২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ফ্যান কারখানায় আগুনে নিহত প্রত্যেকের পরিবার পাবে ২৫ হাজার টাকা

ফ্যান কারখানায় আগুনে নিহত প্রত্যেকের পরিবার পাবে ২৫ হাজার টাকা - ছবি : সংগৃহীত

গাজীপুরের সদর উপজেলার বারিয়া ইউনিয়নের কেশরিতা গ্রামে লাক্সারি নামের একটি ফ্যান কারখানার সংঘটিত অগ্নিকান্ডে অন্তত ১০ শ্রমিক নিহত হয়েছে।  স্থানীয়দের কাছ থেকে নিহত পাঁচজনের নাম জানা গেছে। তারা হলো- রংপুরের গাছ বকুলতলা এলাকার তাজেল হোসেনের ছেলে ফরিদ (২০), কুমিল্লার আমির হোসেনের ছেলে মিলন (২০), সুমাইয়া আক্তার জান্নাত (২৭), শ্রীপুর উপজেলার মারতা সাতানীপাড়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে রাশেদ (৩৫) ও একই এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে শামীম (৩৫)। আগুনে পুড়ে লাশ বিকৃত হওয়ায় নিহত অন্যদের পরিচয় জানা যায়নি।

জয়দেপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ, ষ্টেশন অফিসার জাকারিয়া খান, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়,গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কেশরিতা এলাকায় একটি তিনতলা ভবনের ৩য় তলায় লাক্সারী ফ্যান কারখানার আর্মেচার সেকশনে রোববার সন্ধ্যায় ১৯ শ্রমিক কাজ করছিল। সন্ধ্যা পৌণে ৬টার দিকে হঠাৎ বৈদ্যুতিক সর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রাপাত হয়। দরজার সামনে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শ্রমিকরা আতংকিত হয়ে দিকবিদিক ছুটোছুটি শুরু করে। এসময় কয়েক শ্রমিক বাইরে বেরিয়ে এলেও আগুন ও ধোঁয়ার কারণে অন্য শ্রমিকরা কারখানার ভিতরের একটি কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। মুহুর্তেই আগুন পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করে। শ্রমিকরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়।

খবর পেয়ে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে প্রায় দেড়ঘন্টা চেষ্টার পর আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কক্ষের ভিতরে আটকা পড়ে ১০ শ্রমিক আগুনে পুড়ে নিহত হয়। লাশগুলো আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ায় বিকৃত হয়ে গেছে। ফলে তাদের পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। অগ্নিকান্ডের এ ঘটনায় হাসান ও আনোয়ার নামের দু’শ্রমিক আহত হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার প্রণয়ভূষণ দাস জানান, সামান্য দগ্ধ দুইজনকে এ হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের হাত, পা ও পিঠে সামান্য দগ্ধ হয়েছে। তারা হলো- গাজীপুর সদর উপজেলার কেশরিতা গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন (২০) ও একই উপজেলার যামুনা গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. হাসান (১৯)।

এদিকে ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারসহ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উর্ধতন কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিদর্শন করেন। অগ্নিকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক শত লোক ভিড় জমিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট শাহীনুর ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এসময় তিনি দাফন-কাফনের জন্য নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ারও ঘোষণা দেন। এছাড়াও শ্রমমন্ত্রণালয় থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব।

অপরদিকে কারখানার মালিক জাহিদ হাসান ঢালী তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারী নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দেন। এছাড়াও তাদের পরিবারকে আজীবন বেতনভাতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা জাকারিয়া বলেন, আগুনে তৈরী ফ্যান ও মেশিনপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে গেছে ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকান্ডে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান জানা যায় নি। প্রাথমিক আলামত দেখে মনে হচ্ছে ১০ জনই ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।

জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদুল ইসলাম বলেন, কারখানাটি তিন তলা। তবে দোতলা পর্যন্ত বিল্ডিং। এর উপরে টিনের শেড। পুরোটাই পুড়ে গেছে। ১০ জনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ কারখানার ভেতরে পাওয়া গেছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামছুন্নাহার বলেন, কারখানটিতে খুবই অব্যবস্থাপনা ছিল। উপরে টিনশেড ছিল। কারখানা থেকে বের হওয়ার দরজা ছিল একটি। আগুন লাগার পর সবাই পেছনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানেই দশজন পুড়ে মারা গেছেন। আহত হয়েছেন দুজন। কারখানার গাফিলতির কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তদন্ত কমিটি গঠন
আগুনের কারণ তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহীনুর ইসলাম জানান, তাকে প্রধান করে কমিটিতে একজন ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, একজন পুলিশের প্রতিনিধি, একজন শিল্প পুলিশের প্রতিনিধি ও একজন কারখানার প্রতিনিধি রয়েছেন। তদন্ত কমিটিকে আগামী ০৭ কার্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement