২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

সরকারের ব্যর্থতায় সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে : রিজভী

বিএনপি
রুহুল কবির রিজভী - ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু জ্বর। সরকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, গতকাল হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ডেঙ্গু মহামারি হতে বাকি নেই।’ ডেঙ্গুবাহী এডিস মশার কামড়ের ভয়ে সরকারের মন্ত্রী-সচিবরা অফিসে যাচ্ছেন না। অথচ ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণের বিনাভোটের মেয়র নাগরিকদের জীবন নিয়ে উপহাস করে নির্লজ্জের মতো বলে আসছেন, ‘কিছুই হয়নি, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, দেশে মহামারি আকারে ডেঙ্গু দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু রোগিতে সয়লাব হাসপাতাল। তিল ধারণের জায়গা নেই। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যা আগের রেকর্ড ভেঙে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে প্রতি তিন মিনিটে একজন করে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি বছর ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোল রুমের সংকলন অনুযায়ী, এ বছর গতকাল পর্যন্ত ৭ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সেই হিসাবে এ বছর ২২ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের অনুমিত সংখ্যা ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ জন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, মশা মারতে যে ওষুধ কেনা হয়েছে সে ওষুধে কাজ হয় না। কারণ বাজেটের টাকা লুটপাট করে সস্তা দামে নকল ওষুধ কেনা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট গতকাল বলেছেন, ‘মশা নিধনে অকার্যকর ওষুধ আমদানি করা হয়েছে।’ সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জনরোষের ভয়ে বলেছেন, ‘ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে, প্রাণহানি ঘটছে। যে ওষুধ আনা হয়েছে তা অকার্যকর।’

ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসে সরকার ডাকাতদের ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, জনগণ বাঁচলো না মরলো তা নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। একদিকে দেশে ডেঙ্গুর মহামারি অন্যদিকে ভয়াবহ বন্যায় পানিতে ভাসছে মানুষ, ত্রাণ নেই, সাহায্য নেই, পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নেই, দেশের চারিদিকে শুধু হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস চলছে।

তিনি বলেন, গুম-খুন-ধর্ষণ-ক্রসফায়ার-গ্রেফতার-নিপীড়ণের সাথে সাথে এডিস মশার বিস্তার ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করছে মিডনাইট সরকার।

অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং নির্ভিক দেশপ্রেমিক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্জলা ও হাস্যকর বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশী রায়ে গত ১৮ মাস কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। ৭৪ বছর বয়সী চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, জননন্দিত নেত্রী গুরুতর অসুস্থ। পিজি (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের চার দেয়ালে বন্দী রেখে নামমাত্র চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে তাকে। সেখানে ভর্তির পর এখনো তার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিছানা থেকে উঠতে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে এবং স্বাভাবিকভাবে হাত-পা নাড়াতে তার কষ্ট হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতেও তার অসুবিধা হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও সরকারপ্রধান তার ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য জামিনে সরাসরি বাধা দিচ্ছেন। মিথ্যা মামলাগুলো জামিনযোগ্য হলেও তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার বলতে কিছুই নেই। দেশে নির্বাচন ও বিচার বলে কিছু নেই। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বলতে কিছুই নেই। গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। একের পর এক গলাকাটা লাশের দৃশ্য আমরা সংবাদ মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি। মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে। ভয় পাচ্ছে-কখন কাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কথিত ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনীতে গত কয়েক দিনে আটজন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। চরম নৈরাজ্য চলছে দেশজুড়ে। মানুষের প্রশ্ন- এগুলো কিসের আলামত? সরকার দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও দেশ পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

রিজভী বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আইনমন্ত্রী গণপিটুনীর দায় চাপাচ্ছেন বিরোধী দলের ওপর। তিনি এই উড়ো-অবান্তর ও উদ্ভট কথা বলছেন ভিন্ন কারণে। বোধহয় তার মন্ত্রীত্বের পদটি টলমল করছে, তাই প্রধানমন্ত্রীকে খুশী করে মন্ত্রীত্বের টালমাটাল পদটি ধরে রাখতেই বিরোধী দলের ওপর দায় চাপাচ্ছেন, পীড়াদায়ক আবোল-তাবোল বকছেন।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বিবিধ অমঙ্গলের উৎস এই সরকারের হাত থেকে নিস্তার পেতে হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে হবে। বেগম জিয়া মুক্তি পাওয়া মানে গণতন্ত্রের মুক্তি, দেশের ১৭ কোটি মানুষের মুক্তি। তিনি মুক্তি পেলে নির্বাক-বন্দী মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম আরো তীব্রতর হবে।

তিনি বলেন, আমি দলের পক্ষ থেকে আহবান জানাচ্ছি- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আজহার আগেই মুক্তি দিতে হবে। বেগম জিয়ার জামিনে আর কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না। জামিন পাওয়া তার সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার। আদালতের ওপর অনৈতিকভাবে ও প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করে ১৮ মাস জামিন আটকে রেখেছেন। দেশের জনগণ ঘুরে দাঁড়ানোর স্পর্ধিত বার্তা দিচ্ছে। জনগণের হিম্মতের কাছে স্বৈরশাসকদের তরবারী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। জনগণের প্রাণপ্রিয় নেত্রীকে মুক্তি না দিলে আন্দোলনের নয়া ইতিহাস সৃষ্টি হবে। তাই অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।

যারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির পথে বাধা হবে তারা ইতিহাসে গণশত্রু হিসেবে বিবেচিত হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement