১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নৌকায় যার জীবন চলে

নৌকায় যার জীবন চলে - ছবি : সংগৃহীত

তার নাম সুমিত্রা। পুরো নাম সুমিত্রা রানী দাস। নামের সাথে রানী থাকলেও বাস্তব জীবনে রানীর ছায়াও পড়েনি তার জীবনে। ঘরে বৃদ্ধ স্বামী শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আছে ৩ মেয়ে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু স্বামীর অত্যাচার সইতে না পেরে ফিরে এসেছেন মায়ের কাছে। এই যখন জীবনের বাস্তবতা তখন সুমিত্রা রানী হাতে তুলে নেন নৌকার বৈঠা।
 
জীবন সংগ্রামী নারীর অনেক গল্পই আমরা শুনি। যুগে যুগে সংগ্রামী নারীরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। জীবন সংগ্রামী হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। তবে অভাবের তাড়না জীবন সংগ্রামী হতে শেখায় অনেককে। এমন একজন জীবন সংগ্রামী নারী হলেন সুমিত্রা।

সুনামগঞ্জের দুর্গম শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে তার বাড়ি। তিনি সুখেন দাসের স্ত্রী। তিনি এখন খেয়াঘাটের মাঝি। প্রতিদিন খেয়া পারাপার করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
 
পেটের তাগিদে তার জীবন এসে ঠেকেছে নৌকায়। তার বাড়ি নেই, এক খণ্ড জমিও নেই। নদীর তীরেই বসবাস। আবার নদীতেই ফেরি করে বেড়ান। 

সুমিত্রা বলেন, ‘বৃদ্ধ স্বামী অসুস্থ, তিন মেয়েসহ নিজের সংসার চালাতে হাতে বৈঠা নিয়েছি। প্রথম প্রথম ডিঙ্গি বাইতে আমার শরম করতো। এখন আর শরম করে না। ঘরে অসুস্থ বৃদ্ধ স্বামী শ্বাস কষ্টে আছেন। একটি মেয়েকে বিবাহ দিয়েছি, সে স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ফিরে এসেছে। আরও দুই মেয়ে নিয়ে বড় বিপদে আছি।’

তিন মেয়ের খাবার, কাপড়-চোপড়, ওষুধপত্র কিনতে চোখে শর্ষেফুল দেখছেন সুমিত্রা। পথহারা হয়ে জীবনের তাগিদে কোনো উপায় না পেয়ে হাতে বৈঠা নিয়ে এই ঘাটে সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খেয়া পারাপার করছেন। এভাবে ৪ বছর ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন তিনি।

সুমিত্রা আরও বলেন, ‘টাকা-পয়সা নাই বলে একজন নারী হয়ে নৌকা চালাতে হচ্ছে। আমার নিজের বসত বাড়ি-ঘর নাই। নদীর পাড়ে সরকারি জায়গায় একটি ছোট্ট ছাউনি বানিয়ে জীবন-যাপন করছি। শুনছি সরকার মানুষরে ঘর বানিয়ে দিচ্ছে। আমার ঘরও নাই- বাড়িও নাই। তাই নাও বাইয়া সংসার চালাই।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাল্লা উপজেলায় সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীর তালিকায় সুমিত্রা রাণী দাসের নাম নেই।

বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিধান চন্দ্র চৌধুরী ইউএনবিকে বলেন, ‘ওই নারী আমার কাছে এলে আমি সাধ্যমতো তাকে মানবিক সহায়তা করে আসছি। তাছাড়া ওই নারী সংসার চালাতে যে কষ্ট করছে তা সত্যিই বেদনাদায়ক।’

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট দিপু রঞ্জন দাস বলেন, ‘আমি মনে করি, জীবন সংগ্রামে নারী-পুরুষের কোনো রকম ভেদাভেদ নেই। এটাই প্রমাণ করলেন রঘুনাথপুরের সুমিত্রা রাণী দাস। আমি ওই নারীর বাড়িতে যাবো এবং সাধ্যমতো তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করবো।’


আরো সংবাদ



premium cement