যে কারণে সাতজন বডিগার্ড রাখতেন জি কে শামীম
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:০১
কমান্ডো স্টাইলে গাড়িবহর নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে চলাফেরা করতেন যুবলীগ নেতা এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। অন্তত ২০ জন গানম্যান পরিবেষ্টিত হয়ে কড়া নিরাপত্তাবেষ্টনীতে থাকতেন তিনি। তা ছাড়া শটগানসহ সাতজন বিশালদেহী বডিগার্ড সার্বক্ষণিক সাথে থাকত তার। রাস্তায় বের হলে শামীমের গাড়িবহরের আগে-পিছে ২০-২৫টি মোটরসাইকেল থাকত। এটাই ছিল অঘোষিত টেন্ডার কিংখ্যাত জিকে শামীমের চলাফেরার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
অস্ত্রসজ্জিত দেহরক্ষী নিয়ে এভাবে চলাচলের কারণে স্থানীয়দের অনেকেরই ধারণা ছিল জিকে শামীম রাষ্ট্রীয় কোনো বড়মাপের ভিভিআইপি।
পূর্ত অধিদফতরে এভাবে রাজসিক কায়দায় প্রতিদিন ঢুঁ মেরে যেতেন শামীম। তার এমন গাড়িবহর আর অস্ত্রধারী গানম্যান দেখে পূর্ত অধিদফতরের অনেকেই শামীমকে সমীহ করে চলতেন।
সূত্র বলছে, শামীম তার হোন্ডা বাহিনী টেন্ডার ছিনতাইয়ের কাজেও ব্যবহার করেন। বছরখানেক আগেও প্রকাশ্যে বঙ্গ বিল্ডার্সের মালিক লিটনের কাছ থেকে তার লোকজন টেন্ডার ছিনতাই করে। এভাবেই টেন্ডারবাজি করে গুলশান নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনটিতে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড নামে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন শামীমে।
বনানীর ডিওএইচএসে বিলাসবহুল বাড়িতে থাকেন শামীম। সেখান থেকে নিকেতনের অফিসে কখনও সকালে, কখনও দুপুরে এমনকি গভীর রাতেও আসতেন তিনি। আর তিনি যখনই আসতে সাড়া পড়ে যেত গোটা গুলশান এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, শামীমের গাড়ির সামনে থাকত তিনটি মোটরসাইকেলে ছয় দেহরক্ষী। সামনে-পিছে আরও দুটি কালো রঙের জিপ গাড়ি। এসব গাড়িতে বাজতো সাইরেন। মোটরসাইকেল আরোহীরা রাস্তা থেকে অন্যসব গাড়ি ও পথচারীদের সরিয়ে সরিয়ে শামীমের গাড়িকে এগিয়ে নিয়ে যেত।
তারা জানান, শামীমের গাড়ি নিকেতনের অফিসে না পৌঁছানো পর্যন্ত রাস্তায় অন্য কোনো গাড়ি নামার ক্ষমতা ছিল না। তার ভয়ে তটস্থ থাকত নিকেতনবাসী।
এ বিষয়ে জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড নামের ভবনটির পাশের ভবনের কেয়ারটেকার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ষোলোআনা রাজকীয় স্টাইলে চলতেন জিকে শামীম। তিনি যখন এখানে আসতেন, সবাই টের পেয়ে যেত। অন্য সবার চলাচল বন্ধ হয়ে যেত। শামীম সাহেবের গাড়ি যখন এখানে আসতেন, কেউ রাস্তায় বের হতে পারত না। অফিসের সামনে গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে অস্ত্রসহ দেহরক্ষীরা তার চারদিকে ঘিরে রাখত। প্রতিদিনই সিনেমাকে বাস্তবে দেখতাম আমরা।’
তিনি যোগ করেন, ‘একবার শামীমের গাড়ি আসার সময় আমাদের এক স্যারের গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের হয়ে অর্ধেক রাস্তায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু শামীমের দেহরক্ষীরা আমাদের সেই গাড়িকে জোরপূর্বক আবার গ্যারেজে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করে। শামীম চলে যাওয়ার পর আমাদের গাড়ি বের হয়।’
ইসমাইল নামে অন্য একটি বাড়ির কেয়ারটেকার জানান, গত ১০ বছর ধরে এখানে চাকরি করছি। জিকে শামীম যে বাড়িটি নিজের অফিস বানিয়েছেন, তা আগে খান সাহেব নামে একজনের ছিল। গত বছর খান সাহেব থেকে বাড়িটি শামীম কিনে নেন। এর পরই এ এলাকা জমজমাট হয়ে ওঠে। দিনদুপুরে এমনকি গভীর রাত ২টার দিকেও সাইরেনে ঘুম নষ্ট হতো এলাকাবাসীর। সাইরেন বাজলে আমরা বুঝতাম জিকে শামীম আসছেন।
তবে গত ২-৩ দিন ধরে আর সাইরেন শোনেননি ইসমাইল।
তিনি বলেন, ‘গত ২-৩ দিন ধরে চুপচাপ অফিসে আসতেন শামীম। সাইরেন বাজাতেন না। এ বিষয়ে শুনেছি ফকিরাপুলের ক্যাসিনোতে র্যাবের অভিযানের পর নীরবে চলাফেরা করছেন শামীম সাহেব।’
এমন রাজকীয়ভাবে প্রটোকল ব্যবহার করে কেন চলাফেরা করতেন জিকে শামীম সে প্রশ্নে জানা গেছে, রূপপুরে বালিশকাণ্ড প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে জিকে শামীম বিশাল নিরাপত্তাবহর নিয়ে চলাফেরা শুরু করেন। সার্বক্ষণিক সাতজন গানম্যান সাথে নিয়ে ঘুরতেন।
সূত্রের খবর, রূপপুরের গ্রিন সিটি আবাসন পল্লী নির্মাণের ব্যয় তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। সেখানে বড় অঙ্কের কয়েকটি কাজ জিকে শামীম নিজেই করছেন।
এ ছাড়া ৫ পার্সেন্ট কমিশনের বিনিময়ে ৩-৪টি প্রতিষ্ঠানকে কয়েকটি কাজও দেন বলে শামীম। মূলত রূপপুরের গ্রিন সিটি আবাসন পল্লী নির্মাণের প্রায় সব কাজই জিকে শামীমের দখলে ছিল। তবে এদের মধ্যে যেসব কাজ পছন্দ হতো না সেগুলো অন্য ঠিকাদারদের দিয়ে দেন শামীম। তাও আবার মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে।
প্রসঙ্গত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত যুবলীগের এ নেতা।
নারায়ণগঞ্জ শাখা আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও তিনি। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর যুবদলের সহসম্পাদক ছিলেন। যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে জিকে শামীম পরিচয় দিলেও শুক্রবার উভয় সংগঠন থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
যুবলীগের দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান বলেন, জিকে শামীম যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো পদে নেই। তবে তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে থাকতে পারেন। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় নিকেতনে নিজ ব্যবসায়িক কার্যালয় থেকে আটক হন জিকে শামীম।
র্যাবের সেই অভিযানে শামীমের কার্যালয় থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকাসহ ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) উদ্ধার হয়। এ ছাড়া মার্কিন ডলার, সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা