ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বহিষ্কৃতদের নাম জানতে চায় আন্দোলনকারীরা
- অনলাইন প্রতিবেদক
- ১৮ জুন ২০১৯, ১৩:০৯, আপডেট: ১৮ জুন ২০১৯, ১৫:০০
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিতদের উপর হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃত ১৯ জন কারা, তাদের নাম ও বিস্তারিত পরিচয় প্রকাশ ও শূন্য পদে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে পূরণ করার দাবি জানিয়েছে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থানকারী পদবঞ্চিতরা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব দাবি জানান।
এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ, যোগ্যদের মূল্যায়নসহ চার দফা দাবি জানিয়েছেন।
আজ বিকেলে রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিবেন বলে জানান তারা।
লিখিত বক্তব্যে সাবেক পরিকল্পনা ও কর্মসূচি সম্পাদক রাকিব হোসেন বলেন, আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি বিগত সময়গুলোতে যারা সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে প্রবলভাবে জড়িত ছিল, তাদের একটি বৃহৎ অংশকে বাদ কিংবা সঠিক পদে মূল্যায়ন না করে নিষ্ক্রীয়, চাকরিজীবী, বিবাহিত, অছাত্র, গঠনতন্ত্রের উল্লেখিত অধিক বয়স্ক, বিভিন্ন মামলার আসামি, মাদকসেবী, মাদক কারবারি, অপকর্মের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে আজীবন বহিষ্কৃত বা বিতাড়িতসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পদ দেয়া হয়েছে। এতো বড় গণতান্ত্রিক একটি ছাত্র সংগঠনের পদ দেয়া হচ্ছে কোনো ধরনের বাছ-বিচার করা ছাড়াই।
বিতর্কিত কমিটি হঠিত হওয়ার পর ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছিলাম আমরা। সেখানেও দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের জখম করা হয়েছে।
তিনি জানান, রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে আমাদের আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতবৃন্দের সাথে দেখা করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ কামনাসহ এসব ঘটনার জড়িতদের বিচার ও কমিটি থেকে বিতর্কিতদের অপসারণ করে তদন্তের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়নের দাবি জানাই। তারা আমাদের দাবি মেনে নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করতে বললে আমরা সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ চলে যাই ।
পরে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে । আমরা অবাক হলাম, যখন দেখলাম তাতে একজন ভিকটিমকেই সাময়িক বহিষ্কারের পাশাপাশি আরো দুজন ভিকটিমকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে । শুধু কয়েকজনকে নামেমাত্র সাজা দিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালে নেয়া হয়েছে।
রাকিব জানায়, বহিষ্কৃত মেয়েটি মিথ্যা অভিযোগে মর্মাহত হয়ে আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা মনে করি, এসব অনিয়ম অবিচার চলতে থাকলে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। আর নারীনেত্রীদের সাথে একের পর এক যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে সেসব ঘটনা বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে প্রতিকূল ভূমিকা পালন করবে। নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন হ্রাস পাবে । উল্লেখযোগ্য কোনো নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে না ।
২৯তম জাতীয় সম্মেলনের দীর্ঘ এক বছর পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়েছে। যাতে পদ দেয়া হয়েছে ৩০১ জনকে। পদ পাওয়া ৩০১ জনের মধ্যে বড় একটি অংশ বিতর্কিত এবং যাদের গঠনতন্ত্র কিংবা নৈতিকভাবে ছাত্রলীগের পদ পাওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নেই।
রাকিব বলেন, শুধুমাত্র ব্যক্তি বিবেচনায় কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে , ঐতিহ্যবাহী একটি ছাত্রসংগঠনে বিতর্কিত ব্যক্তিদের স্থান দেখে ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে আমরা ব্যাথিত, হৃদয় ভারাক্রান্ত। সংগঠন গড়ার ক্ষেত্রে শতভাগ সুষ্ঠুতার নজির পৃথিবীতে আছে কিনা আমাদের জানা নেই। কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে, অনিয়ম, গঠনতন্ত্রের চরম লংঘনের নজিরও ছাত্রলীগের ইতিহাসে তো নয়ই পৃথিবার কোথাও আছে কি - না তাও আমাদের জানা নেই।
তিনি বলেন, অনিয়মের কমিটি নিয়ে আমরা বারংবার প্রতিবাদ জানিয়েছি। কমিটি প্রকাশ হওয়ার পরপরই পদবঞ্চিতরা বিতর্কিত কমিটির প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। কিন্তু আবেগের সেই মিছিলে হামলা চালিয়ে নারীনেতৃবৃন্দসহ বেশ কয়েকজনকে আহত করা হয়।
আন্দোলনকারীরা জানান, আমাদের দাবির বিষয়ে নেত্রীর সাথে একবার দেখা করতে চাই। তিনি যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা আমরা মেনে নিব।
এর আগে গত ২৬ মে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে।
গত ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। একই দিন তার প্রতিক্রিয়ায় মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতরা সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের মারধরের শিকার হন ১২ জনের মতো নারী নেত্রীসহ পদবঞ্চিত নেতাকর্মী।
পরে ১৮ মে রাতে টিএসসিতে আবার হামলার শিকার হন তারা। ওই ঘটনার পর তারা রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে হামলার বিচারসহ কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে অনশন শুরু করেন। পরদিন ১৯ মে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের আশ্বাসে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেন পদবঞ্চিতরা। এরপর ২০ মে মধুর ক্যান্টিনের ঘটনায় পাঁচজনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনায় পরে ১৯ জনকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। তবে তাদের নাম ও পরিচয় গোপন রাখে তারা।