২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ভারতে রুহ আফজার জন্য হাহাকার

- ছবি : আলজাজিরা

শায়েস্তা বেগম রাজধানী দিল্লির ঐতিহাসিক চাঁদনি চক এলাকার বাসিন্দা। কয়েকদিন ধরে পুরো এলাকা ঘুরেও কোন দোকানে পাচ্ছে না ইফতারিতে শরবত তৈরির অপরিহার্য উপাদান রুহ আফজা। তিন সন্তানের জননী এই নারী অনেক দূর হেঁটে হামদর্দের একটি দোকানে গিয়ে অবশেষে খুঁজে পান এক বোতল রুহ আফজা।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘অন্তত ১০টি দোকানে গিয়েছি, তারা সব সময়ই রুহ আফজা রাখে; কিন্তু দুদিন ধরে পাচ্ছি না। অনেকেই বলছে বাজারে সঙ্কট চলছে। এই গরমে রোজা রেখে পায়ে হেঁটে হামদর্দের দোকানে যেতে হয়েছে আমাকে’।

ভারতীয় বাজারে রমজানের শুরু থেকেই রুহ আফজার সঙ্কটের কারণে অসন্তোষ বিরাজ করছে রোজাদার মুসলিমদের মধ্যে। উপমহাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী ইফতারে শরবত একটি আবশ্যকীয় উপাদান। এবছর গরম বেশি পড়ার কারণে শরবতের চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে অনেকগুণ। আর শরবতের অনুসঙ্গ হিসেবে রুহ আফজা অপ্রতিদ্বন্দ্বী। হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের এই পণ্যটি পুরো উপমহাদেশেই ব্যাপক জনপ্রিয়।

শায়েস্তা বেগম বলেন, ‘আমাদের ইফতারে রুহ আফজা অবশ্যই চাই। পানি ও দুধের সাথে রুহ আফজার শরবত আমাদের কয়েক দশকের ঐতিহ্য। সবাই ইফতারে এটি চায়।’

আরেক নারী জামিলা খাতুন(৩৫) পুরনো দিল্লির মুঘল আমলের জামে মসজিদের প্রাঙ্গনে ইফতার করতে এসেছেন সন্তানদের নিয়ে। মসজিদের বাইরে একটি দোকানে রুহ আফজা বিক্রি হতে দেখেই দ্রুত ৪টি বোতল কিনে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত চার দিনে অন্তত ২০টি দোকনে গিয়েছি রুহ আফজা খুঁজতে, কোথাও পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে এতদিন লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার করেছি। এখন যে চার বোতল নিলাম এতই আমার এবারের রমজান কেটে যাবে।

আলজাজিরার অনুসন্ধানে দেখে গেছে এবছর রোজার শুরু থেকেই ভারতীয় বাজারে রুহ আফজার সঙ্কট চলছে। আইজাজ আহমেদ নামের দিল্লির এক ডিলার বলেন, এ বছর চাহিদার অর্ধেক সরবরাহ পাচ্ছি আমরা।

ওখলা এলাকার মোহাম্মদ সিদ্দিক নামের আরেক ডিলার জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ জন ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিতে হয় সাপ্লাই পর্যাপ্ত না থাকায়।

শুধু যে দিল্লিতে এই চিত্র তা নয়। পশ্চিম বঙ্গের আসানসোল শহরের ডিস্ট্রিবিউটর আম্মার ইয়াসির জানান, গত কয়েক দিনে তিনি অন্তত আড়াশ ক্রেতাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন রুহ আফজা না থাকায়।

দিল্লির ফুটপাতে শরবত বিক্রি করেন মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ। তার রুহ আফজার শরবত প্রতি গ্লাস ১০ রুপি। স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক চাহিদা আবদুল্লাহর শরবতের। তিনিও জানান, সরবরাহ কম থাকায় এবার বিক্রি করতে পারছেন না চাহিদা মতো।

১১০ দশ বছরের ঐতিহ্য রুহ আফজা
হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ ইন্ডিয়া কোম্পানিটির শেকড় একশ দশ বছর অতীতের। ইউনানী ঔষধ ও হার্বাল কনজ্যুমার প্রোডাক্টের জন্য জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানটি।

১৯০৬ সালে হাকিম আবদুল মজিদ নামের এক ব্যক্তি পুরনো দিল্লি এলাকায় একটি ছোট্ট ক্লিনিক চালু করে ‘হামদর্দ’ নাম দিয়ে ইউনানী ঔষধ বিক্রি শুরু করেন। পরের বছরই তিনি উৎপাদন করে রুহ আফজা। বিজ্ঞান সম্মত এই পানীয়টি শুধু যে শরীর ঠাণ্ডা রাখে তাই নয়, হিট স্ট্রোক ও পানিশূন্যতাও দূর করে এটি। ক্রমশ জনপ্রিয়তা পায় রুহ আফজা।

১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে পৃথক দুটি রাষ্ট্র জন্ম হলে মজিদ তার দুই ছেলেকে নিয়ে দিল্লিতেই থেকে যান। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা চলে যায় পাকিস্তা। তার ছোট ছেলে সেখানে গিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন হামদর্দ পাকিস্তান।

বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ তিন দেশেই ইউনানী ঔষধ প্রস্তুতে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ।


আরো সংবাদ



premium cement