হজে প্রবাসী স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়ে যে প্রক্রিয়ায়
- ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৩:১৩, আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:১০
হজে প্রবাসী স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও ওমরায় প্রাক-নিবন্ধনের বিধান
চলতি বছরের জন্য সংশোধিত হজ ও ওমরাহ নীতি প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এতে বেশ কিছু নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে ওমরাহ যাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা, হজযাত্রীদের পাসপোর্টের ভেরিফিকেশন অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদন, হজের সময় সেবার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ, শুধু হজের কাজের সাথে জড়িত মন্ত্রণালয় সমন্বয়ে হজ প্রশাসনিক দল পাঠানো, এজেন্সির অ্যাকাউন্টে হজযাত্রীদের জমা দেয়া বিমান ভাড়ার টাকা পে অর্ডার ছাড়া অন্যভাবে ব্যয় করতে না পারা এবং প্রতি ওমরাহ এজেন্সির জন্য বছরে ১০০০ জন হজযাত্রী পাঠানোর কোটার বিধান করা হয়েছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে হজ প্যাকেজও সংশোধিত এবং হজ ও ওমরাহ নীতিমালা অনুমোদিত হয়। তবে ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ও ওমরাহ সম্পর্কিত নিউজ পোর্টালে ধর্মসচিব আনিছুর রহমান স্বাক্ষরিত সংশোধিত পূর্ণাঙ্গ নীতিমালাটি প্রকাশ করা হয়।
উল্লেখ্য, হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার জন্য বর্তমানে কোনো আইন নেই। নীতিমালার ভিত্তিতেই এই কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে চলতি বছরের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্টদের মতামত গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশোধিত হজ নীতিমালায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর কয়েকটি খসড়া আইনেও রয়েছে।
হজ ও ওমরাহ নীতিমালা সংশোধনের কারণ হিসেবে নীতিমালার শুরুতে বলা হয়, সৌদি সরকার প্রতি বছর হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা নিত্যনতুন নিয়মনীতি প্রবর্তন করায়, বাংলাদেশী হজ ও ওমরাহযাত্রী বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং হজ ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী ও আইটি নির্ভর করার লক্ষ্যে হজনীতিতে সংশোধন আনতে হয়েছে।
নীতিমালর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে- হজযাত্রীদের মতো ওমরাহযাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা। নীতিমালার ২২.২.১১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘পর্যায়ক্রমে হজযাত্রীর মতো ওমরাহ যাত্রীদেরও প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।’ ২২.২.১২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ওমরাহ এজেন্সিকে পরিচালক, হজ ঢাকা অফিস বরাবর ওমরাহযাত্রী প্রত্যাবর্তন প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।’ এ ছাড়া নীতিমালায় ওমরাহযাত্রী পাঠানোর কোটা ৫০০ জন থেকে বাড়িয়ে ১০০০ জন করা হয়েছে, যা অফিস আদেশের মাধ্যমেই আগেই কার্যকর হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ওমরাহ লাইসেন্স প্রদান করলেও এত দিন ওমরাহযাত্রীদের প্রেরণের ক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। কিন্তু এই নীতিমালার মধ্য দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনকার্যক্রম চালু হলে ওমরাহ ও ব্যবস্থাপনার সাথেও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা তৈরি হবে। প্রতি বছর লক্ষাধিক লোক ওমরাহ পালন করে থাকে। যদিও ওমরাহ পালনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম অনেক নিচে। তবে ওমরাহ করতে গিয়ে যাতে কেউ থেকে যেতে না পারে সে জন্য গত কয়েক বছর থেকেই ওমরাহযাত্রীদের ফেরত আসার বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোর প্রদত্ত রিপোর্ট ও সৌদি সরকারের রিপোর্টের আলোকে মনিটরিং করে আসছিল।
সংশোধিত নীতিমালার আরো একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে হজগাইড ও হজকর্মীর বাইরে প্রবাসীদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের ব্যবস্থা। নীতিমালার ৬.৩.৫ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়, সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস, জেদ্দার কনসুলেট জেনারেল অফিসের সহায়তায় মিনা-আরাফা-মুজদালিফায় কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিককে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করতে পারবে। এই ধরনের অবৈতনিক স্বেচ্ছাশ্রমে কর্মী নিয়োগপ্রাপ্ত হলে তার জন্য শুধু আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে।’
নীতিমালা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রীকে দুই বছরের মধ্যে হজে যেতে হবে। এই সময়ের মধ্যে না গেলে তার প্রাক-নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। হজযাত্রীদের সেবার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন দলের প্রতিনিধি হয়ে যারা যাবেন তাদেরকে স্টিকার ভিসা অথবা দীর্ঘমেয়াদি হজ সার্ভিস ভিসা প্রদানের বিষয়টি এবারের হজ নীতিমালায় সংযোজন করা হয়েছে। পাশাপাশি যারা সেবা দিতে কিংবা মনিটরিং করতে যাবেন তাদের পারফরম্যান্সের বিষয়ে গোপনীয় মূল্যায়ন প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা এবং প্রতিবেদনের আলোকে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করা যাবে।
বেসরকারি ব্যবস্থায় হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়িভাড়া, সার্ভিসচার্জ বাবদ অর্থ সংশ্লিষ্ট খাতে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব (আইবিএএন) এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে। শুধু হজ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রতি ২৫০০০ থেকে ৩০০০০ হজযাত্রীর জন্য একজন আনুপাতিক হারে প্রশাসনিক দল পাঠানোর বিষয়টি নীতিমালায় যুক্ত করা হয়েছে। এটিএমসির মাধ্যমে হজযাত্রীদের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশন করা হবে। এ ছাড়া হজে অনিয়মের জন্য লাইসেন্স ও জামানত বাজেয়াপ্ত করাসহ অন্যান্য বিধান আগের মতোই বহাল আছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা