২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আসামে ‘বিদেশি’ ঘোষিত ব্যক্তির লাশ নিয়ে অচলাবস্থা

দুলাল চন্দ্র পাল - সংগৃহীত

ভারতের আসামে ‘বিদেশি’ বলে ঘোষিত এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে প্রশাসন ও পরিবারের টানাপড়েনে চার দিন ধরে অচলাবস্থা চলছে। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই ব্যক্তি গত রোববার গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তবে এর আগে গত ২০১৭ সালে আসাম রাজ্য সরকার তাকে ‘বিদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এরপর তাকে আসামের তেজপুরের একটি ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা না করা পর্যন্ত ওই ব্যক্তির লাশ তার পরিবার গ্রহণ করবে না বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হলে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এরপর হাজার হাজার মানুষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম দুলাল চন্দ্র পাল (৬৫)। তিনি আসামের সোনিতপুর জেলার আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পরও ২০১৭ সালে তাকে ‘বিদেশি’ হিসেবে ঘোষণা করে আসাম সরকার।

সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলছে, দুলাল পালকে গত ১১ অক্টোবর তেজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (টিএমসিএইচ) ডায়াবেটিস ও মানসিক সমস্যার চিকিৎসা দেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করার পর ওই দিনই তাকে ডিটেনশন সেন্টারে ফেরত পাঠানো হয়।

এরপর আবার তাকে অসুস্থ অবস্থায় গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রোববার সেখানেই মারা যান দুলাল।

এনডিটিভি আরো জানিয়েছে, দুলালের মৃত্যুর পর কারা দপ্তরের কর্মকর্তারা নিহতের লাশ হস্তান্তরের জন্য আলিসিঙ্গা গ্রামে যান। কিন্তু যে মৃত্যু সনদ তারা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে লেখা ছিল ‘বিদেশি বলে ঘোষিত’; স্থায়ী ঠিকানার অংশটি ছিল ফাঁকা, যা পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়।

এরপর দুলাল পালকে ভারতীয় নাগরিক ঘোষণা না করা পর্যন্ত তার লাশ নিতে অস্বীকার করেন পরিবারের সদস্যরা। ওই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে কতৃপক্ষ বিপাকে পড়ে যায়।

দুলাল পালের বড় ছেলে আশীষ বলেন,‘যেহেতু সরকার তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা করেছে, তাদের উচিত লাশটা বাংলাদেশে পাঠানো। দুলাল পাল বিদেশি না, তিনি ভারতীয়। সরকার এটা স্বীকার করে বিবৃতি দিলে তবেই আমরা লাশ গ্রহণ করব।’

আশীষ বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ তার বাবার ঠিকানা খুব ভালোভাবে জানত বলেই লাশ নিয়ে এসেছে। কিন্তু তারা ইচ্ছে করেই ঠিকানার ঘর ফাঁকা রেখেছে। আমাদের ধারণা, তারা বাংলাদেশের কোনো মনগড়া ঠিকানা দিয়ে দিতে পারে। তিনি যদি বাংলাদেশিই হন, তাহলে তাকে আমাদের কাছে পাঠাবে কেন? তাদের উচিত লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া।

ওই পরিবার ও গ্রামবাসীদের শান্ত করতে গত চার দিনে বেশ কয়েকটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে আসাম সরকার, কিন্তু দুলাল পালের পরিবারের সদস্যরা ও গ্রামবাসী তাদের দাবিতে অটল রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement