২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উত্তপ্ত হবে দক্ষিণ এশিয়া?

- ছবি : সংগৃহীত

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার উত্তাপ উত্তেজনা সম্ভবত আর ঘনীভূত হবে না। ভারতের লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় পর্বের ঠিক আগে আগে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো ও এর আশপাশে তিনটি গির্জা ও হোটেলে বিধ্বংসী সন্ত্রাসীর হামলার পর আতঙ্ক আবারো ঊর্ধ্বমুখী রূপ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশে তার নাগরিকদের সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে সন্ত্রাসী হামলা ঘটতে পারে।

শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলার পর একটি ক্ষুদ্র উগ্রবাদী সংগঠনকে এজন্য দায়ী করা হয়েছে। এর পরপরই আইএস এর দায় স্বীকার করেছে। এই উগ্রবাদী সংগঠন বলেছে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ও সিরিয়ায় হামলার প্রতিশোধ নিতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলাটিতে বিভিন্ন দেশের ৩৬০ জন নিরপরাধ নাগরিক নিহত হয়েছেন।

এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কে নাতি ৯ বছরের শিশু জায়ানও রয়েছে। ২৬ জন বিদেশী এই হামলায় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো পাঁচ শতাধিক যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর।
শ্রীলঙ্কার সরকার এ সন্ত্রাসী হামলার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ করেনি। তবে আইএস দায় স্বীকার করার আগেই দেশটির একটি ক্ষুদ্র-মুসলিম সংগঠন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের যোগসাজশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলা ঘটতে পারে বলে নানা ধরনের জল্পনা ও গোয়েন্দা তথ্যকে সরকার অজ্ঞাত কারণে গুরুত্ব দেয়নি। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেও এ ধরনের হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন বলে দেশটির পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে বিস্ফোরণের দুই ঘণ্টা আগেই শ্রীলঙ্কাকে সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল ভারত। নির্দিষ্ট করে গির্জায় বিস্ফোরণ হতে পারে, এমন বার্তাও দিয়েছিল ভারত। খোদ শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণের দুই ঘণ্টা আগেই ভারতীয় গোয়েন্দারা শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। ভারতীয় গোয়েন্দারা নির্দিষ্ট করে বলেন, গির্জায় বিস্ফোরণের মতো হামলা হতে পারে। হামলাকারীরা শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ এবং বিদেশীদের সাথে মিশে রয়েছে বলেও সাবধানবাণী দেয়া হয় শ্রীলঙ্কাকে।

শ্রীলঙ্কায় নৃশংসতম সন্ত্রাসী হামলার জন্য ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজেবর্ধনে। বলা হচ্ছে, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চের হামলার প্রতিশোধ নিতেই ওই হামলা চালানো হয়! তবে বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর জেসিন্দা আরডার্ন। তার কার্যালয় জানিয়েছে, ক্রাইস্টচার্চে মসজিদের হামলা ও শ্রীলঙ্কার ইস্টারে বোমা হামলার সাথে সম্পৃক্ততা নিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কিউই প্রধানমন্ত্রী অবগত রয়েছেন, যদিও এ ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো গোয়েন্দা তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্ট চার্চের হামলার প্রতিশোধ নিতেই হামলা ঘটে থাকার সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়ে বিক্রমাসিংহে বলেন, ক্রাইস্টচার্চে হামলার আগেই শ্রীলঙ্কার এ বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

শ্রীলঙ্কার হামলা ঘটার কিছু পরেই ইসরাইলি সাইট থেকে দাবি করা হয়, এটি ইসলামি জঙ্গিদের কাজ! এর ধারাবাহিকতায় পরে সাইট ইনটেলিজেন্স থেকে একই দাবি করা হয়, তবে কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি! সাইট ইন্টেলিজেন্স চালান রিটা কাটজ নামে এক ইরাকি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ইহুদি মহিলা, তার বাবা ছিলেন ইসরাইলের গোয়েন্দা। অনেকে প্রশ্ন করেন, তারা আইএসের সব হামলার খবরাখবর জানাতে পারে, অথচ ওইসব ই-মেইল কোত্থেকে আসে, কারা চালায়- তাদের ধরতে পারে না? এখানেই বড় প্রশ্ন লুকিয়ে থাকতে পারে আইএস-এর পেছনে কারা।

সোস্যাল মিডিয়ার এক বিশ্লেষণে প্রবাসী শামসুল আলম লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কায় প্রভাব বজায় রাখা নিয়ে চলছে চীন-ভারতের প্রচণ্ড টানাটানি। বিশেষ করে, সহসাই শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দর হাম্বানটোটার দখল চলে যাবে চীনের হাতে, সেটা থামাতে ভারত কি বসে থাকবে? এশিয়ার এই দুই আঞ্চলিক পরাশক্তির আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে স্থানীয় লোকদের ভাড়া করে এমন কাণ্ড ঘটানো মোটেই অসম্ভব না।’ তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘তৌহিদ জামাত’ নামক অখ্যাত কোনো সংগঠনের পক্ষে কি এত বড় বড় হামলা চালানোর মতো লোক-লস্কর এবং হামলার উপকরণ ও আয়োজন করা সম্ভব? এত নিরাপত্তা বেষ্টনী শিথিল করে হামলা চালানোর যোগ্যতা রাখে তারা? তাদের সামর্থ্য সম্পর্কে কারো কিছু জানা আছে কি? শ্রীলঙ্কা নিয়ে বড় বড় শক্তিধরদের স্বার্থ ও সঙ্ঘাত সক্রিয় রয়েছে। হামলার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াইকে বিবেচনায় নেয়া শ্রেয়।

শ্রীলঙ্কার এ ঘটনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব যে পড়বে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশটির ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু মুসলিম এক সময় বেশ সুস্থির ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ছিল। বিশেষত তামিল বিদ্রোহের অবসানের পর থেকে বৌদ্ধ উগ্র সংগঠন বুদ্ধ বালা সেনার মুসলিমবিরোধী উগ্রবাদী তৎপরতা শুরু করার আগ পর্যন্ত তারা সামাজিকভাবে স্বস্তির মধ্যে ছিল। এখন উগ্রবাদী বৌদ্ধ ও তামিল দুই জনগোষ্ঠীর ক্রোধের শিকার হতে পারে শ্রীলঙ্কার মুসলিমরা।

প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের সরকারকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বরখাস্ত করার পর এক টালমাটাল অবস্থার মধ্য দিয়ে পার হয় দেশটির বেশ কয়েক মাস। এ সময় দক্ষিণের তামিল ও মুসলিম এমপিদের সমর্থন বিক্রমাসিংহের সরকারকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দেশটিতে প্রাদেশিক ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও সমাগত। এ বছর প্রাদেশিক ও পরের বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচনের আগে যে ঘটনা ঘটল তার প্রভাব কতটা পরবর্তী পরিস্থিতিতে পড়ে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এর ফল দেশটির রাজনীতি এবং অর্থনীতি উভয়ের ওপরেই পড়তে পারে।

সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা শুধু শ্রীলঙ্কায় সীমিত থাকবে না বলেও সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী হামলার একটি নিয়মিত লক্ষ্যবস্তু হয় পাকিস্তান। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ হওয়ার পর এ হামলার ঝুঁকি আরো বাড়ছে। বেলুচিস্তানে সাম্প্রতিক এক সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ জনের মতো পাকিস্তানি নিহত হয়েছে যাদের ১০ জনই ছিল পাকিস্তান নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইরান থেকে এসে এ হামলা চালিয়েছে বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসলামাবাদের দাবি অনুসারে এসব সন্ত্রাসী হামলার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে। তারা কোনো সময় আফগানিস্তান, কোনো সময় ইরানের ভূমি ব্যবহার করে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। ইরানেরও পাল্টা অভিযোগ রয়েছে, ইরানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পাকিস্তানের ভূমি ব্যবহারের ব্যাপারে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডোর চালু হওয়া এবং করাচি উপকূলে অন্যতম বৃহৎ তেল ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনার কারণে দেশটি আবার বৈশ্বিক দৃষ্টির কেন্দ্রে চলে এসেছে। এতে এক দিকে পাকিস্তানের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তনের সম্ভাবনা যেমন দেখা দিয়েছে, তেমনিভাবে একই সাথে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিও বেড়েছে। ভারতের লোকসভা নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ ঝুঁকি উচ্চ পর্যায়েই থেকে যাবে।

ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচন নানা কারণেই ছিল বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। আগেরবার বিপুল ভোটে জয়ী হলেও এবার নতুন করে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে বিজেপির সামনে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদি আগেরবার ‘আচ্ছে দিন’, আর কর্মসংস্থানের যে স্লোগান দিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে আবেগ-উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিলেন এবার তা অনেকটাই নৈরাশ্যে রূপ নিয়েছে। নিম্নবিত্ত ও অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষ বিজেপি থেকে অনেকখানি মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় উগ্র জাতীয়তাবাদ মোদির পালে কিছুটা হলেও হাওয়া লাগিয়ে বৈতরণী পার হতে সাহায্য করতে পারে। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি থেকে সুবিধা আশানুরূপ পাওয়া যায়নি।

শ্রীলঙ্কার মতো নিকট প্রতিবেশী দেশে সন্ত্রাসী হামলায় বিপুল নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি মোদির সংশয়ী ভোটারদের অধিকতর জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তৃতীয় দফার পর চতুর্থ ও পঞ্চম দফা নির্বাচনে যদি মোদি ক্ষমতায় থাকার ব্যাপারে নিশ্চিত কোনো সম্ভাবনা দেখতে না পান তাহলে আরো ভয়ঙ্কর কিছু খোদ ভারতেই ঘটে কি না সে আশঙ্কা অনেকেরই রয়েছে। হয়তো এ ধরনের অনাহূত অশান্তি থেকে পুরো অঞ্চলকে রক্ষার জন্য ভারতের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির বিজয় কামনা করে থাকতে পারেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। অবশ্য ইমরানের এই চাওয়া সত্যিই পূরণ হলে তার জন্য কাশ্মিরিদের কতটা মূল্য দিতে হয় তা নিয়ে আতঙ্কও রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সন্ত্রাসী হামলার উচ্চ ঝুঁকির দেশগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করা হয়েছে আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রের সতর্ক বাণীতে। এ জন্য বাংলাদেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন। এর আগে গুলশানের হোলি আর্টিজেন সন্ত্রাসী হামলার আগেও যুক্তরাষ্ট্র-অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলো এ ধরনের সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিল।

বৈশ্বিক সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কিভাবে সংগঠিত হয় এবং কিভাবে লক্ষবস্তুতে হামলার ঘটনা ঘটে তা এক অনুদঘাটিত রহস্যের বিষয়। উগ্রবাদী এসব গোষ্ঠীর সৃষ্টি ও বিস্তৃতি লাভের পেছনে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টতা থাকে বলে মনে করা হয়। আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চেষ্টায় যখন শাসন পরিবর্তনসহ গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জন করা যায় না, তখন গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো গোপন আঘাত হানার নেটওয়ার্ক বিস্তার করে। বড় দেশের এজেন্সিগুলো লক্ষ্য অর্জনে ছোট ও মাঝারি দেশের এজেন্সির সহায়তা নেয়। এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ক্ষমতার নানা সমীকরণে দর কষাকষি হয় অন্তরালে। সাধারণ মানুষ এসবের কমই জানতে পারে। তারা শুধু দৃশ্যমান ঘটনা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য ও পরিচয়ই জানতে পারে। যেসব দৃশ্যপট পরিকল্পনাকারীদের মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য অনেকটা সাজানো থাকে।

আইএস ও আলকায়েদার উগ্রবাদী চিন্তার বিস্তার এবং এতে উদ্বুদ্ধ কারা কিভাবে হয়েছে তা নিয়ে নানা রহস্য রয়েছে। তবে তারা যে ধরনের তৎপরতায় নিজেদের জড়িত করেছে তাতে সিরিয়া ইরাকের মতো বিভিন্ন অঞ্চলকে বিরান হতে দেখা গেছে। এর আশপাশের প্রতিটি দেশই নিরাপত্তা সঙ্কটে পড়েছে। আঞ্চলিকভাবে প্রভাবশালী সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক নানা ধরনের স্নায়ু ও প্রক্সিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। ইয়েমেনের মতো কয়েকটি রাষ্ট্রের কাঠামো অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।

কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রক শাসকেরা জনগণ থেকে অনেকখানি বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। কয়েকটিতে এখন এক ধরনের আগ্নেয়গিরির ঘূর্ণি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ইসরাইল তার মানচিত্রকে বিস্তৃত ও সুসংহত করে চলেছে। জেরুসালেম গোলান হাইটসের ওপর আমেরিকান সরব ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের নীরব সম্মতির পর এখন পশ্চিম তীরকে লক্ষ ঠিক করা হয়েছে। এরপর সিনাই গাজা ও জর্দানের একটি অংশের ওপর নেতানিয়াহু অ্যান্ড কোম্পানির দৃষ্টি পড়তে পারে। এর আগে পরিস্থিতিকে আরো অনুকূল করতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোতে অধিকতর অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সুদানে সিসির মতো একটি সামরিক জান্তাকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

তেমন কোনো সন্ত্রাসবাদের অরাজকতার আশঙ্কা কি দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে? নতুন করে সূচিত স্নায়ু যুদ্ধে সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াকে চীন তার প্রভাব বিস্তারের আঙ্গিনা হিসাবে নিয়েছে। পাকিস্তানের সাথে চীনের কৌশলগত বন্ধুত্বের ইতিহাস অনেক পুরনো। নেপালে চীনের প্রভাব অনেকখানি একতরফা হতে শুরু করেছে। শ্রীলঙ্কায় আগে থেকেই চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। দেশটির পরিস্থিতির ওপর তাদের পর্যবেক্ষণও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কায় হামলার ব্যাপারে গ্লোবাল টাইমস এক সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করেছে, ‘সারা বিশ্বের ধর্মীয় প্রতিশোধের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বাড়ছে। মার্চে নিউজিল্যান্ডে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে হত্যাযজ্ঞ চলে, তাতে গোটা বিশ্ব নাড়া খেয়েছে। ধর্মীয় প্রতিহিংসা বাড়ছে, এবং বহু ধর্মের দেশগুলোর জন্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখাটা এবং চরমপন্থীদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোটা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে যে, জনগণের ক্ষোভ ও বিভ্রান্তিকে পুঁজি করে ধর্মীয় চরমপন্থা ছড়াতে পারে। সমস্যাটা এখনো বৈশ্বিক মনোযোগ কাড়েনি। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো চরমপন্থা সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করে, সেটাই এখন পর্যন্ত সর্বত্র রাজত্ব করছে। তারা মূলত পশ্চিমাবিরোধী চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিরুদ্ধে যেসব ধর্মীয় চরমপন্থী গ্রুপ রয়েছে, সেগুলোর অনেককে তারা মুক্তি ও গণতন্ত্রকামী আখ্যা দিয়ে থাকে।’

গ্লোবাল টাইমস আরো বলেছে, ‘বিগত কয়েক বছরে চীন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় চরমপন্থা দ্বারা তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আলকায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মতো সংগঠনগুলোর প্রভাব মোকাবেলা করতে সফল হয়েছে চীন। এ ক্ষেত্রে চীনের অভিজ্ঞতাটা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু পশ্চিমা শক্তি নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই আমাদের, কারণ শব্দের চেয়ে শক্তিশালী হলো বাস্তব তথ্য এবং চীনের জন্য শান্তি আর স্থিতিশীলতা হলো সবচেয়ে মূল্যবান।’

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্রের এ বক্তব্য গভীরভাবে পাঠ করলে এশিয়ায় যে পাশ্চাত্যের সাথে একটি বেইজিংয়ের স্নায়ু সঙ্ঘাত চলছে তা অস্পষ্ট থাকবে না। শ্রীলঙ্কার ঘটনার পেছনে চীনের অর্থনৈতিক আধিপত্য ঠেকানোর কোনো লক্ষ্য যে নেই সেটি নিশ্চিত করে বলার কোনো উপায় নেই। বাংলাদেশ এখন চীনা প্রভাব বলয়ের মধ্যেই ঠাঁই নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এটাকে দক্ষিণ এশিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী শক্তিগুলো কতটা সহজভাবে নেবে, সেটিই বড় প্রশ্ন। বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভাবনা নিয়ে সবাই নেতিবাচক সিদ্ধান্তেÍ আসতে চায়। এ ধরনের অবস্থায় আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক স্বার্থের টানাপড়েনে কেউ ভিন্ন পথে ইন্ধন জোগাতে শুরু করেছে কি না- সেটিই এখন বড় ভয়। এ ভয় আরো বাড়ছে বড় বড় শক্তিগুলো তাদের নাগরিকদের জন্য পৌনঃপুনিকভাবে সতর্কবাণী উচ্চারণ করায়।

এখানে ধর্ম কোনো অ্যাজেন্ডা নয়, অ্যাজেন্ডা হলো আধিপত্য ও শৃঙ্খল প্রতিষ্ঠা। কে না জানে, নিরীহ মানুষকে হত্যা করা ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। কোনো ‘জঙ্গি’ মুসলমান হতে পারে না। হত্যা করে আর যা হোক, ইসলামের উপকার করা যায় না, আল্লাহর সান্নিধ্যও লাভ করা যায় না। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা যেমন খ্রিষ্টান সম্প্রদায় করেনি, করেছিল এক সন্ত্রাসী; তেমনি কলম্বোর হামলাও মুসলমানদের কাজ নয়, সন্ত্রাসীদের কাজ। সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই।

[email protected]


আরো সংবাদ



premium cement