২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র উষ্ণ সম্পর্ক, মোদিকে সময় দিচ্ছেন না ট্রাম্প

পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র উষ্ণ সম্পর্ক, মোদিকে সময় দিচ্ছেন না ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত

আগস্টে ফ্রান্সে জি-৭ রাষ্ট্রগুলোর ‘আউটরিচ সেশন’-এ আমন্ত্রিত ভারত। যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার পরের মাসে নিউ ইয়র্কে যাচ্ছেন জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে। পাঁচ বছর পর। মাঝের সময়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

দু’টি বহুপক্ষীয় মঞ্চেই উপস্থিত থাকছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা হয়েছিল, দু’টি সম্মেলনের ফাঁকেই ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির করানোর। কিন্তু সূত্রের খবর, জি-৭-এর ফাঁকে বেঠকের জন্য সময় চেয়েও ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকেও মোদি-ট্রাম্প বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত খুবই ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দিল্লির কূটনীতিকদের একাংশে আপাতত এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আফগানিস্তানে শান্তি প্রক্রিয়ায় গতি আনতে গিয়ে আমেরিকার পাকিস্তান-নির্ভরতা বাড়ছে। এবং তাতে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে নয়াদিল্লির স্বার্থ। কূটনীতি বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ-ও মনে করছেন, অদূর ভবিষ্যতে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যেটুকু অগ্রগতি হলেও হতে পারে, সেটা বাণিজ্য ক্ষেত্রে। কিন্তু কৌশলগত বিষয়ে আমেরিকাকে কতটা পাশে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।

ওভাল অফিসে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বৈঠকের পরে নতুন এই আন্তর্জাতিক সমীকরণের আঁচ মিলছে বলে মনে করছেন কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে আগামী বছর সেখানে ভোট করানোর জন্য তাড়হুড়ো রয়েছে ট্রাম্পের। এই অবস্থায় ভূকৌশলগত কারণেই কাবুলে শান্তি প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নিতে এবং তালিবান সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের প্রশমিত করতে পাকিস্তানের উপর নির্ভরতা বেড়েছে ট্রাম্পের। ইমরানের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প সে কথা বুঝিয়েও দিয়েছেন স্পষ্ট ভাষায়। ইমরানকে পাশে বসিয়ে জানিয়েছেন তার ইসলামাবাদ-নির্ভরতার কথা। শুধু তা-ই নয়, কিছুটা আগ বাড়িয়েই কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতার কথায় মোদির নাম জড়িয়ে ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।

ইমরানও এই সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়ে বলেছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আমেরিকার যুদ্ধে বহু পাকিস্তানি নিহত হয়েছেন। ৯/১১-র হামলায় একজনও পাকিস্তানি যুক্ত না-থাকা সত্ত্বেও বিনা অপরাধে গুরুদণ্ডের মতো আমেরিকা ইসলামাবাদের আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে বলেও ট্রাম্পের কাছে অনুযোগ করেছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী।

মার্কিন অর্থসাহায্য সন্ত্রাসবাদের কাজে লাগাচ্ছে ইসলামাবাদ— এক বছর আগে এই মর্মেই গলা ফাটিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু ইমরানের ওই সাম্প্রতিক আবেদনের পরই লক্ষ্যণীয় পরিবর্তনে নড়েচড়ে বসেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান প্রকল্পকে সহায়তা করার জন্য ১২৫০ লক্ষ ডলার দেয়া হবে।

কূটনীতিকদের মতে, সময়ের ফেরে হলব্রুক-এর বিখ্যাত সূত্র আবার ফিরে এসেছে হোয়াইট হাউসে। ২০০৯ সালে বারাক ওবামা প্রশাসন আফগানিস্তানের জন্য আমেরিকার সামগ্রিক নীতি প্রণয়ন করতে রিচার্ড হলব্রুককে নিয়োগ করেন। বসনিয়ায় শান্তি চুক্তি প্রণয়নে সফল মার্কিন আমলা হলব্রুক, আফগানিস্তান সমস্যা সমাধান তথা গোটা দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার সুস্থিতি এবং নিরাপত্তার জন্য পাকিস্তানকে কেন্দ্রস্থলে বসিয়েছিলেন সে দিন। ভারতের উপর চাপ বাড়িয়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করলে পাকিস্তানেও চরমপন্থা কমবে– এমনটাই ছিল তার তত্ত্ব। দশ বছর পর মোদির দ্বিতীয় ইনিংসে হলব্রুকের সেই পুরনো তত্ত্বই নতুন বোতলে উঠে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। নয়াদিল্লিকে যা উত্তরোত্তর চাপে ফেলছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement