১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাইক্কা বিলে আসছে পরিযায়ী পাখির দল

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিলে বিচরণ করছে পরিযায়ী পাখিরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

প্রতি বছরের মতো এবারও শীত আসার সাথে সাথে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওরের বাইক্কা বিলে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল। প্রতিদিনই দল বেঁধে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শীত প্রধান অঞ্চল থেকে এখানে আসছে। এসব পরিযায়ী পাখির কিচির মিচির ডাক আর জলকেলিতে মুখরিত হচ্ছে বাইক্কা বিলের মৎস্য অভয়াশ্রমটি। এটি মূলত দেশী প্রজাতির মাছের প্রজনন কেন্দ্র এবং সরকার ঘোষিত মৎস্য সম্পদ প্রজননের নিরাপদ স্থান। এক শ' হেক্টর আয়তনের এ বাইক্কা বিল দেশের একটি সংরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক জলাভূমি।

সিলেটের প্রসিদ্ধ এ জলাভূমিতে পরিযায়ী পাখিদের ছুটাছুটি, কিংবা পানিতে ভেসে বেড়ানো, ডাঙায় দল বেঁধে চুপচাপ বসে থাকা, আবার একসাথে ডানা মেলে উড়ে যাওয়ার মধুময় এ দৃশ্যগুলো উপভোগ করতে দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা।

ইতোমধ্যে বিলে বিভিন্ন জাতের কয়েক’শ অতিথি পাখি এসেছে। এসব পাখিকে বরণ করেও নিয়েছে বাইক্কা বিলের জলজ প্রকৃতি। ফলে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এখন বাইক্কা বিল। এছাড়াও বেশকিছু বিপন্নপ্রায় ও বিরল দেশি পাখি সারা বছরই বাইক্কা বিলে অবস্থান করছে। ওরা নিরাপদ আবাস হিসেবে বেছে নিয়েছে এ বিল ও বিলের পাড়ের হিজল-করচের বাগানকে।

এখন পর্যন্ত বাইক্কা বিলে অবস্থান নেয়া পরিযায়ী পাখিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে কয়েক প্রজাতির সৈকতপাখি, এক প্রজাতির খয়রা-কাস্তেচরা, এক প্রজাতির বড়-পানকৌড়ি, এক প্রজাতির পাতি-কুট এবং হাঁসের মধ্যে গিয়িরা হাঁস ও তিলা হাঁস।

বাংলাদেশের বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক ইনাম আল হক জানান, বাইক্কা বিলে পরিযায়ী পাখি আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কয়েক প্রজাতির পাখি চলেও এসেছে। তবে এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে দেখা মিলেছে তিলা হাঁস আর খয়রা-কাস্তেচরা। খয়রা-কাস্তেচরা এককালে বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। কয়েক বছর আগে টাংগুয়ার হাওরে প্রথম দেখা মিলেছিল। তারপর আস্তে আস্তে এদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বাইক্কা বিলে গত শীত মৌসুমে শতাধিক পরিমান এ পাখিটিকে দেখা গেছে। তখন বাইক্কা বিল ছাড়া দেশের আর কোনো জলাভূমিতে এতো বেশি পরিমানে দেখা যায়নি। এবার ইতোমধ্যেই অর্ধশতাধিক খয়রা-কাস্তেচরা চলে এসেছে। আশা করা হচ্ছে, গত মৌসুম থেকে এবার এদের সংখ্যা আরো বাড়বে।

বাইক্কা বিলে প্রতি বছর পৃথিবীর বরফজমা দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, জিনজিয়াং, ভারত, নেপাল, পাকিস্থান, হিমালয়সহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে পরিযায়ী পাখিরা বেঁচে থাকার তাগিদে খাদ্যের সন্ধানে আর ঠাণ্ডা থেকে রেহাই পেতে এখানে আসে। মূলত এসব পাখিরা শীতের শুরু থেকে আসতে থাকে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে ফিরে যায় আপন ঠিকানায়।

বাইক্কা বিলে গত কয়েক বছর থেকে শীত মৌসুমে হাজার হাজার অতিথি পাখি ছুটে আসে নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের সন্ধানে। ভাব জমিয়ে নেয় দেশীয় পাখিদের সাথে। এখানে ক্রমশ সখ্যতা ও প্রেমের বন্ধনে স্থায়ীভাবে বসবাসও করছে প্রচুর পাখি। তবে শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে বদলে যায় বাইক্কা বিলের রূপ। অপরূপ সৌন্দর্য্যর এই বিলে নভেম্বরের প্রথম থেকেই আসতে শুরু করে অতিথি পাখির ঝাঁক। প্রতিদিন বিচিত্র রঙের অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে বিলটি। এদের কিচির-মিচির শব্দে বিরাজ করে এক মধুময় আবহ।

বিল পাড়ের স্থানীয় বাসিন্ধারা জানান, অতিথি পাখির মধ্যে পানকৌড়ি, কাস্তেচড়া, কানিবক, ধুপনিবক, পাতিসরালী, রাজসরালী, পিন্টেল, সাদাবক, দলপিপি, ঈগল, বেগুনি কালেম, ছোট মাথা টিটি, ল্যাঞ্জা হাঁস, সরালি, মরচে রঙ ভুতিহাঁসসহ আরো অনেক নামের পাখি বিলে আসে। ইতোমধ্যে শত শত পাখি বরফের দেশ থেকে বাইক্কা বিলে এসেছে। এবং পাখিদের আসা অব্যাহত থাকায় বোঝা যাচ্ছে, আরো পাখি এ বিলে আসবে। এছাড়া আমাদের দেশের আবাসিক পাখির মধ্যে বালি হাঁস, পাতি সরালি, বেগুনি কালেমসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস বিভিন্ন এলাকা থেকে বিলে আসছে। পাখিগুলো বিলে ও বিলের চারপাশে কচুরিপানার মধ্যে অবস্থান করছে আবার কিছু সময় পর পর উঁড়াউড়ি করছে। ফলে বাইক্কা বিল এখন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠছে।


আরো সংবাদ



premium cement