অপরিকল্পিত শিল্পের বিকাশে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:১০, আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯, ১৮:২৪
অপরিকল্পিতভাবে শিল্পের বিকাশের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আবার উৎপাদিত বর্জ্যের কারণে প্রতক্ষ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
শনিবার ব্রাক সেন্টারে একশনএইড বাংলাদেশ এবং ফ্যাশন রেভোলিউশন আয়োজিত ‘ভয়েসেস এন্ড সল্যুশনস’ শীর্ষক সেমিনারে এমন কথা উঠে আসে। অনুষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য, ফ্যাশন শিল্পে টেকসই উৎপাদন এবং ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য সব পক্ষকে এক জায়গায় নিয়ে আসা।
এতে এ বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, এখনই টেকসই উৎপাদন ও ভোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার। পরিবেশের উপর পোশাক শিল্পখাতের এই নেতিবাচক প্রভাব কমাতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্প কলকারখানার পানি, জ্বালানী ব্যবহার হ্রাস করে বর্জ্য নিষ্কাশন কমানো প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির পোশাক খাত কিভাবে পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলছে তার উপর একটি প্রবন্ধ উপপস্থান করেন। শিল্প কারখানার সকল ক্ষেত্র, যেমন কাটা, বয়ন, সেলাই, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তৈরী পোশাক উৎপাদন বায়ূ, পানি এবং মাটি দূষণ করে থাকে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পখাত দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও, পরিবেশের জন্য এটি উদ্বেগজনক। পানি দূষণের ফলে একদিকে কমছে মাছের সংখ্যা অপরদিকে হ্রাস পাচ্ছে চাষের উপযোগী জমি। বেশিরভাগ স্থানীয় কৃষক ও মৎস্যজীবীদের জীবিকা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সব পক্ষকে একসাথে কাজ করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্পকারখানা হতে নিষ্কাশিত বর্জ্যরে পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে। জলাশয়কে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। বর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থাকে করতে হবে আরো উন্নত।
মেয়র আরো বলেন, ‘রানা প্লাজা ধ্বসের পর বাংলাদেশের শিল্প খাতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তবে, অংশীদারদের মধ্যেই এখনো সচেতনতার অভাব রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে পোশাক শিল্পখাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। নিজেদের দায়িত্ব না এড়িয়ে নিজেদের ব্যবহারে ও মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। জোর দিতে হবে গবেষণায় এবং শিক্ষাব্যবস্থায় টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহারের বিষয় অন্তর্ভুক্তকরণে’।
অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। একইসাথে দরকার সকলের মানসিকতার পরিবর্তন।
কিউটেক্স সল্যুশনস লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাহুরা খানম বলেন, শিল্পকারখানার এই নেতিবাচক প্রভাব রোধে সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ এবং শিল্প কারখানাসমূহের ভালো উদ্যোগগুলো সমন্বয়ের অভাবে সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না।
বিজিএমইএ-এর সদ্য নির্বাচিত পরিচালক জনাব জহির বলেন,কাঁচামাল দক্ষতার সাথে ব্যবহার করলে বর্জ্যরে পরিমাণ আরো কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিজিএমইএ-এর সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান জানান, বর্জ্য নিষ্কাশনের পরিমাণ কমিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। এজন্য কর্মচারী ও শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। এজন্য আরো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ দরকার।
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘সমমানের বিকল্প খাতের অভাবে আগামী ১০-১৫ বছর এই শিল্পখাতের উপর নির্ভর করেই বাংলাদেশকে এগোতে হবে’।
ফ্যাশন রিভোলিউশন-এর কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর নওশীন খায়ের, সবার আগে সকলের মানসিক পরিবর্তন জরুরী। সম্প্রতি অনেক নতুন ব্র্যান্ড টেকসই উৎপাদন এবং ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছে।
ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের উচিৎ তাদের নীতিমালায় টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহারের উপর জোর দেয়া। এখন পর্যন্ত ফ্যাশন শিল্প নিয়ে নীতিমালা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত তথ্য উপাত্ত নেই। তাই আরো বেশি গবেষণার প্রয়োজন।