আজকের দিনে যদি আমি হতাম প্রধানমন্ত্রী!
- গোলাম মাওলা রনি
- ০২ মে ২০১৯, ১৮:৫২
প্রশ্নকর্তার প্রশ্নটি শুনে আমি একটু বিব্রত বোধ করলাম। কারণ তার প্রশ্নের ধরন, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এবং স্থান-কাল-পাত্রের সাথে প্রশ্নটির কোনো মিলই ছিল না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হলো, তিনি কেবল উত্তরদাতাকে বিব্রত করার জন্যই এমনটি করেছেন। আমি অধীর আগ্রহে উত্তরদাতার অভিব্যক্তি এবং উত্তরের আশায় চোখ-কান সচেতন করে ফেললাম। উত্তরদাতা প্রশ্নটি শোনার পর অদ্ভুত সুন্দর করে হাসলেন- তারপর মাত্র তিনটি সংক্ষিপ্ত শব্দে এমন সুন্দর, যুক্তিযুক্ত ও চমকপ্রদ জবাব দিলেন; যা আমার মতো গোবর গণেশের মাথায় কিয়ামত পর্যন্ত হাতুড়িপেটা করা হলেও এমন কোনো উত্তর তৈরি হতো না। ঘটনাটি ঘটেছিল মার্কিন মুলুকের কোনো এক শহরে সম্ভবত ২০১৫ অথবা ২০১৬ সালের দিকে। বিশ্বরাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি ডা: মাহাথির মোহাম্মদ তখন দেশ-বিদেশে বিভিন্ন সভা-সমিতি করে বেড়ান এবং বিভিন্ন ব্যঙ্গ-কৌতুকের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের কুকর্মগুলো বর্ণনা করে জনমত গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনতরো একটি অনুষ্ঠানে জনৈক প্রশ্নকর্তা ডা: মাহাথিরকে উদ্দেশ করে বলেন- ধরুন, আজকের এই দিনে আপনি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী; সে ক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আপনি কী করতেন?
ডা: মাহাথির প্রশ্নটি শুনে তার স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন- ‘আমি পদত্যাগ করতাম।’ এরপর সবিস্তারে বর্ণনা করতে থাকলেন, কেন তিনি পদত্যাগ করতেন। ডা: মাহাথিরের মতে, ‘প্রধানমন্ত্রীর মতো পবিত্র পদে কোনো অপবিত্র বস্তু থাকা উচিত নয়। কেউ যদি আপন কুকর্ম, কুচিন্তা ও কুৎসিত সংসর্গ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ-পদবি ও কর্মক্ষেত্র কলঙ্কিত করেন, তবে তার ওপর আসমানি ও জমিনি অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ব্যক্তিগতভাবে হয়তো প্রধানমন্ত্রী সৎ; কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও নিজের অযোগ্যতার কারণে তিনি মন্দলোকের নিয়ন্ত্রণে চলে যান। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যদি নিজের পদ ও পদবি থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন, তবে কিছুটা হলেও ইতিহাসের দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী যদি নিজেই সব অপরাধের হোতা, মন্ত্রণাদাতা ও সুবিধাভোগী হন, তবে তার নেতৃত্বে সব শ্রেণীর অপরাধী জ্যামিতিক হারে অপরাধের প্রজনন ঘটিয়ে জমিনকে নরকে পরিণত করে তোলে।’
ডা: মাহাথিরের বক্তব্যে রাজনীতি, ক্ষমতার বলয়, দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের উত্থান-পতনের গাণিতিক ব্যাখ্যা এমনভাবে ফুটে ওঠে, যা উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধের মতো আবিষ্ট করে রাখে। তিনি তার বক্তব্যে অত্যন্ত খোলামেলাভাবে নিজের স্বৈরাচারী মনোভাব, ব্যর্থতা ও সফলতার কাহিনীগুলো বলার পাশাপাশি রাষ্ট্র ক্ষমতা-কেন্দ্রিক দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের দুর্ভাগ্যজনক পরাজয় ও পরিণতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তার সেদিনের আলোচনা ও উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের প্রশ্ন এবং সেসব প্রশ্নের উত্তরের সারাংশ নিয়ে আজকের নিবন্ধে সাধ্যমতো আলোচনা করার চেষ্টা করব।
ডা: মাহাথির মনে করেন, জনগণের অভিশাপের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু বহুগুণ শ্রেয়। কারণ, কোনো অভিশপ্ত মানুষ যত দিন বেঁচে থাকেন, তত দিন কেবল তিনি তার আত্মীয়স্বজন, কর্মী-সমর্থক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পৃথিবীর জন্য আপাঙ্ক্তেয়, অচ্ছুত ও ঘৃণিত বস্তুতে পরিণত করতে থাকেন। অভিশপ্ত ব্যক্তির ভবিষ্যৎ বংশধরেরা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নিজেদের বংশপরিচয় গোপন করতে বাধ্য হন এবং অভিশপ্ত ব্যক্তির ওপর উপর্যুপরি লানত বর্ষণ করতে থাকেন। ফলে অতীতকালের কোনো রাজনৈতিক অভিশপ্ত ব্যক্তির বংশধর তো দূরের কথা, তাদের কবর পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। ইতিহাসে এমন বহু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে অভিশপ্ত ও ঘৃণিত কোনো রাজা-মহারাজা, আমির-ওমরাহ কিংবা সেনাপতির মৃত্যুর শত শত বছর পর তাদের কবর খুঁড়ে মৃতব্যক্তির লাশের হাড্ডিগুড্ডি ও মাথার খুলি গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঘৃণিত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনকে জুতাপেটা করার পাশাপাশি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে অতীতকালের ক্ষোভ ঝাড়া হয়েছে।
রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে যখন কেউ জুলুম-অত্যাচার, খুন-জখম, লুটপাট-রাহাজানি, ঘুষ-দুর্নীতি, জেনা-ব্যভিচার ইত্যাদি শুরু করে তখন ভুক্তভোগী অসহায় মানুষের মন ও মানসিকতা কী রকম হয়ে পড়ে তা বুঝানোর জন্য আজ আমি একজন মজলুমের একটি ফরিয়াদ পাঠকদের কাছে তুলে ধরব। ফরিয়াদকারী একজন ক্ষমতা হারানো বাদশাহ এবং সাচ্চা মুসলমান। কোনো এক রাতে নিজের ভাড়াটে দেহরক্ষীদের আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি কোনো মতে প্রাণ নিয়ে প্রাসাদ থেকে পালিয়ে যান। পরবর্তীকালে সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে তিনি আবার সিংহাসনে আসীন হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তার দেহরক্ষীরা রাষ্ট্রক্ষমতাকে এমনভাবে কুক্ষিগত করে ফেলে, যার কারণে বাদশাহ শতচেষ্টা করেও তার হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে ব্যর্থ হন। যেদিন তিনি সর্বশেষ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন, সেদিন তিনি তার বিধাতার দরবারে নিম্নোক্ত ফরিয়াদ জানিয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন-
‘হে আমার পরওয়ারদিগার। আমি বহুবার পবিত্র কুরআনের সূরা আল ইমরানের ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াত পড়েছি। আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি, তুমিই রাজ্যের মালিক এবং তুমি সেই রাজ্য পরিচালনার ভার যাকে ইচ্ছে তাকে দান করো। আমি আরো বিশ্বাস করি, তুমি তোমার ইচ্ছেমতো রাজ্য কেড়ে নাও এবং একই রূপে কাউকে সম্মানিত অথবা লাঞ্ছিত করো। তোমার ক্ষমতা, দয়া, করুণা, ইচ্ছা বা অনিচ্ছার জন্য তুমি কারো কাছে জবাবদিহি করো না, তথাপি তুমি কুরআনের অন্যত্র বলেছ, মানুষ যা ভোগ করে তা তার দুই হাতের কামাই। সুতরাং আমি ধরে নিচ্ছি, আমার আজকের এই অধঃপতন কিংবা রাজ্যহানি আমারই কোনো কর্মের খেসারত। অথবা আমার কাছ থেকে রাজ্যপাট ছিনিয়ে নিয়ে তুমি হয়তো আমাকে তোমার একান্ত সান্নিধ্যে নিয়ে তোমার মারেফতের জগতে বাদশাহী দান করার জন্য সুযোগ করে দিয়েছ এবং আমার প্রতি সম্ভবত এহসান করেছ।’
‘ইয়া আল্লাহ! আমি যদি জমিনের দিকে তাকাই তবে তোমার বান্দাদের আহাজারি, আকুতি এবং আর্তচিৎকারে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। আবার আমি যদি তোমার আকাশ, পাহাড়, সমুদ্র, বনভূমি অথবা বিশাল বালুকাময় তপ্ত মরুভূমির দিকে তাকাই তাহলে রাজ্যহানিকে এক ধরনের উত্তম নিয়ামত এবং তোমার আশীর্বাদ হিসেবে দেখতে পাই। তোমার জমিনের এবং তোমার আসমানে তুমি যে নিদর্শনগুলো সৃষ্টি করে রেখেছ তা দেখে আমার দুর্বল মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। আমার মধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্ব, অস্থিরতা এবং মাঝে মধ্যে নিজের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস প্রবলভাবে দোলা দিতে থাকে। আমি তোমার খোঁজে আকাশপানে হাত বাড়াই, আবার পরক্ষণেই তোমার জমিনের বান্দা-বান্দীদের আহাজারিতে ব্যাকুল হয়ে হাতে যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
‘হে আমার মালিক। তুমি আমার অন্তরের আকুতি, শরীরের শক্তি, মস্তিষ্কের বুদ্ধি এবং আমার সহযোদ্ধাদের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে বেখবর নও। বিগত দিনে আমরা সবাই মিলে শতচেষ্টা করেও সিংহাসনে আসীন ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে কোনো সফলতা দেখাতে পারিনি। প্রতিটি যুদ্ধেই আমি এবং আমার সহযোদ্ধারা সমবেতভাবে পরাজিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। আমাদের মন-মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ কৌশল, শরীর ও সংযমের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও যুদ্ধের ময়দানের ধোঁকাবাজি, নীতিহীন ছলনা এবং তোমার দেয়া রাষ্ট্রশক্তির দানবীয় তাণ্ডব ও রাষ্ট্রীয় অর্থের কাছে আমি বারবার প্রতারিত হয়েছি। তুমি যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে বলেছ, যে অবিচার প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছ এবং যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করতে বলেছ; তা নিজের জন্য অবশ্যকর্তব্য মনে করে একটি অসমযুদ্ধে জড়িয়ে নিজেরা ধ্বংসের কবেল পড়েছি। তদ্রুপ প্রতিপক্ষকে আরো দাম্ভিকতা, আরো নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা প্রদর্শনের ক্ষেত্র বানিয়ে দিয়েছি।’
‘ইয়া আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার ক্রীতদাস। আমার কোনো অধিকার নেই তোমাকে প্রশ্ন করার। নিজের দুর্ভোগ-দুর্দশা নিয়ে আফসোস বা হাপিত্যেশ করার এখতিয়ারও আমার নেই। তোমার রাজ্যপটে কে ক্ষমতায় বসবে তা নিয়েও আমার পছন্দ বা অপছন্দের কোনো সুযোগ নেই। তোমার রাজ্যে তুমি যাকে ক্ষমতায় বসিয়েছ তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও তুমি বেখবর নও। ক্ষমতাধরদের শায়েস্তা অথবা শাসন করার জন্য তুমি কারো মুখাপেক্ষী নও। আমার প্রতি তোমার হুকুম সম্পর্কে আমি যতটুকু বুঝি তাতে প্রতীয়মান হয় যে, আমি কেবল আমার মতো অথবা আমার সমপর্যায়ের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু তুমি যদি আমার প্রতিপক্ষকে রাষ্ট্রশক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতা দিয়ে সাহায্য করো এবং আমাকে সাধারণ নিরস্ত্র ক্রীতদাস হিসেবে কোনো নিদর্শন ছাড়া রাষ্ট্রীয় দানবদের মুখোমুখি করে দাও, তবে অনিবার্য ধ্বংস ছাড়া পৃথিবীবাসী কিছুই দেখবে না।’
‘হে উত্তম বিচারক! সুদূর অতীতে তুমি প্রবল প্রতাপশালী ফেরাউনের বিরুদ্ধে হজরত মুসা আ:কে পাঠিয়েছিলে অত্যন্ত স্পষ্ট ও শক্তিশালী নিদর্শন দিয়ে। তুমি তোমার আপন মহিমা দিয়ে বনি ইসরাইলের মনে হজরত মুসার প্রতি আনুগত্য এবং ফেরাউনের প্রতি ঘৃণা তৈরি করে দিয়েছিলে। তুমি মুসা আ:কে দর্শন দান করে আশ্বস্ত, মোজেজা দান করে শক্তিশালী এবং ফেরাউনের মনে প্রবল ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করে সেই জমানার ন্যায় প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের ময়দানকে তোমার অনুগত বান্দাদের জন্য অনুকূল বানিয়ে দিয়েছিলে।
ফলে তারা বিজয়ী হয়েছিল। তুমি তোমার আপন কৌশলে এবং কর্তৃত্বে তোমার কোনো বান্দার সাহায্য ছাড়াই কওমে আদ, কওমে ছামুদ, কওমে সালেহ ইদ্যাদি প্রবল ক্ষমতাধর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে জমিনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলে। তুমি দুর্দান্ত অহঙ্কারী ও নিকৃষ্ট পাপী আবরাহাকে ধ্বংস করেছিলে আবাবিল পাখি দিয়ে। ইয়া আল্লাহ! তুমি তোমার সার্বভৌম ক্ষমতা তখনই প্রয়োগ করেছিলে যখন তোমার কিছু বান্দা-বান্দী তোমার দেয়া রাষ্ট্রক্ষমতা অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে মজলুম ও শক্তিশালী মানুষকে ধ্বংস করেছিল।’
‘হে আমার রহমান! হে আমার রাহিম! রাজ্যহারা হওয়া সত্ত্বেও আমি আমার সর্বশক্তি নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আজ আমি সর্বস্বান্ত। যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার মতো কোনো শক্তিই আমার অবশিষ্ট নেই। কোনো কৌশলই রাষ্ট্রশক্তির দানবদের সামনে দাঁড়াতে পারছে না। এ অবস্থায় আমি আমার সব কিছু তোমার নিকট সমর্পণ করে তোমার ফয়সালার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখতে পাচ্ছি না। তুমি তোমার আপন কুদরত দিয়ে মজলুমকে রক্ষা করো এবং যারা তোমার দেয়া রাজ্য ও রাষ্ট্রক্ষমতাকে নিজেদের অর্জিত সম্পত্তি মনে করে তোমাকে ভুলে গেছে অথবা তোমাকে উপেক্ষা করার দুঃসাহস দেখিয়ে নিরন্তর দম্ভ করে বেড়াচ্ছে, তাদের ব্যাপারে তুমি এমন কিছু করো যাতে বর্তমান জমানার মজলুমদের অন্তর শীতল হয়ে যায় এবং অনাগত দুনিয়ার বাসিন্দারা সতর্ক হওয়ার সুযোগ পায়।’
উল্লিখিত কাহিনীর মতো না হলেও প্রায় সমপর্যায়ের ঘটনা পৃথিবীর অনেক দেশেই একের পর এক ঘটে চলে এবং নিয়তির নির্মম বিচারে অন্যায়কারীরা এমনভাবে বিনাশ হয়ে যায়, যেখান থেকে আর কোনো দুরাচার বংশবদ পয়দা হওয়ার সুযোগ থাকে না। ডা: মাহাথির মালয়েশিয়ার রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে আত্মসমালোচনা করতে গিয়ে বলেন- আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো, আমি আমার যোগ্য উত্তরাধিকারী সৃষ্টি করতে পারিনি। আমার সাথে দর্ঘি দিন ধরে যারা সততা, নিষ্ঠা ও ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে কাজ করেছেন; তাদের মধ্য থেকে আমি যখনই কাউকে আমার উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছি তখনই নিয়তির ফাঁদে আটকা পড়ে গেছি। নাজিব রাজাক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে সারা দেশে মিস্টার ক্লিনম্যান হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আমি নিশ্চিন্তে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে বসিয়ে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার পরই তার আসল রূপ প্রকাশ হতে থাকে। বর্তমানে তিনি পৃথিবীর সেরা দুর্নীতিবাজ সরকারপ্রধান হিসেবে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাটের যে নজির সৃষ্টি করেছেন, তা অতীতকালে কোনো দেশে কখনোই ঘটেনি।
২০১৫-১৬ সালের উল্লেখিত বক্তব্য রাখার সময় ডা: মাহাথির মোহাম্মদ তার নিজ দেশে মজলুম হয়ে পড়েছিলেন। তার সব সম্ভাবনা, সব যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা তার জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আরো কিছু দিন এভাবে চললে তাকে হয়তো জেলে গিয়ে ইতিহাসের দায় মেটাতে হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে একের পর এক অলৌকিক ঘটনা ঘটতে থাকে। যার ফলে তিনি ৯৩ বছর বয়সে পুনরায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বিশ্বরাজনীতিতে নজিরবিহীন দৃষ্টান্তের জন্ম দেন।
২০১৮ সালের মে মাসের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ প্রসঙ্গে ডা: মাহাথির যেসব কথা বলেছেন তা ইতোমধ্যে বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলেছে। তিনি তার বিজয়কে তিন মহিলার সুমধুর সম্মিলনে দুই পুরুষের বিজয় বলে সম্বোধন করেছেন। এ বিষয়ে আগামীতে সুযোগ পেলে হয়তো বিস্তারিত লিখব। আজকের নিবন্ধে ডা: মাহাথিরের সাম্প্রতিক বিজয়ের ফলে সৃষ্ট উৎকট ঝামেলা সম্পর্কে তার সকৌতুক মন্তব্য এবং নির্বাচন-পূর্ববর্তী মনমানসিকতা সম্পর্কে তার আত্মকথন সংক্ষেপে কিছু বলে নিবন্ধের ইতি টানব।
ডা: মাহাথির বলেন- ‘নির্বাচনের এক দিন আগেও আমি কল্পনা করতে পারিনি যে, আমাদের জয় হবে। ক্ষমতাসীন সরকার পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের তাঁবেদার বানিয়ে ফেলেছিল। সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নাজিবের দুষ্ট বুদ্ধি ও কুকর্মের হাতিয়ার হিসেবে অপকর্ম করতে করতে এমন দক্ষতা অর্জন করেছিল; যার ফলে আমি অসম্মানজনক পরাজয় এবং নির্বাচন-পরবর্তী দুর্ভোগ-দুর্দশা ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। নির্বাচনের সময় আমি এবং আমার ঘনিষ্ঠজনেরা পরাজয় আতঙ্কে এমন হেঁয়ালিপনা শুরু করি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। আমরা আমাদের সম্ভাব্য পরিণতিকে অপরিহার্য মনে করে নিজেদের ভয়-আতঙ্ক কাটিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠি। আমরা যেহেতু ক্ষমতায় আসব না, সেহেতু নির্বাচনী ইশতেহারে বিভিন্ন লোভনীয় ও চিত্তাকর্ষ জনকল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনতার মাঝে স্বপ্নের জোয়ার বইয়ে দেই এবং সেই স্বপ্নের ঘোরের মধ্যে হঠাৎ জেগে উঠে দেখতে পাই- প্রধানমন্ত্রী গেছি।
লেখখ : সাবেক সংসদ সদস্য
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা