২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট সুবিধার অপেক্ষায় এজেন্সি মালিকেরা

হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট সুবিধার অপেক্ষায় এজেন্সি মালিকেরা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপনের সুবিধার প্রতীক্ষায় রয়েছেন বেশ কিছু হজ এজেন্সি মালিক। এজেন্সিগুলোর মতে, তারা কিছু হজযাত্রীর নাম চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করলেও অসুস্থতাজনিতসহ নানা কারণে সেসব যাত্রী হজে যেতে পারছেন না। এরই মধ্যে ১০ শতাংশ হারে এই সুবিধা দেয়া হলেও তা নির্ধারিত সময়ের জন্য হওয়ার কারণে কিছু এজেন্সি তখন এই সুবিধা নিতে পারেনি। এখন এজেন্সিগুলো আরেক দফায় এই সুযোগ চায়। এই কারণে এজেন্সিগুলো এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করে তাসরিয়ার অনুমোদন নিতে পারছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ও গত কয়েক দিন কয়েক দফায় এজেন্সিগুলোকে তলব করে তাদের সর্বশেষ অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। গতকালও ধর্ম মন্ত্রণালয় এমন ২৮টি এজেন্সিকে ডেকেছিল। আজ আরো ১২টি এজেন্সিকে তলব করা হয়েছে। 

হাবের সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, আমরা শুরুতেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক হজযাত্রীকে রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপনের সুযোগ দেয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় দুই দফায় আমাদের হজযাত্রীদের ১০ শতাংশ করে রিপ্লেমেন্টের সুযোগ দিয়েছে। এখন যারা হজযাত্রীদের পাঠানোর ব্যাপারে তথ্য দিতে পারছে না তাদেরকে ডেকে প্রকৃত অবস্থা জানার চেষ্টা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। তিনি বলেন, রিপ্লেমেন্টের জন্য নতুন করে অনুরোধ করার তো কিছু নেই। আমরা আগেই অনুরোধ করে রেখেছি সেটি বিবেচনায় রেখে ধর্ম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করি। 

বেশ কয়েকটি এজেন্সি মালিক রিপ্লেসমেন্ট সুবিধার ব্যাপারে এই প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আগের বছর ১৫ শতাংশের বেশি রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হয়েছে তিন দফায়। এবারো এরই মধ্যে দুই দফায় সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু সময় নির্ধারিত থাকা কারণে পরে যাদের রিপ্লেসমেন্টের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য আবার সুযোগ দেয়া দরকার। এ ছাড়া দেখা গেছে অনেকে শতকরা হারে সে সংখ্যায় রিপ্লেসমেন্টের সুবিধা পেয়েছে তার প্রকৃত রিপ্লেসযোগ্য হজযাত্রীর সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। ফলে সে আরেক দফায় সুবিধার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাবের এক শীর্ষ নেতা বলেন, যারা নিবন্ধন করেছেন তাদেরই তো রিপ্লেসমেন্ট দেয়া হবে। এতে কোটা খালি থাকা বা সরকারের লাভ-লোকসানের কিছু নেই। বরং কোনো এজেন্সি তার হজযাত্রী পাঠাতে না পারলে তার বাড়ি ভাড়ার টাকা এমনকি বিমানের টিকিটের টাকাসহ ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। আর ওই সব হজযাত্রীর কোটাও খালি যাবে। ফলে সব কিছু বিবেচনা করে সর্বশেষ রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া উচিত বলেও তিনি মনে করেন। 

জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি অনুযায়ী মৃত্যু বা মারাত্মক অনুস্থতাজনিত কারণে নিবন্ধিত কেউ হজে যেতে না পারলে তার পরিবর্তে অন্য কাউকে হজে পাঠানোর জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় অনুমতি দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে এজেন্সিকে ওই হজযাত্রীর অসুস্থতার পক্ষে চিকিৎসকের সনদপত্র অথবা মৃত্যুর ক্ষেত্রে মৃত্যুর সনদপত্র জমা দিতে হবে। 
তবে সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন, নিয়মে যাই থাকুক, রিপ্লেসমেন্টের বিষয়টির ক্ষেত্রে এজেন্সিগুলোকে হজযাত্রীকে প্রতিস্থাপন করে নেয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়। এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। প্রতি বছর এই সুবিধা দেয়ার কারণে এজেন্সিগুলো প্রতি বছর এই সুবিধার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। 

গতকালও ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া ও তাসরিয়ার অনুমোদন না করায় প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য ২৮টি এজেন্সিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় ডেকেছিল। আজ আরো ১২টি এজেন্সিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে ডাকা হয়েছে। এর আগে ৫৫টি এজেন্সিকে ডেকে গতকালের মধ্যে তথ্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল। তাদের অনেকে গতকাল তাদের হজযাত্রীদের অবস্থা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে বলে জানা গেছে। 

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করার জন্য এবার সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার কারণে হজ ফ্লাইট নিয়ে কোনো ঝামেলা এখন পর্যন্ত হয়নি। আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হজযাত্রীদের নামে বিমানের টিকিট নিশ্চিত করাসহ হজ অফিসে পাসপোর্ট জমা দিয়ে ভিসা নিশ্চিত করার বিষয়টি আগেই নিশ্চিত করার অংশ হিসেবেই দফায় দফায় এজেন্সিগুলোকে ডেকে তাদের সর্বশেষ তথ্য জানছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এখনো কিছু এজেন্সির সৌদি আরবের বাড়ি ভাড়া ও তাসরিয়ার ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তথ্য না থাকায় প্রকৃত অবস্থা জেনে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও ওই কর্মকর্তা জানান। 

প্রসঙ্গত, সরকারি-বেসরকারি মিলে এ বছর বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ২০ হাজার হজযাত্রী যাওয়ার কথা। ৫৯৮টি বেসরকারি এজেন্সি এ বছর হজ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫৩ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব গেছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স হজযাত্রীদের পরিবহন করছে। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১০ আগস্ট পবিত্র হজ পালিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement