কৃষকবান্ধব নেতৃত্ব খুঁজছে আ’লীগ
- মনিরুল ইসলাম রোহান
- ০১ নভেম্বর ২০১৯, ০৭:০০
আগামী ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কৃষক লীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। চলছে নেতৃত্ব বাছাইয়ের জন্য চুলচেরা বিশ্লেষণ। পদবাণিজ্য, অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, কৃষকদের দুঃসময়ে পাশে না দাঁড়ানো, কৃষিসংশ্লিষ্ট লোকজনের পরিবর্তে ভিন্ন পেশার মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে কমিটি গঠনসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জালে আটকা পড়েছে কৃষক লীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব। এ জন্য আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড এবার কৃষকবান্ধব নেতৃত্ব তুলে আনতে চাইছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৯ জুলাই সম্মেলনের মাধ্যমে মোতাহার হোসেন মোল্লাকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজাকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে বিভিন্ন পদে সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক রেজার পটুয়াখালী জেলার রয়েছে ২৬ জন এবং ১১১ জনের মধ্যে ৩৯ জনই আইনজীবী পেশায় নিয়োজিত। আইনজীবীরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় শামসুল হক রেজার একটি বলয় তৈরি হয়েছে, যাতে সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে থাকেন। এ ছাড়া সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে কমিটিতে পদ দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে, যা একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ ক্যাসিনোকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।
ওই নেতাকে টাকার বিনিময়ে কমিটিতে পদ দেয়ার জন্য কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লাকে দুষছেন অন্য নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষক লীগের এক সহসভাপতি বলেন, মূল কমিটি লিখিতভাবে ১১১ জনের হলেও অলিখিতভাবে এর সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সভাপতি চিঠিতে স্বাক্ষর করে পদ দিয়েছেন। কারো কারো কাছ থেকে একটি সদস্য পদের বিনিময়ে ৪০ লাখ টাকারও বেশি নেয়া হয়েছে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, কৃষক লীগের এই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে মোতাহার হোসেন মোল্লা ও অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না আওয়ামী লীগ প্রধান, যার ফলে যারা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে তৃণমূলের কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজে স্বচ্ছ ইমেজের দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং বিভিন্ন কৃষি ফার্ম গড়ে তুলে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন ওই সব নেতার বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এবং নিজস্ব সোর্স দিয়ে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। এরমধ্যে সহসভাপতি পদে আলোচনায় আছেন সহসভাপতি শরীফ আশরাফ হোসেন, সহসভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ও সহসভাপতি শেখ মো: জাহাঙ্গীর আলমসহ বেশ কয়েকজন। এ ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সমীর চন্দ্র, সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু, কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট, আসাদুজ্জামান বিপ্লব, গাজী জসিম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন।
এরমধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকা সমীর চন্দ্র সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সাথে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু কৃষকবান্ধব হিসেবে জোরালো আলোচনায় আছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ছাত্ররাজনীতি শেষ করেই জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজনীতির পাশাপাশি নিজ এলাকা বদরগঞ্জে তার কৃষি খামারও আছে। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন। এর মাধ্যমে আগামীতে কৃষক লীগে দুর্নীতিমুক্ত এবং কৃষকবান্ধব নেতৃত্ব উঠে আসবে- এটা আমি আশা করি।
বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে কৃষক লীগের সহসভাপতি কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা নয়া দিগন্তকে বলেন, কৃষির সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সাইনবোর্ড হিসেবে সংগঠনের নাম ব্যবহার করার জন্য অর্থের বিনিময়ে পদ-পদবি কিনে নেয়। কৃষক লীগ এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হওয়াটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, কৃষক লীগের যেসব নেতার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে পদবাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে তাদের কার্যক্রম জানার পর তৃণমূলপর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভীষণ ক্ষুব্ধ। বদিউজ্জামান বাদশা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কৃষকদের সংগঠিত করার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী আমার ওপর আস্থা রাখবেন বলে বিশ্বাস আছে। তিনি এবার কৃষকবান্ধব নেতৃত্বই বেছে নেবেন। একই সাথে নেত্রীর বিশ্বাসকে বিগত দিনের মতো যাতে ভঙ্গ না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা উচিত।
টাকার বিনিময়ে পদ দেয়া, গঠনতন্ত্রের বাইরে পদ দেয়া, অবৈধভাবে টাকা অর্জনসহ নানা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুল হক রেজার ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তারা দু’জনের কেউই রিসিভ করেননি। তবে কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা একটি গণমাধ্যমের কাছে টাকার বিনিময়ে পদ দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া তালিকায় নজরুল ইসলাম বিশ্বাসের নাম না থাকলেও পরে কমিটির সবার মতামতের ভিত্তিতে তাকে নেয়া হয়েছে। তখন সেক্রেটারি হজ করার জন্য সৌদি আরবে গেলে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারির সাথে আলোচনা করে নজরুলকে সহসভাপতির পদ দেয়া হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এটা আপনারা পারেন কি নাÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তা অবশ্য পারি না। এটা ভুলই হয়ে গেছে।