শনিবারের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সম্ভাবনা
- আশরাফ আলী
- ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:৩৭, আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৯, ০৬:৪২
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাই টানা তৃতীয়বারের মতো এবং স্বাধীনতার পর চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। আর টানা হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। একই সাথে দেশের সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন। পুরনোদের মধ্যে কার কপাল পুড়ছে আর কারা থাকছেন, আবার নতুন করেই বা কারা আসছেন, কে পাচ্ছেন কোন দফতর- এমন নানা প্রশ্নই এখন সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আগামী শনিবার অর্থাৎ ৫ জানুয়ারির মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হতে পারে- এমন সম্ভাবনা মাথায় নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দাফতরিক কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে সতর্কাবস্থায় রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। দু-এক দিনের মধ্যেই নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গেজেট জারি করবে নির্বাচন কমিশন। এরপর স্পিকার তাদের শপথ পড়াবেন।
মন্ত্রিসভা গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই কর্মকর্তা বলেন, বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গঠিত হবে নতুন মন্ত্রিসভা। নিয়মানুযায়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট হওয়ার পর যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হবেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতি চাইবেন। অর্থাৎ সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যিনি রাষ্ট্রপতির কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন বলে প্রতীয়মান হবেন রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেবেন। রাষ্ট্রপতির অনুমতির পর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে তা নির্বাচিত করবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনে প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে শপথ পড়াবেন। পরে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের আলাদাভাবে শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি। শপথের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দফতর বণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, মন্ত্রিসভায় একজন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নির্ধারণ করবেন, সেভাবেই অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের সংখ্যার কমপক্ষে ১০ ভাগের ৯ ভাগ সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাবেন। সর্বোচ্চ ১০ ভাগের এক ভাগ (এক-দশমাংশ) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য অথচ সংসদ সদস্য নন এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে মন্ত্রিসভার টেকনোক্র্যাট সদস্য মনোনীত হতে পারবেন বলেও ৫৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের শপথ নিতে আমন্ত্রণ জানাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। একই সাথে নতুন সদস্যদের জন্য গাড়িও প্রস্তুত রাখবে সরকারি যানবাহন অধিদফতর (পরিবহন পুল)। নতুন করে শপথ নেয়ার কারণে আগের মন্ত্রিসভা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন এটি একান্তই প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি যাদের চাইবেন তাদেরই জায়গা হবে নতুন মন্ত্রিসভায়।
প্রসঙ্গত, রোববার দেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩০০ আসনের এ সংসদের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রাপ্ত ফলাফলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, জাসদ ২, বিকল্পধারা ২, তরিকত ফেডারেশন ১ ও জেপি ১ জন সংসদ সদস্য বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। আর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মাত্র সাতটি (বিএনপি ৫, গণফোরাম ২) আসন। এ ছাড়া ৩টি আসনে স্বতন্ত্রসহ অন্যরা জয় পেয়েছেন।
এ দিকে পার্বত্য রাঙ্গামাটি (২৯৯) অঞ্চলের ফলাফল এখনো ঘোষিত হয়নি। এ ছাড়া গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর) আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জেপি (জাফর) চেয়ারম্যান ড. টি আই এম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর মৃত্যুতে এ আসনের ভোট স্থগিত রয়েছে। আগামী ২৭ জানুয়ারি এ আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ সমমনা অন্যান্য দলের বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী ও দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। পরে কয়েক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল আনা হলে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার আকার ৫২ সদস্যে গিয়ে দাঁড়ায়, যা এখনো চলমান। যদিও এর মধ্যে চারজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা