২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দুঃসাহসী

-

গহিন বন। বনের ভেতর টলটলে নীল জলের দীঘি। দীঘির একপাড়ে অত্যাচারী এক বাঘের বাস। অপর পাড়ে অন্য প্রাণীদের। অন্য প্রাণী মানে হরিণ, বাঘডাশা, বনবিড়াল, বুনোমোষ, ভালুক, বানর প্রভৃতি। আর গাছে গাছে হাজারো রঙ-বেরঙের পাখপাখালি। সবাই মিলেমিশে খুব সুখে আছে। এই বন তাদের পৃথিবী। এই বন ছাড়া কোথাও তাদের ভালো লাগে না। সুখে-দুখে একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। সবাই এক পরিবারের মতো। সমস্যা তাদের একটাই, বাঘের অত্যাচার। ভীষণ অত্যাচারী। সবার ওপর জুলুম করে। তার অত্যাচারে সবাই অতিষ্ঠ। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। একবার বনমোরগ সবাইকে নিয়ে মিটিং করেছিলÑ বাঘকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়! মিটিং করার দুই দিন পর থেকে বনমোরগ নিখোঁজ। সবার ধারণা, বাঘ বনমোরগকে গুম করেছে। ওর ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।
একদিন বনকুকুর ঝোপালো লেজ ছড়িয়ে খাটো দু’টি পা সামনে দিয়ে দীঘির জলের দিকে একমনে চেয়ে আছে। মাছের জলকেলি দেখছে। বিভিন্ন জলঘাসের মাঝে তিনটি সাদা শাপলা ত্রিভুজ হয়ে ফুটে আছে। মনে হয় ফোকলা দাঁতে হাসছে। দুটি রুই মাথা তুলে শাপলার পাপড়ি মুখে পুরে ডুব দেয়। কিছুক্ষণ পর আবার মাথা বের করে। ভাবুক বনকুকুর তা দেখে মুগ্ধ হয়। আচমকা এক থাপ্পড়ে দীঘির জলে ছিটকে পড়ে বনকুকুর। পেছন ফিরে দেখে সেই অত্যাচারী বাঘ। বনকুকুর কিছু বলার আগেই বাঘ গরগর করে বলতে লাগলÑ মনে হয় বনের রাজা তুই। রাজাধিরাজের মতো বসে আছিস। আমি পেছন দিয়ে যাচ্ছি খেয়ালই করলি না। আর একদিন যদি এরকম দেখি তোকে পিটিয়ে বনছাড়া করব। কথাগুলো ভিমরুলের মতো বনকুকুরের শরীরে হুল ফোটাল। বনকুকুর শরীরের চেয়ে মনে বেশি ব্যথা পেল। বনমোরগের কথা মনে পড়ে গেল। বনমোরগ ঠিকই বলেছিল। আমরা প্রতিনিয়ত মরছি। এর চেয়ে একদিন মরা ভালো। এত অপমান সহ্য করা যায়!
বনকুকুরের শরীরটা কদিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। রাতে ঘুম হয় না। কোনো কিছুতে রুচি নেই। সব সময় কী রকম যেন অস্থির অস্থির লাগে। বনের বড় হেকিম কালো ভালুক। তার চিকিৎসার অনেক সুনাম। কারো কিছু হলে সবাই তার কাছেই যায়। তবে তার সাক্ষাৎ পেতে কমপক্ষে দুই মাস লাগে। বনকুকুর অনেক চেষ্টা করে ভালুকের সাক্ষাৎ পেল। ভালুক জ্বলজ্বলে চোখে বনকুকুরের দিকে তাকাল। তার লেজ বনকুকুরের কানে ঢুকিয়ে দিলো। তার সব কিছুই গরমিল হয়ে যাচ্ছে। হিসাব মিলাতে পারছে না। এরকম কেন হলো! কিভাবে কথাটা বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ছলছল চোখে বনকুকুরের দিকে চেয়ে বলল, ‘তোমার সময় শেষ। তুমি আর তিন মাস বাঁচবে।’ সবুজের মায়া জড়ানো পৃথিবী চোখের পলকে ওলটপালট হয়ে গেল। মনের ভেতর বাউকুড়ানি ঝড় বয়ে গেল। বনকুকুর খুব কাতর কণ্ঠে বলল, ‘যে করেই হোক আমার রোগ সারিয়ে তোলো। তোমাকে আমি অনেক পুরস্কার দেবো।’ এবার ভালুকটি জলোচোখে তার দিকে চেয়ে বলল, ‘আমি আমার সমস্ত হেকিমি বিদ্যা নিয়ে অসহায়। এ কথা বলে কালো ভালুক উল্টো দিকে হাঁটা দিলো। বনকুকুর পেছন থেকে ডাকছে। ভালুক পেছন ফিরে তাকাল না।
আজ দিনটা খুব সুন্দর। ঝিরঝিরে বাতাসে গাছের পাতা নড়ে। দীঘির জলে তিরতিরে ঢেউ ওঠে। মাথার ওপরে ঝকঝকে নীল আকাশ। তাতে হালকা সাদা মেঘের আঁচড়। দীঘির এক কোণে কুঁজু সোনালু গাছে ঝাড়বাতির মতো লেব-হলুদ ফুল। দীঘির জলে প্রতিফলিত হয়ে অপরূপ শোভা তৈরি করেছে। পাশে সরল সবুজ পাতার শিউলি গাছ। কমলা-হলুদ-সাদা শিউলি ফুল দীঘির জলে টুসটুস করে ঝরে পড়ে। মাছেরা মুখে পুরে দৌড় দেয়। বনকুকুর নিমগ্ন হয়ে দেখে মুগ্ধ হয়। এই দীঘিকে নিয়ে তার কত স্মৃতি! স্মৃতিগুলো ঝাঁক বেঁধে দীঘির তিরতিরে নীলাভ জলে ডুবসাঁতার কাটে। তার অনেক দিন বাঁচতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তার আয়ু শিউলি ফুলের মতো। আর বেশি দিন নেই। সেও ঝরে পড়বে!
হঠাৎ বনবিড়ালের কান্না শুনে সম্বিত ফিরে পেল বনকুকুর। সে জিজ্ঞেস করল, ‘কাঁদিস কেন?’ এ কথা শুনে বনবিড়ালের কান্নার গমক আরো বেড়ে গেল। বাঘের দেয়া আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদতে লাগল। ছাতিম গাছের ডালে বসা ঝুঁটিবুলবুলও সাক্ষ্য দিলো। বলল, ‘বড় অন্যায়ভাবে মেরেছে তাকে।’ বনকুকুরের রক্তে একটা ঢেউ খেলে গেল। গর্জন করে উঠল। বলল, ‘চলো আমার সাথে। বনবিড়াল সাহস পাচ্ছে না। তার চোখে-মুখে আতঙ্কের ছায়া। বনকুকুর সাহস দিয়ে বলল, ‘মৃত্যুকে মেনে নিলে আর ভয় কিসের!’ বনকুকুর আগে। তার পেছনে বনবিড়াল। তাদের সাথে বানর আর বনমোরগও রওনা দিলো। বনকুকুর বাঘের সামনে গিয়ে গর্জন করে উঠল। বাঘ হকচকিয়ে গেল। এ কী! বনকুকুর পাগল হয়ে গেল নাকি! বাঘ একটা তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে বলল, ‘তোর কি মরার সাধ হয়েছে? এ কথা বলার সাথে সাথে বনকুকুর বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘের ওপর। বনকুকুরের ধারাল নখর দিয়ে খামছে ধরল বাঘকে। সাথে সাথে বনবিড়াল আর বনমোরগও ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘের ওপর। ঝুঁটিবুলবুল উড়ে এসে বাঘের চোখে ঠোকর বসিয়ে দিলো। বাঘ নিরুপায় হয়ে দিলো দৌড়। বনবিড়াল বলল, ‘বাঘের উচিত শিক্ষা হয়েছে। সে আর অত্যাচার করবে না। চলো, আমরা চলে যাই।’ তেঁতুলের ডালে ঠোঁট ঘষতে ঘষতে ঝুঁটিবুলবুল বলল, ‘তোমরা ভুল করো না। শত্রুকে সুযোগ দিতে নেই। তাকে বনছাড়া করো।’ এ কথা শুনে সবাই তাতিয়ে উঠল। তাদের সাথে আরো অনেকে যোগ দিলো। ধাওয়া করল বাঘকে। বাঘ কোনোরকমে জীবন নিয়ে পালাল। বনকুকুরকে ঘিরে সবাই উৎসব শুরু করল। বনকুকুরকে মাথায় নিয়ে নাচতে লাগল। বনকুকুর সবার উদ্দেশে বলল, ‘আমাদের আনন্দে ভেসে গেলে চলবে না। সদা সতর্ক থাকতে হবে। কেউ জ্বালাবে, কেউ জ্বলবে এ হতে দেয়া হবে না। আমাদের প্রতিবাদ করার সাহস থাকতে হবে। এ বন আজ থেকে সবার অভয়ারণ্য। আমরা একবার মরব। বারবার মরব না।’ বনকুকুরের প্রতিটি কথা একেকটি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি হয়ে সবাইকে তাতিয়ে দিলো।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসলামী ব্যাংক উল্লাপাড়া শাখার আরডিএস প্রকল্পের কেন্দ্র লিডারদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন প্রাইমারি পর্যায়ে ইসলাম শিক্ষার নতুন বই লেবানন থেকে আরো ৮২ বাংলাদেশী ফিরেছেন প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য ইনার হুইল ক্লাব অব উত্তরার উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা নীলফামারীতে সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্রেক ফেল ফেনী সীমান্তে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের কঠোরবিচার করতে হবে : অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ আইনজীবীর বিরুদ্ধে ‘ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিরোধ’ ডেইলি স্টারের সামনে নামাজ আদায় ও বিক্ষোভ ত্রিপুরায় ১২ বাংলাদেশী গ্রেফতার

সকল