২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি : যা ভাবছে ইসলামপন্থীরা

নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ইসলামপন্থীরা - সংগৃহীত

নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এখনও চুপচাপ রয়েছে অধিকাংশ ইসলামি দল ও সংগঠন। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত ও করণীয় ঠিক করার কথা বলছেন এসব দল ও সংগঠনের নেতারা। এমনকি ২০ দলভুক্ত ইসলামী দলগুলোও বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী পদক্ষেপ দেখেই নিজেদের করণীয় ঠিক করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের ব্যাপারে ঐকফ্রন্টের প্রতিক্রিয়ার সাথে একমত পোষণ করলেও এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত দেয়া থেকে বিরত থাকছে অনেক দল ও সংগঠন। তারা মনে করছেন ৩০ডিসেম্বরের পর দেশে নতুন যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে তাতে সবাইকে নতুনকরে ভাবনার মধ্যে ফেলেছে। এই অবস্থায় ইসলামপন্থীদের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টি আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে বলে দুয়েকটি দলের নেতারা জানিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট তথা ২০ দলীয় জোটেরসর্বশেষ অবস্থানের দিকে তাকিয়ে আছে জোটের ইসলামী দলগুলো।যদি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া জোরদারের মাধ্যমে জাতীয় সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের দিকেই ঐক্যফ্রন্ট যায় তাহলে ইসলামী দলগুলো সেই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় হবে। অন্যথা তারা আলাদাভাবে নিজেদের দলীয় কৌশলে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করাসহ রাজনৈতিক কর্মসূচীকেই প্রাধান্য দেবে বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ। 

জানতে চাইলে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের প্রায় সব কটিতে আলাদাভাবে অংশ নেয়া ইসলামী আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে নীতিগতভাবে ফলাফল প্রত্যাখান করে নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে করনীয় ঠিক করার জন্য আগামী ১২ ও ১৩ জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় শূরার বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই আলোচনা করে পরবর্তী করনীয় ঠিক করা হবে। 

ইসলামী ঐক্যজোটও এবার আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ২৪টি আসনে। নির্বাচন পরবর্তী দলটির প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের আমীর মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, নির্বাচনে সকলের যে অবস্থা হয়েছে আমাদেরও তাই। এখন আলাদাভাবে নির্বাচনের ব্যাপারে জোটের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী ২৩ জানুয়ারি শুরার সভা আহবান করা হয়েছে। সেখানে সব এলাকার পরিস্থিতি জানার পর আমরা প্রতিক্রিয়া জানাব। তিনি বলেন, ইসলামপন্থীদের মধ্যে নির্বাচনের আগে ঐক্যের ব্যাপারে আমরা বলেছিলাম। কিন্তু তখন কেউ সাড়া দেয়নি। নির্বাচন পরবর্তীতে এখন তাদের মধ্যে বোধোদয় ঘটছে। ৫ বছরের মধ্যেতো আর নির্বাচন আসবে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে প্রাথমিকভাবে আমরা সাংগঠনকে জোরদার করার কাজের দিকেই বেশি নজর দেব। 

আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়া খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, আমাদের দলীয় প্রধান নির্বাচনের পর নির্বাচনের কারচুপির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া সেভাবে এখনও ব্যক্ত করা হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছি। কিভাবে পরিস্থিতির উত্তরণের ব্যাপারে করনীয় নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনের পর ইসলামপন্থীদের মধ্যে ঐক্যের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। সম্মিলিতভাবে ইসলামপন্থীদের কিছু করার চিন্তা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এ ব্যাপারে এখনও কোন বৈঠক বা আনুষ্ঠানিক আলাপ আলোচনা হয়নি। 
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, অবশ্যই আমাদেরও প্রতিক্রিয়া থাকবে। আমরা ইতোমধ্যেই আমীর আল্লামা শফী, মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবনগরীসহ শীর্ষ নেতারা কথা বলেছেন জানিয়ে বলেন, সংগঠনের শূরার বৈঠকের মাধ্যমে হেফাজতের অবস্থান পরিস্কার করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান অতীতের মতোই নির্দলীয়ই হবে। ইসলাম, ঈমান আকীদা সংরক্ষনের বিষয়গুলোর ব্যাপারে হেফাজতের অবস্থান এমনিতেই পরিস্কার। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও সেই নীতিকেই সামনে রেখে হেফাজতের অবস্থান ও চিন্তা ভাবনা জানানো হবে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ জোটভূক্ত একটি বড় ইসলামী দলের এক নেতা বলেন, নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা ও প্রত্যাখ্যানের বিষয়তো জোটগতভাবেই করা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন আবশ্যই করতে হচ্ছে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের গতিবিধি দেখেই দলটি তাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে বলে তিনি জানান। 

২০ দলের শরীক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি হতাশা ও উদ্বেগজনক। এই তামাশার নির্বাচনের পর সারাদেশে নিস্তব্দতা বিরাজ করছে। মানুষ এখনো স্বাভাবিক হতে পারছে না। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার রক্ষায় আন্দোলনরত সকল রাজনৈতিক দলের দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ও সমন্বিত রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের গুরুত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি জনগণের মাঝে বিরাজমান ভীতি কাটিয়ে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন করে তুলতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সমমনাদের দৃঢ় রাজনৈতিক ঐক্য এবং অধিকার আদায়ে জনসচেতনা তৈরি, এই দুইটা বিষয়কেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষন করে আমরা পরবর্তী করনীয় ঠিক করবো।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল