'মামলা না নেয়ায় লিজা আত্মহত্যা করেছেন'
- রাজশাহী ব্যুরো
- ২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৬:৫৬
মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক বললেন
২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
-
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির বলেছেন, স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন কলেজছাত্রী লিজা রহমান (২০)। কিন্তু পুলিশ মামলা না নেয়ায় থানা থেকে বেরিয়ে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে নিজের জবানবন্দীতে লিজা এ কথা জানিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের দেয়া তথ্যে গরমিল রয়েছে। শাহমখদুম থানার পুলিশের এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পুলিশের সরবরাহকৃত তথ্য-উপাত্ত যেমন- ভিডিও ফুটেজ, এজাহার, জিডির কপি এবং তাদের সাক্ষীর মধ্যে গরমিল পরিলক্ষিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরীর একটি রেস্টহাউজে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির এসব তথ্য জানিয়েছেন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী নগরীর শাহমখদুম থানার বাইরে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন লিজা। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ অক্টোবর তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। চার সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গত ২ অক্টোবর রাজশাহীতে এসে প্রথম দফায় তদন্ত করে। বৃহস্পতিবার তারা আবার রাজশাহী এসে শাহমখদুম থানার দুইজন পুলিশ সদস্য, পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের চারজন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চারজন, লিজার কলেজের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকজনের সাথে কথা বলেন। এরপর শুক্রবার সকালে রাজশাহীতে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির।
তিনি জানান, স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন লিজা রহমান। কিন্তু পুলিশ মামলা না নেয়ার কারণেই থানা থেকে বেরিয়ে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে নিজের জবানবন্দীতে লিজা এ কথায় জানিয়ে গেছেন। কিন্তু পুলিশের তদন্ত সে কথা বলছে না। লিজার গায়ে আগুন দেয়ার পর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার সালমা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তাদের দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই।
তবে মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির বলছেন, পুলিশের দেয়া তথ্যে গরমিল রয়েছে। কোন বিষয়ে গরমিল দেখা যাচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লিজার দায়ের করা যে জিডিটা দেখানো হচ্ছে, সেখানে লিজার স্বামী এবং শ্বশুরের নাম-ঠিকানা লেখা আছে। কিন্তু থানা এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পুলিশ সদস্যরা বলেছেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে লিজা বের হয়ে যান স্বামী এবং শ্বশুর-শ্বাশুড়ির নাম-ঠিকানা সংগ্রহের কথা বলেন। অথচ জিডিতেই সেটা উল্লেখ আছে। তবে এ সময় তিনি বিস্তারিত কিছু জানাতে রাজি হননি। তিনি বলেন, রোববার কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তখনই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি মাসুদ পারভেজ বলেন, লিজার অভিযোগ শোনা হয়েছিল। তার অভিযোগ মামলা আকারে রেকর্ডের নির্দেশও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি হঠাৎ করেই থানা থেকে বের হয়ে গায়ে আগুন দেন। লিজাকে নিয়ে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই বলেও দাবি করেন ওসি।
লিজা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রধানপাড়া এলাকার আবদুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে। তিনি রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। নগরীর পবাপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন। তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন (২০) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে। সাখাওয়াত রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। সাখাওয়াতও রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন। পরিবারকে না জানিয়েই লিজাকে বিয়ে করেন সাখাওয়াত।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, লিজার পালক বাবা একটি মামলায় কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় তার টাকা-পয়সার সঙ্কট চলছিল অনেকদিন ধরে। লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। অন্য দিকে স্বামীও তার দায়িত্ব নিতে চাইছিল না। ফলে দু’জনের দেখা হলেই ঝগড়া হতো। সম্প্রতি স্বামী তাকে নির্যাতন করেন। এ কারণে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন লিজা। সেখানে ডিউটি অফিসারকে তার অভিযোগ রেকর্ড করার জন্য অনেকবার অনুরোধ করেন। ডিউটি অফিসার তা না করায় ওসির সাথেও দেখা করেন লিজা। কিন্তু ওসি তাকে পাত্তা না দিয়ে থানা চত্বরেই পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে অভিযোগ দিতে বলেন।
পরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যান লিজা। সেখানেও কেউ তাকে পাত্তা দেয়নি। ফলে লিজা সেখান থেকে বের হয়ে থানা থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে মহিলা কারাগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গেটের সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন লিজা। তখন আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। লিজার শ্বাসনালীসহ শরীরের প্রায় ৬৪ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগে লিজার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন, শ্বশুর মাহবুবুল হক খোকন ও শাশুড়ি নাজনীন আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। লিজার বাবা মো: আলম বাদি হয়ে শাহমখদুম থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা