২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হত্যা মামলায় ফেঁসে গেছেন গুরমিত সিং

গুরমিত রাম রহিম সিং - সংগৃহীত

সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় ডেরা সাচা সৌদা প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংসহ চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। ২০০২ সালে ছাতরাপাটি এলাকায় খুন হন সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতি। ঘটনায় নাম জড়ায় ডেরা সাচা সৌদা প্রধানসহ বেশ কয়েকজনের। শুক্রবার বিশেষ সিবিআই বিচারক জগদীপ সিং রায় ঘোষণার সময় গুরমিত সিংয়ের পাশাপাশি মামলার অপর তিন অভিযুক্ত কুলদীপ সিং, নির্মল সিং এবং কৃষ্ণ লালকে দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে সংবাদসংস্থার মুখোমুখি হয়ে সিবিআইয়ের আইনজীবী এইচপিএস ভার্মা জানান, ১৭ জানুয়ারি এই অপরাধীদের সাজা ঘোষণা করবে আদালত।

এর আগে দুই ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ডেরা প্রধানের বিরুদ্ধে। ২০১৭ সালে সেই ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তারপর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গুরমিত সিংয়ের ডেরা পঞ্চকুলা। প্রাণ হারান অন্তত ৪০ জন। তাই জেলবন্দি ডেরা প্রধানকে প্রকাশ্য আদালতে আনলে নতুন করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রশাসনিক কর্তারা। ফলে সাংবাদিক হত্যা মামলার শুনানির সময় গুরমিত সিংকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে আদালতে পেশ করার আর্জি জানায় রাজ্য সরকার। গত মঙ্গলবার রাজ্যের প্রস্তাব মেনে নেয় বিশেষ সিবিআই আদালত। এরপরেই শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মামলার শুনানিতে অংশ নেন রোহতকের সুনারিয়া জেলে বন্দি গুরমিত সিং। যদিও বিচারকের রায় শোনার পর তিনি কোনো মন্তব্য করেননি বলে সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে।

সাংবাদিক হত্যা মামলার ঘটনাটির সূত্রপাত ২০০২ সালে। সিরসায় ডেরার সদর দপ্তরে গুরমিত সিং কীভাবে মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন চালান, তা নিয়ে নিজের সংবাদপত্র ‘পুরা সচ’-এ এক অজ্ঞাতপরিচয় চিঠি প্রকাশ করেন ছত্রপতি। এর কিছুদিন পর, অক্টোবর মাসে বাড়ির সামনে খুন হয়ে যান রামচন্দ্র। ২০০৩ সালে রুজু হয় মামলা। তদন্ত শুরু করে পুলিস। মামলার গুরুত্ব বিচার করে তিন বছরের মাথায়, ২০০৬ সালে তদন্তভার নেয় সিবিআই। হত্যা মামলায় মূল ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উঠে আসে ডেরা প্রধানের নাম। জমা পড়ে বহু সাক্ষ্যপ্রমাণ। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ খুঁটিয়ে দেখার পর এদিন মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ সিবিআই বিচারক। দোষী সাব্যস্ত হন গুরমিত সিং সহ চারজন।

শুক্রবার আদালতে সাংবাদিক হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগেই অবশ্য নিরাপত্তা বিষয়ক যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবের বিভিন্ন অংশ। জানা গিয়েছে, পঞ্চকুলা, সিরসা এবং রোহতকের জেলাগুলোতে সহিংসতা-সংঘর্ষ রুখতে রাজ্যের সশস্ত্র পুলিশবাহিনীর পাশাপাশি হিংসা পরিস্থিতির মোকাবিলায় দক্ষ পুলিশ ও কমান্ডো মোতায়েন করা হয়। পঞ্চকুলায় আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি আদালতগামী সমস্ত রাস্তায় ব্যারিকেড তুলে দেয় পুলিশ। সিরসায় ডেরা সাচা সৌদার সদর দপ্তরের সামনে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নিরাপত্তাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। হরিয়ানার পাশাপাশি পাঞ্জাবের বহু অংশের ডেরা সদস্যদের দাপট রয়েছে। এদিনের রায় ঘোষণার ফলে যাতে কোনোরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য পাঞ্জাবের একাধিক এলাকাও মুড়ে ফেলা হয় কড়া নিরাপত্তার চাদরে।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ধর্ষণ মামলায় ডেরা সাচা সৌদা প্রধান গুরমিত সিংয়ের গ্রেফহারের পরে রাজ্যজুড়ে সহিংসতা ছড়ায় ডেরা সদস্যরা। সংঘর্ষে মৃত্যু হয় অন্তত ৪০ জনের। জখম হন অনেকে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই এদিন দুই রাজ্যে পর্যান্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পুলিশ ও প্রশাসন।


আরো সংবাদ



premium cement