আগামী সপ্তাহেই বাড়ছে মন্ত্রিসভার আকার
- শামছুল ইসলাম
- ০৪ জুলাই ২০১৯, ০৬:২৫
মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা গুঞ্জন। চীনে রাষ্ট্রীয় সফর শেষে আগামী ৬ জুলাই দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ফেরার পরই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে। রাজনৈতিক ও প্রশাসনের সূত্রগুলো এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী আসার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এর মধ্যে- মহিলা শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন মুখ আসতে পারে। এ ছাড়া রদবদল হতে পারে দু-একটি মন্ত্রণালয়ে। এর মধ্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা জাকির হোসেনকে অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে।
সূত্র আরো বলছে, কয়েকটি মন্ত্রণালয় নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এবং এসব মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সরকার। সে বিবেচনা থেকেই এসব মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী দেয়া হতে পারে। এর মধ্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়টি প্রধানমন্ত্রীর হাতে রয়েছে। নানা ব্যস্ততার কারণে এ মন্ত্রণালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সময় দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ জন্য সেখানে একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী দেয়া হতে পারে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয় এবং বিমানে একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার কারণে এখানে একজন সিনিয়র মন্ত্রী দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও জনপ্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একজন করে প্রতিমন্ত্রী রয়েছেন। এ দু’টি মন্ত্রণালয়ে একজন পূর্ণমন্ত্রী বা সিনিয়র মন্ত্রী দেয়া হতে পারে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। অর্থ, স্বরাষ্ট্র এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে একজন করে প্রতিমন্ত্রী দেয়া হতে পারে। আগের মন্ত্রিসভায় এ দুই মন্ত্রণালয়েই প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে সংসদে বাজেট উত্থাপন ও পাসের পুরো প্রক্রিয়াটি নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় পড়তে হয়। অর্থমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে খোদ প্রধানমন্ত্রীকে বাজেট পাসের কাজটি পরিচালনা করতে হয়।
এদিকে, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে ১৪ দলের শরিকরা মন্ত্রিসভায় থাকবেন কি না সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। একটি অংশ দাবি করছে যে, প্রধানমন্ত্রী আপাতত শরিকদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত না করার ব্যাপারেই মনঃস্থির করেছেন। আবার অন্য একটি অংশ বলছে, যেহেতু বিএনপি এখন সংসদে এসেছে এবং অন্য দলগুলোর সাথে একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে সেজন্য জোটের শরিকদের শক্তিকে সংহত করার জন্য ১৪ দলের কাউকে কাউকে হয়তো মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে কতজনকে নেয়া হবে বা কিভাবে কি করা হবে এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
আরেকটি সূত্র বলছে, শরিকদের মধ্যে পুরনো কাউকে না আনার ব্যাপারে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তবে চীনের সাথে সম্পৃক্ত শরিক দলের এক নেতাকে মন্ত্রিসভায় আনা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ ছাড়া সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় যাদের ঘিরে গুঞ্জন রয়েছে, এর মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এমপি, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের এমপি ডা: সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী, কর্নেল (অব:) ফারুক খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম ও একজন অর্থনীতিবিদের নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্য হতেই যে কেউ মন্ত্রিসভায় যোগ হতে পারেন বলে জানা গেছে।
গুঞ্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দুইজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, মন্ত্রিসভার বিষয়ে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী জানেন। তিনি জানেন কারা আসবেন, এর বাইরে কারো কিছু জানা নেই।
অবশ্য গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফেরার পর মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে পারে। তবে কিভাবে কতটুকু সম্প্রসারণ হবে এ সম্পর্কে তিনি কিছুই বলেননি। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভার রদবদল করা সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। প্রধানমন্ত্রী যাকে যেভাবে বিবেচনা করবেন সেভাবেই মন্ত্রিসভার রদবদল হবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে। মন্ত্রিসভায় যারা আছেন, তাদের কারো বাদ পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এর আগে গত ১৯ মে মন্ত্রিসভা পুনর্বিন্যাস করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: মুরাদ হাসানকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। এ ছাড়া ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কেবল ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ রাখা হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্ব দেয়া হয় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী করা হয় তাজুল ইসলামকে। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয় স্বপন ভট্টাচার্যকে। প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৫৮টিতে জয়পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৯ আসন। অন্য দিকে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোট পায় ৮টি আসন। তিনটি আসনে জয় পান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এরপর ৭ জানুয়ারি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে ৪৬ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই মন্ত্রিসভায় ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও ৩ জন উপমন্ত্রী রয়েছেন। দলের হেভিওয়েট নেতাদের প্রায় সবাইকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন মন্ত্রিসভা যাত্রা শুরু করে।