২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

খেলা

-

খেলা... খেলা... খেলা...। এক বিরাট প্রীতি হা-ডু-ডু খেলা। পবিত্র ঈদের পরদিন বিকেল ৫টায় এক বিরাট হা-ডু-ডু খেলা। স্থান : ফকির সাহেবের চাতাল। ওই খেলায় অংশ গ্রহণ করবেন বিবাহিত দল বনাম অবিবাহিত দল। ওই খেলায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বিবাহিত দলে খেলবেন রাজশাহী বিভাগের ২ বারের সাবেক চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় আহমেদ জাকারিয়া ওরফে জামাই জাকারিয়া। খেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পৌর চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। খেলা.... খেলা... খেলা...।

ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে এ এলাকায় এই হা-ডু-ডু খেলা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি বছর এই হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হয়। ১৮ বছর ধরে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। খেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইরা আসেন বেড়াতে। আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম হতে শত শত মানুষ আসে এই খেলা উপভোগ করতে। আহমেদ জাকারিয়া এই খেলায় বিবাহিত দলে অতিথি খেলোয়াড়। ঈদ উপলক্ষে শ্বশুরবাড়ি এসেছেন বেড়াতে। সবার শ্রদ্ধাভাজন শাকের আলী মল্লিক সাহেবের জামাই। এলাকার লোকজন খেলায় জাকারিয়াকে পেয়ে মহাখুশি। তারা আবদার করেছেন জামাইকে কিন্তু খেলতেই হবে। চার বছর আগে জাতীয় পর্যায়ের হা-ডু-ডু খেলায় জাকারিয়া রাজশাহী বিভাগে পর পর দুই বার সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জাকারিয়ার শাশুড়ি খেলার কথা শুনেই জামাইকে নিষেধ করেছেন। দেখ বাবা, এ খেলাটা আমার মোটেই পছন্দ না। মানুষ হয়ে মানুষকে গুঁতিয়ে মারতে চায়। এ আবার ক্যামন খেলা। তা ছাড়া তুমি চার বছর আগে খেলা ছেড়ে শহরে থাকো। গ্রামের পরিবেশ আলাদা। হুট করে গ্রামে এসে এভাবে খেলতে নামাটা আমার পছন্দ হচ্ছে না। কোথায় আঘাত লাগবে তার কোনো ঠিক আছে? জাকারিয়া আমতা আমতা করে বলে, আম্মা, একদিনই তো সমস্যা হবে না আম্মা। তা ছাড়া আমার খেলার অভিজ্ঞতা আছে, খেলা ছেড়ে দিলেও একেবারে ভুলে যাইনি। দেখো তুমি যেটা ভালো মনে কর। তবে সাবধান। খুব সাবধান।

রিমিদের বাড়িতে এল টাইপের দোতলা সাদা বিল্ডিং। গ্রামে এখনো বিল্ডিং সংখ্যা খুব কম। দোতালার কোনার রুমটায় জাকারিয়া আর রিমি। রিমিরা পাঁচ ভাই এক বোন। রিমি বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। পরিবারের সবার আদরের। গ্রামে দিনে কয়েকবার বিদ্যুৎ যায়। একবার গেলে আর আসতে চায় না। এখন বিদ্যুৎ নেই। ভ্যাপসা গরম পড়েছে। জাকারিয়ার গা আঠা আঠা হয়ে গেছে। রিমি হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে জাকারিয়াকে। তুমি আম্মার কথা মেনে নাও। আমার ভয় হয়, কোন দরকার আছে এই খেলার? চারদিকে গাঢ় অন্ধকার। সুনসান নীরবতা। ঝিঁঝিঁ পোকারা দলবেঁধে ডাকছে। জাকারিয়া রিমির বাম হাতটা ধরে আছে। বাড়ির পাশে বড় পুকুর। শান বাঁধানো ঘাট। জানালা দিয়ে পুকুর পাশ থেকে ঝিরঝির বাতাস আসছে। জাকারিয়া রিমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। জাকারিয়া বলে, চলো রিমা ঘাটে গিয়ে বসি ! রিমা বলে, মাথা খারাপ নাকি তোমার! পোয়াতি বউ নিয়ে এই অন্ধকার রাতে পুকুর ঘাটে! মা বকা দেবে।

 হঠাৎ নিচে নাজমুলের আওয়াজ পাওয়া যায়। চাচী,ও চাচী, আপা-দুলাভাই কোথায়? জরুরি কথা আছে। হন্তদন্ত হয়ে নাজমুল দোতলায় উঠে আসে। জাকারিয়া চিল্লিয়ে বলে ওঠে, আরে শালা মিয়া কী খবর? নাজমুল বলে দুলাভাই একটু নিচে নেমে আসেন। নাজমুল জাকারিয়াকে পুকুর ঘাটে নিয়ে যায়। 

নাজমুল বলে, দুলাভাই কাল আপনি খেলতে নামবেন না। প্লিজ। কেন কী হয়েছে? আমার এক বন্ধু আমাকে একটা গোপন খবর দিয়েছে। কী খবর? অবিবাহিত দলে কালু খেলবে। ও খুব খারাপ ছেলে। একসময় ওকে সবাই টাইগার কালু বলে ডাকত। এখন বলা হয় কালু পাঁঠা। কিছু দিন আগে এক হা-ডু-ডু খেলায় পাশের গ্রামের এক ছেলেকে গুঁতা মেরে আহত করেছিল। ছেলেটা দশ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিছু মনে করবেন না দুলাভাই ও শালা খুব খারাপ। এলাকার যুবতী মেয়েদের ডিস্টার্ব করে। সালিশে জুতার বাড়িও খেয়েছে। ও রিমি আপুকেও বিরক্ত করত। মিয়াভাই একবার ওকে ধরে রাম ধোলাই দিয়েছিল। ও নাকি আজ বাজারে বলেছে আপনাকে দেখে নেবে। আপনাকে মেরে ও ভালোবাসার প্রতিশোধ নেবে। তাই নাকি? হ্যাঁ দুলাভাই! আপনি বরং খেলা প্রত্যাহার করে নিন। প্লিজ। না নাজমুল আমি খেলব। সবাইকে কথা দিয়েছি। তা ছাড়া আমি বিষয়টা হালকাভাবে নিয়েছিলাম। এখন আমি সিরিয়াস। খুব সিরিয়াস। ও আমার কিছুই করতে পারবে না। আমি জানি কিভাবে খেলতে হয়। তুমি বিষয়টা রিমি বা অন্য কাউকে জানিও না। ওকে।

বিকেল ৫টায় খেলা শুরু হবে। ৪টার মধ্যে ফকির সাহেবের চাতাল কানায় কানায় দর্শক পূর্ণ। কোর্টের পাঁচ ফিট বাইরে বাঁশ দিয়ে বাউন্ডারি দেয়া হয়েছে। পনেরো মিনিট আগে পাঁঠা কালু কোর্টে নেমে দর্শকদের শরীর কসরত দেখাচ্ছে। সবাই ব্যাপক আনন্দ পাচ্ছে। জামাইবাবুর বিবাহিত দল পাঁচ মিনিট আগে কোর্টে নামে। দর্শকেরা জামাই জামাই বলে জাকারিয়াকে অভ্যর্থনা জানায়। জাকারিয়া হাত নেড়ে সবার অভ্যর্থনা গ্রহণ করে। স্কোর বোর্ডে আছেন মন্টু। প্রস্তুত অভিজ্ঞ রেফারি মোহাম্মদ আলী।

রেফারি মোহাম্মদ আলীর বাঁশি বিকট শব্দে বেজে ওঠে। প্রথম ডাক দিবেন অতিথি খেলোয়াড় জাকারিয়া। জাকারিয়া ডাক দেয়। কোর্টের মাঝখান হতে। তার শিকারি চোখ আজ সিরিয়াস। কালু পাঁঠা যে পাশে থাকে সেই পাশেই ডাক দিয়ে পয়েন্ট নিয়ে আসে জাকারিয়া। মুহুর্মুহু করতালি। জামাই জামাই ধ্বনিতে মুখরিত মাঠ। পাঁঠা কালুর চোখ রাগে লাল হয়ে যায়। বিবাহিত দল ১৬ পয়েন্টে এগিয়ে। খেলা শেষ হতে আর দশ মিনিট বাকি। জাকারিয়া জানে বাবুকে সুযোগ দিলেই সে আক্রমণ করে বসবে। এবার সে কালুকে সুযোগ দিতে চায়। বেচারার অনেক ক্ষোভ। প্রস্তুত জাকারিয়া, প্রস্তুত কালু পাঁঠা। জাকারিয়া এবার ডাক দেয় বাবুর উল্টা পাশে। বাম পাশে কালু, জাকারিয়া ডাক দেয় ডান পাশে। জাকারিয়ার শিকারি চোখ পাঁঠার দিকে। সব শক্তি নিয়ে পাঁঠা ঝাঁপিয়ে পড়ে জাকারিয়ার ওপর। জাকারিয়া তার অভিজ্ঞ লাফ দিয়ে পাঁঠার মাথার ওপর দিয়ে নিজের কোর্টে এসে পড়ে। বিকট একটা আওয়াজ হয়। বাঁশে লেগে পাঁঠার মাথা ফেটে নাক মুখ বেয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। খেলা বন্ধ হয়ে যায়। কালুর মাথা জাকারিয়ার কোলের ওপর। কালু বির বির করে বলতে থাকে ভাই, আমাকে মাফ করে দেবেন। চোখ বড় বড় করে কালু তাকিয়ে থাকে জাকারিয়ার দিকে। কালুর মাথাটা জাকারিয়ার দিকে কাত হয়ে পড়ে যায়। জাকারিয়া কালুর চোখটা বন্ধ করে দেয়।

কেন্দ্রীয় প্রিয়জন

ঢাকা

 


আরো সংবাদ



premium cement