২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হয়রানির প্রতিবাদ ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’

হয়রানির প্রতিবাদ ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ - সংগৃহীত

সামাজিক মাধ্যমে হঠাৎ করেই জনপ্রিয় হয়েছে একটি স্লোগান, যেখানে লেখা আছে, ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’। একটি টিশার্টের এই স্লোগান কিভাবে বাইরাল হলো তা নিয়ে এই টিশার্টের ডিজাইনার বলছেন, হয়তো এতে পরিবর্তন আসবে না কিছুই, কিন্তু কিছুটা প্রতিবাদী হয়ে উঠবে মন। সেই লক্ষ্য থেকেই নতুন এ টিশার্টের ডিজাইন।

তবে প্রকাশের পরপরই টিশার্টের পুরো বার্তাটিই ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনে। কেউ এই টিশার্টের পক্ষে কথা বলছেন, আবার কেউ কেউ কথা বলছেন বিপক্ষে।

অবশ্য টিশার্টটির ডিজাইনার জিনাত জাহান নিশা মনে করেন, ‘এই টিশার্টগুলো পরলেই যে বাসে রাস্তায় যৌন হয়রানি বন্ধ হয়ে যাবে তা না, বরং আপনার সোচ্চার আওয়াজই পরে তা বন্ধ করতে। এটা শুধু সচেতনতার একটা ধাপ মাত্র।’

এর আগে খোপার কাঁটাতেও এমনই লেখা এনেছিলেন জিনাত জাহান। এবার তা তুলে ধরলেন টিশার্টে। ২৮০ টাকায় ফেসবুক পেজ বিজেন্সে পাওয়া যাবে টিশার্টগুলো। ফেসবুকে ভাইরাল ছবিগুলো নিয়ে অনেকেই নানান মন্তব্য তুলে ধরছেন।

তাদের মধ্যে ইশরাত জাহান উর্মি লিখেছেন, ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ মানে হলো যৌন নিপীড়ন করবেন না। ‘এক টিশার্ট- এত আর্তনাদ!’ এমনটাই লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরিন।

সামিহা আফরোজ নামে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘এই একটা ছবি নিয়ে গত ২-৩দিন যাবত বেশ কিছু পোস্ট আমার ফেসবুকের জানালায় ঘুরতে দেখছি। বেশিরভাগ পোস্ট গুলো হচ্ছে ছবিটির বিপক্ষে। কেন মেয়েরা টিশার্ট পরবে৷ আর যদি টিশার্ট পরেই ফেলে তাহলে এত অশ্লীল লেখাওয়ালা (তাদের মতে) টিশার্ট কেন? আবার কয়েকজন বুদ্ধিজীবী বলছেন যারা টিশার্ট পরবে তাদের গায়ে ধাক্কা মারা বা ঘেঁষে দাড়ান জায়েজ আছে। বাসে চড়তে হলে নাকি ঘেঁষে ঘেঁষেই থাকতে হয়। এটা সহ্য না হলে যেন প্রাইভেট গাড়িতে চলাচল করে।’’

পোস্টে তিনি আরো লিখেছেন, ‘এরা নাহয় টিশার্ট পরেছে দেখে আপনারা গায়ে ঘেঁষা জায়েয করেছেন কিন্তু যারা বোরখা পরে তাদের গায়ে হাত দেন কেন। সমস্যাটা কোথায় একটু চিন্তা করে দেখেছেন কি? নাকি শুধু শুধুই লাফাচ্ছেন? আসলে উনাদের টিশার্ট আপনাদের কিছু করেনি টিশার্টে যে লিখাটা আছে সেটা মরিচ বাটার মতো আপনাদের জালাচ্ছে। যারা ঘেঁষাঘেঁষি করেনা তাদের কিন্তু জ্বলেনি। আশা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন।’

মোস্তফা মনোয়ার নামের একজন লিখেছেন, ‘শুধু নারী নয় পুরুষদেরও এই ধরনের গেঞ্জি গায়ে দিয়ে এই ক্যাম্পেইনে নামা উচিত। তাতে যদি লোকাল বাসে চড়া কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। বাসগুলো ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী না তোলে। এমনটা হলে ঘেঁষাঘেঁষি-গাদাগাদি আপনিই বন্ধ হয়ে যায়।’

২০০৬ সাল থেকে টিশার্ট ডিজাইন করা মাহবুবুর রহমান নামের এক ডিজাইনার ফেসবুকে লিখেছেন, সম্প্রতি ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ লেখা সংবলিত টিশার্ট ডিজাইনটি আমার নজরে এসেছে। শুধু এটাই বলতে চাই, নারী-পুরুষ সমান অধিকার চাওয়া নারীদের এমন টিশার্ট কি শোভা পায়? এখানে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে গা ঘেঁষে দাঁড়াতে না। যে না দাঁড়াতে চায় তার নজরেও এটা আসবে। একার্থে কি ব্যাপারটা এমন নয় যে তারা সকল পুরুষকেই সমান চোখে দেখে পুরুষ-যুবক-কিশোরদের একই পাল্লায় রেখে মাপ করছে আরে এতে তাদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি অবিশ্বাস ফুটে উঠছে? এতোটাও নারীবাদী হতে নেই, যতোটা নারীবাদী হলে নারীই বাদ হয়ে যায়।’

টিশার্টের বক্তব্য নিয়ে কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীরা। তবে এরই মধ্যে টিশার্টের ছবি অনেকে অনেকভাবে বিকৃত করারও চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আবার এই টিশার্টের ‘প্রতিবাদে’ আরো টিশার্টের ছবি দিচ্ছেন নারীবাদীদের অসম্মান করে লেখা বার্তা দিয়ে। অনেকেই ফটোশপে শুধু টিশার্টের লেখা বদল করে বদলে দিচ্ছেন টিশার্টগুলোর বার্তাও।


আরো সংবাদ



premium cement