২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আদালতের দিকে তাকিয়ে বিএনপি

আদালতের দিকে তাকিয়ে বিএনপি - ছবি : সংগৃহীত

কারাগারে অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে বিএনপির দৃষ্টি এখন উচ্চ আদালতের দিকে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। একই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদনও জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বিএনপি ও এই দলের চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে চরম অসুস্থ অবস্থায় দিনযাপন করছেন। দিনকে দিন তিনি পঙ্গুত্বের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসা না হলে তার প্রাণহানির শঙ্কাও রয়েছে দলটির। চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের এমন অবস্থায় উদ্বিগ্ন বিএনপি আশা করছে, এখন অন্তত সঠিক চিকিৎসার জন্য মানবিক কারণে খালেদা জিয়া জামিনে মুক্তি পাবেন।
গত ৫ ডিসেম্বর এই মামলার শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে ব্যাপক হট্টগোল হয়। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রতিবেদন আসেনি, অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে এমন কথা জানালে আদালত ১২ ডিসেম্বর শুনানির দিন ঠিক করেন। বিএনপির আইনজীবীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা ওই দিন শুনানির দাবিতে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ সেøাগান তুলে আদালতে অবস্থান নেন। তবে আদালত তাদের কথায় কর্ণপাত করেননি।

আগামীকাল আপিল বিভাগ কী সিদ্ধান্ত দেন, তা কারো জানা নেই। তবে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আদালতের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন। তারা দলের নেত্রীর মুক্তির প্রহর গুনছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর ৩৫টিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। শুধু দু’টি মামলায় জামিনের অপেক্ষায় বিএনপি। তা হলোÑ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা।

খালেদা জিয়ার মামলার আইনজীবী বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ নয়া দিগন্তকে বলেন, মানবিক কারণেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে জামিন দেবে বলে আমরা আশাবাদী। এ মামলায় কোনো সাক্ষী, তথ্য বা স্বাক্ষর কিংবা বেগম জিয়ার কোনো ভূমিকা নেই। তারপরও আমরা ওদিকে না গিয়ে শুধু মানবিক কারণে তার জামিন চেয়েছি। আশা করছি, সর্বোচ্চ আদালত তাকে জামিন দেবেন। যদি না দেন তাহলে বুঝতে হবে, সরকারের প্রভাব বা রাজনৈতিক কারণে তার মুক্তি হচ্ছে না, মানবিক কারণেও তার মুক্তি হচ্ছে না।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই বিক্ষোভ কর্মসূচি চালিয়ে আসছে বিএনপি ও এর গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনগুলো। ৫ ডিসেম্বর শুনানির দিন পিছিয়ে দেয়ার পর বৈঠক করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। ওই বৈঠকে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে সবাই একমত হন, সরকারের সর্বোচ্চ মহলের বাধাই খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রধান অন্তরায়। তারপরও কঠোর কোনো সিদ্ধান্তে না গিয়ে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির সর্বশেষ দিন ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। জামিন না হলে জরুরি বৈঠক ডেকে স্থায়ী কমিটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে। সারা দেশে গণবিক্ষোভ কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে আরো বেশ কিছু কর্মসূচি দেয়া হবে। ডিসেম্বরজুড়েই থাকবে রাজপথে আন্দোলন কর্মসূচি। মাঠপর্যায়ের নেতারা হরতাল-অবরোধের পরামর্শও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্মসূচি দেয়া হবে বলে জানা গেছে।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন না হলে বিএনপি বাধ্য হয়ে এক দফার আন্দোলনে যাবে। আশা করি সরকার প্রধানও তা বুঝতে পারছেন।
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। ৬৪৪ দিন ধরে কারাগারে আছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ৭৪ বছর ঊর্ধ্ব খালেদা জিয়া শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement