে তুরস্ক। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে তাকে আটক করা হয়। তুরস্কের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বরাত দিয়ে আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছেন।

সোমবার তুর্কি কর্মকর্তা জানান, ৬৫ বছর বয়সী রাশমিয়া আওয়াদকে তার স্বামী, পুত্রবধূ এবং পাঁচ সন্তানসহ একটি ট্রাক থেকে আটক করা হয়। সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশের আজাজ শহরে বসবাস করতেন তিনি।

আল-জাজিরাকে নাম প্রকাশ করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, বাগদাদির বড় বোন, স্বামী ও পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এবং এই আটকের ঘটনাকে 'স্বর্ণের খনি' হিসেবে অবহিত করেছেন তারা।

তিনি বলেন, 'বাগদাদির বোনকে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আইএস সংগঠনটি সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবো। এর ফলে সংগঠনটির আরো সদস্যকে আটক করা সহজ হবে।'

গত রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে বাগদাদির নিহতের খবর নিশ্চিত করে অভিযানের বিস্তারিত বিবরণ দেন।

ট্রাম্প বলেন, উত্তর সিরিয়ার যে বাড়িতে বাগদাদি লুকিয়ে ছিলেন রাতের বেলায় মার্কিন স্পেশাল ফোর্স সেখানে অভিযান চালায়। আটটি হেলিকপ্টার অভিযানে অংশ নেয়।

'প্রচণ্ড গোলাগুলির' পর আমেরিকান কমান্ডোরা বাড়িটি ঘিরে ফেলে দরজা দিয়ে না ঢুকে দেয়াল ভেঙ্গে বাড়ির আঙ্গিনায় ঢোকে।

আল বাগদাদি সে সময় তার তিন বাচ্চাকে নিয়ে একটি বদ্ধ সুড়ঙ্গে লুকানোর চেষ্টা করেন। মার্কিন সেনাদের সাথে থাকা কুকুর তাকে তাড়া করলে উপায় না দেখে আইএস নেতা শরীরে বাঁধা বিস্ফোরক ফাটিয়ে দেন। বিস্ফোরণে সুড়ঙ্গটি তার শরীরের ওপর ধসে পড়ে।

বিস্ফোরণে আল বাগদাদির শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। সাথে থাকা তিনটি শিশুও নিহত হয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আইএস নেতার বেশ কজন সহযোগীও নিহত হন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ছিন্নভিন্ন শরীরের ডিএনএ পরীক্ষা করে আল বাগদাদির পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা ধরে চলা অভিযানের শুরুতে ১১টি শিশুকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। তারা অক্ষত রয়েছে।

কে ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদি?

আবু বকর আল বাগদাদির আসল পরিচয় কী তা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। আল বাগদাদি তার আসল নাম নয় বলে মনে করা হয়।

নাম আবু বকর আল-বাগদাদি - তবে তার আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ আল-বদরি। ধারণা করা হয়, ১৯৭১ সালে ইরাকের সামারার কাছে একটি সুন্নি পরিবারে তার জন্ম।

অল্প বয়সে গভীরভাবে ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তিনি ইসলামিক স্টাডিজে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর কোরানিক স্টাডিজে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০০৪ সালে ইঙ্গ-মার্কিন আক্রমণের শিকার হয়ে ক্যাম্প বুকাতে বন্দী হন তিনি। সেখানে তিনি প্রাক্তন ইরাকী গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ অন্য বন্দীদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন।

২০০৩ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাকে সামরিক অভিযান চলে, তখন আল বাগদাদি বাগদাদের কোনো একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন বলে দাবি করা হয় কোন কোন রিপোর্টে।

অনেকের বিশ্বাস, সাদ্দাম হোসেনের শাসনামলেই আল বাগদাদি উগ্রবাদীতে পরিণত হয়েছিলেন। তবে অন্য অনেকের ধারণা, যখন তাকে দক্ষিণ ইরাকে একটি মার্কিন সামরিক ক্যাম্পে চার বছর আটকে রাখা হয়েছিল তখনই আসলে আল বাগদাদি উগ্রবাদে দীক্ষা নেন। এই ক্যাম্পে অনেক আল কায়েদা কমান্ডারকে বন্দী রাখা হয়েছিল।

আল বাগদাদি পরে ইরাকে আল কায়েদার নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে অবশ্য ইরাকের আল কায়েদা নিজেদেরকে ২০১০ সালে 'ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট' বলে ঘোষণা করে।


আরো সংবাদ



premium cement