জনগণের করের অর্থে ভিআইপি লালন নয়
- ইকতেদার আহমেদ
- ২৬ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫৮
ইংরেজি VVIP (ভিভিআইপি)-এর পূর্ণরূপ হলো Very Very Important Person. এ বাক্যটির শাব্দিক বাংলা অর্থ অতীব অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি মর্যাদার দিক থেকে ভিভিআইপির পর ভিআইপির স্থান।VIP (ভিআইপি)-এর পূর্ণরূপ হলো Very Important Person, মানে, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আমাদের দেশে ভিআইপির সংখ্যা অগণিত হলেও ভিভিআইপি বলতে শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে বুঝায়। আমাদের রাষ্ট্রীয় মানক্রমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর স্থান যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয়। দেশের সর্বোচ্চ আইন, সংবিধানে রাষ্ট্রপতি বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে- রাষ্ট্রপ্রধানরূপে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ সংবিধান দ্বারা নির্ধারিত। রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। অপর দিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন এমন সংসদ সদস্যকে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়ে থাকেন। উভয়ে পদে বহাল থাকাকালে ভিভিআইপি মর্যাদা ভোগ করেন এবং পদ থেকে বিদায় নেয়ার পর তারা ভিআইপি মর্যাদা ভোগ করে থাকেন।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তথা রাষ্ট্রীয় মানক্রম মূলত রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে কারা আমন্ত্রণ পাবেন এবং তাদের আসনবিন্যাস কিভাবে হবে, এটি তারই নির্দেশিকা। রাষ্ট্রের এ মানক্রম নির্ধারণ করা হয় পদ এবং এর কর্মক্ষেত্রের গুরুত্বের আলোকে। মানক্রমের ব্যবহারিক গুরুত্ব রাষ্ট্রীয় আচারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি ব্যক্তির মর্যাদা নির্ধারণের কোনো মাপকাঠি নয়। শুধু রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানগুলোর শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে এর প্রবর্তন। রাষ্ট্রীয় মানক্রম প্রশাসনিক আদেশ বলে সৃষ্ট বিধায় এর কোনো আইনগত বা সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশে রাষ্ট্রীয় মানক্রম বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘এটি শুধু রাষ্ট্রীয় আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হবে।’
আমাদের দেশে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যুগ্ম সচিব থেকে সচিব ও সিনিয়র সচিব অবধি এবং সমমর্যাদার কর্মকর্র্তারা ‘ভিআইপি’ হিসেবে পরিগণিত। বেসরকারি ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, এফবিসিসিআইর ডাইরেক্টর, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান প্রমুখ ভিআইপি হিসেবে পরিগণিত। এসব সরকারি ও বেসরকারি ভিআইপি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে কোনো প্রকার অর্থ প্রদান ব্যতিরেকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা ভোগ করে থাকেন। ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী, এ ধরনের একজন ভিআইপির বিদেশ গমন অথবা বিদেশ থেকে আগমনকালে তিনি ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থানকালে তার সাথে দু’জন ব্যক্তি তাকে সেবাপ্রদানের নিমিত্তে অবস্থান করতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, এ ধরনের ভিআইপিদের গমন ও আগমনকালীন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দু-এর অনেক অধিক ব্যক্তি ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করেন। এ কারণে আমাদের ভিআইপি লাউঞ্জগুলো বিশেষত হজরত শাহজালাল রহ: আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরস্থ ভিআইপি লাউঞ্জগুলোতে প্রায়ই কোলাহল ও ভিড় লক্ষণীয়। আমাদের দেশে অবস্থানরত বিদেশী দূতাবাসে কর্মরত প্রাধিকারপ্রাপ্ত যেসব কর্মকর্তা ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করেন, ভিআইপি লাউঞ্জের কোলাহল ও সরগরমভাব দেখে তাদের অনেককেই বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এ যাবৎ অবসরে যাওয়া সচিবরা অবসর-পরবর্তী তিন বছর ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ লাভ করে আসছিলেন। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, অবসরপ্রাপ্ত সচিবগণ আজীবন ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুবিধা ভোগ করবেন।
এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের সুযোগটি দেয়া হলে সচিব ও এর উচ্চ পদমর্যাদায় সরকারের অপরাপর বিভাগ থেকে যেসব কর্মকর্তা অবসর গ্রহণ করেছেন, তাদেরও অনুরূপ সুবিধা প্রদানের দাবি উঠবে এবং এ দাবিকে নাকচ, উপেক্ষা বা অবজ্ঞা- কোনোটিই করার সুযোগ নেই। উল্লেখ্য প্রধান বিচারপতি অবসর-পরবর্তীকালে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের জন্য প্রাধিকারপ্রাপ্ত হলেও উচ্চ আদালতের অন্য বিচারকরা অবসর-পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে প্রাধিকারপ্রাপ্ত নন, যদিও তারা সচিবদের চেয়ে উচ্চ পদমর্যাদাসম্পন্ন। সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সাংবিধানিক পদধারী এবং সাবেক সংসদ সদস্যদেরও আজীবন ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বর্তমানে সাবেক সচিব এবং সমমর্যাদার সাবেক কর্মকর্তা, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সাংবিধানিক পদধারী এবং সাবেক সংসদ সদস্যের সংখ্যা অগণিত। এ সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করা হলে বর্তমানে ভিআইপি লাউঞ্জের অসহনীয় পরিবেশ আরো অসহনীয় হবে।
প্রতিটি সভ্য ও উন্নত দেশে সামগ্রিক মঙ্গল ও কল্যাণের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি বেসরকারি কোনো ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান ব্যতিরেকে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে দেয়া হয় না। সেখানে আমাদের দেশে অর্থ প্রদান করা ছাড়াই ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগ বাতিলের পরিবর্তে এর ব্যবহারকারীদের পরিধি বিস্তৃত করা কোনোভাবেই যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
পৃথিবীর উন্নত ও সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতির তুলনায় আমাদের দেশে ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেশি। ভিআইপির সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে ২৫২ জন, যুক্তরাজ্যে ৮৪ জন, ফ্রান্সে ১০৯ জন, জাপানে ১২৫ জন। অপর দিকে সাম্যবাদী মতাদর্শী গণচীনে ভিআইপির সংখ্যা ৪৩৫ জন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান প্রভৃতি দেশের ভিআইপিরা চলাচলের সময় কখনো অপরের পথ রোধ করে চলাচল করেন না। এসব দেশের ভিআইপিরা অর্থপ্রদান ব্যতিরেকে বিমানবন্দর ও অন্যান্য স্থাপনার ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে পারেন না। আমাদের দেশের ভিআইপিরা আইনের প্রতি অবজ্ঞা ও উপেক্ষায় কখনো পথ রোধ করে, কখনো উল্টো পথে, কখনো ফেরিঘাট, রেলওয়ে স্টেশন, বিমানবন্দর প্রভৃতিতে বিলম্বে পৌঁছানোর কারণে ফেরি, রেল ও বিমানের যাত্রা বিলম্বিত করে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই এদের বিষয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। এভাবে পথরোধের কারণে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা একাধিক মুমূর্ষু রোগীর মৃত্যু, বিদেশগামী যাত্রীদের যাত্রা ব্যাহত হওয়া, একাডেমিক শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশী পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে বিলম্ব হওয়ার ঘটনা ঘটলেও সুবিধাভোগীরা নির্বিকার। এরই বহিঃপ্রকাশে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকে ‘ভিআইপি’কে ভয়ঙ্কর ইতর প্রাণী, ভেরি ইনহিউম্যান পারসন, ভেরি ইডিয়ট পারসন প্রভৃতি নামে আখ্যায়িত করেছে। ভিআইপিদের আচরণের কারণে আজ ভিআইপি শব্দটি উপহাসে পরিণত হয়েছে। এর দায় একমাত্র ভিআইপি হিসেবে যারা মর্যাদাটির অপব্যবহার করছেন তাদের ওপর বর্তায়।
জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক উভয়েই প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি। এদের মধ্যে পার্থক্য হলো প্রথমোক্তরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। অপর দিকে শেষোক্ত ব্যক্তিরা যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারের কর্মে নিয়োজিত। তাদের বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ রয়েছেÑ ‘এদের কর্তব্য হবে সব সময় জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকা।’ জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক উভয়ের জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা রয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের সদাসর্বদা দেশ ও জনগণের সেবায় সচেষ্ট থাকার কথা থাকলেও এদের বেশির ভাগই যে এ পথ থেকে বিচ্যুত, সে বিষয়ে আজ কারো মধ্যে কোনো সংশয় নেই।
দেশের জনসাধারণের প্রদত্ত করের অর্থে গঠিত, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রক্ষিত অর্থ থেকে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বেতন, ভাতাসহ সুযোগ সুবিধাদি নির্বাহ করা হয়। দেশের সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের কর্মের যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে বলা হয়েছে- ‘প্রজাতন্ত্রের কর্ম’ অর্থ অসামরিক বা সামরিক ক্ষমতায় বাংলাদেশ সরকার-সংক্রান্ত যেকোনো কর্ম, চাকরি বা পদ এবং আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম বলে ঘোষিত হতে পারে; এরূপ অন্য কোনো কর্ম। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি, সরকারের শীর্ষ নির্বাহী প্রধানমন্ত্রী, সরকারের মন্ত্রীরা এবং সরকারি কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের বেতন, ভাতা ও সুযোগ সুবিধাদি সরকার কর্তৃক নির্বাহ করা হয়।
জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক উভয়েই গণকর্মচারী। জনপ্রতিনিধি ও জনসেবক পদে বহাল থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ আহরণ করা হলে উভয়ের গণকর্মচারী হিসেবে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর অধীনে মামলা-পরবর্তী বিচার হয়।
জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত এবং জনসেবকদের মধ্যে যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব এবং সমপদমর্যাদাধারীরা বিদেশ গমন ও বিদেশ থেকে ফেরত আসার সময় বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। এদের যাতায়াতকালে এদের সাথে একাধিক ব্যক্তি ভিআইপি লাউঞ্জে অবস্থান করেন। একজন সাধারণ যাত্রী বিমানবন্দর দিয়ে বিদেশ গমন বা বিদেশ থেকে ফেরত আসার সময় তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা শুভাকাক্সক্ষী কেউ তাকে বিদায় বা অভ্যর্থনা জানাতে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে চাইলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা প্রদান করতে হয়। আমাদের বিদেশযাত্রীদের একটি বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মরত শ্রমিক। এসব শ্রমিকের প্রেরিত, কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার আজ স্ফীত। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার স্ফীত হওয়ার কারণে আমদানি ব্যয় এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকার অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।
যাদের অবদানের কারণে সরকারের এ সুবিধাজনক অবস্থান, তারাসহ তাদের আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাক্সক্ষীরা সরকারের দেয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এদের যখন বিমানবন্দরে নিজেদের অর্থ দিয়ে প্রবেশ করতে হয় তখন জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের সাথে থাকা লোকজনের বিনা অর্থে ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা গ্রহণ করা আইনসম্মত তো নয়ই বরং সংবিধানের আলোকে আইনের দৃষ্টিতে সমতার পরিপন্থী। পৃথিবীর সব উন্নত দেশে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ সরকার থেকে ইজারা নিয়ে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে। এসব দেশে জনপ্রতিনিধি বা জনসেবকসহ সরকারি-বেসরকারি যেকোনো ব্যক্তি ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে চাইলে নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ পরিশোধ করতে হয়। আমাদের দেশে জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকেরা নিজ দেশে কোনোরূপ অর্থ প্রদান ব্যতিরেকে ভিআইপি লাউঞ্জের সুবিধা ভোগ করলেও তারা কোনো উন্নত দেশে গেলে সেসব দেশের সব নাগরিকের মতো তাদেরও অর্থ প্রদান করে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার করতে হয়।
তা ছাড়া আমাদের জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের অনেকেই গানম্যানের সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তারা যানবাহনযোগে চলাচলের সময় তাদের যানবাহনের সামনের আসনে গানম্যান উপবিষ্ট থাকেন। এদের কারো কারো বাহনের সামনে-পেছনে, আবার কারো বাহনের শুধু সামনে অথবা পেছনে নিরাপত্তারক্ষীদের বাহন থাকে। এরূপ নিরাপত্তারক্ষীদের বাহন সাইরেন বাজিয়ে অথবা নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে থাকা ইলেকট্রনিক সিগন্যাল স্টিকের মাধ্যমে জনপথে নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দেয়। প্রায়ই দেখা যায়, তাদের চলাচল ত্বরিত করার জন্য নির্ধারিত সিগন্যালে তাদের বাহনকে থামতে হয় না। এমনকি উল্টো পথ দিয়ে সদর্পে বাহন চালাতে কখনো এদেরকে দ্বিধান্বিত হতে দেখা যায় না। জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে রাষ্ট্র ও সরকারের শীর্ষ পদে আসীন ব্যক্তিদের চলাচলের সময় অপর সবার চলাচলের পথ রোধ করা হয়। এর স্থায়িত্বকাল আগমন ও প্রস্থানের সময় ৪০ থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যানজটের কারণে ঢাকা নগরবাসী এমনিতেই নাকাল। এভাবে যেদিন অপরাপরের পথ রোধ করা হয়, সেদিন যানজটের তীব্রতা দুঃসহ হতে দেখা যায় এবং এর রেশ গভীর রাত অবধি থাকে।
সংবিধান ও আইন মেনে চলা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। অনুরূপ, সব সময় জনগণের সেবা করার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির দায়িত্ব। জনপ্রতিনিধিরা গণকর্মচারী হিসেবে জনগণকে সেবা প্রদান করা তাদের আবশ্যিক কর্তব্য। এ বিষয়টিকে আমাদের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার যেকোনো মূলনীতি মেনে চলার বিষয়ে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আমাদের সংবিধান অনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রের মালিক জনগণ’। রাষ্ট্রপরিচালনার কাজে নিয়োজিত জনপ্রতিনিধি ও জনসেবকদের প্রধান কাজ যেখানে জনগণের সেবা নিশ্চিতকরণ, সেখানে তারা জনসেবার পরিবর্তে যদি নিজের সেবায় নিমগ্ন থাকেন, তাতে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্ম তা ব্যাহত হয়। আর তাই জনগণের করের অর্থে এভাবে ভিআইপি লালন করা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত ও প্রত্যাশিত নয়।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিশ্লেষক
E-mail: [email protected]
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা