তরুণদের দলে দলে ভোট দিতে যেতে হবে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৬:৫৩
ভোট দেয়া শুধু অধিকার নয় পরিবর্তনের একটি অন্যতম হাতিয়ার। তবে ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে প্রত্যেকের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে দেশবাসী পরিবর্তন চাইছে। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশনে কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। এই লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে গেছে। সিইসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। অন্য দিকে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মার খাচ্ছেন। তারপরে তরুণদের ভয়কে জয় করে দলে দলে ভোট দিতে যেতে হবে। কারণ তাদের হাতে দেশের আগামী ভবিষ্যৎ।
গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ : তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘুদের কেন ভোট দেয়া উচিত?’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকেরা এ কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) উদ্যোগে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট ইজাজ আহমেদ।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, এবার ভোট দেয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তা অতিক্রম করেই আমাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। শুধু তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘু তাদের ভোট দেয়া উচিত কেবল তা নয়, সবারই ভোট দেয়া উচিত। তিনি বলেন, তরুণরা শুধু নিজদের কথা চিন্তা করবেন না, তাদের সবাইকে নিয়েই চিন্তা করতে হবে। দেশ কিভাবে চলবে, তা নিয়ে তাদের ভাবতে হবে। দেশ স্বাধীনতার আগে আমরা এ রকম দেখিনি। এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরো বলেন, তরুণদের স্বপ্ন থাকলে ভয়েস তুলতে হবে। কেউ ক্ষেত্র তৈরি করে দেবে না।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সংখ্যালঘুদের ওপরে বিভিন্ন জায়গায় হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে অনেক ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আমাদের সচেতন হতে হবে। আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। গত মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলা সমর্থনযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশন দায়িত্ব পালন করছে না উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। ইসি যদি সোজা হয়ে থাকত, হোম টাক্স করত তাহলে আজ এই সমস্যা তৈরি হতো না। সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আর্মি নামল কিছু করল না, এটি বলে বিতর্কিত করা ঠিক না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সেই কাজ করে যা তাকে করতে বলা হয়। এর বাইরে যায় না সেনাবাহিনী। তরুণদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমেরিকায় ১৮ বছর বয়সে ভোট দেয়ার সাথে প্রার্থীও হতে পারে। বাংলাদেশে কেন এই বয়সের প্রার্থী হতে পারবে না। এর পরিবর্তন হওয়া দরকার।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন কারফিউ চালু করে দিয়েছে। দেশবাসী একটি পরিবর্তন চাইছে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিয়েছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে গেছে। সিইসি বলছে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। অন্য দিকে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মার খাচ্ছেন। নারীদের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ইশতেহারে উল্লেখ রয়েছে। ১৫ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশের কথা বলা হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া সমাজ কাঠামো পরিবর্তন না করলে বরবারই এমন পরিস্থিতি হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু রাখতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, গণতন্ত্র মানবাধিকারের কথা বললেই বলা হচ্ছে ওমুক ওমুকের সমর্থক। বিরোধী দলের এজেন্ট বলে তাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র বিপর্যয়ের মুখে পড়লে কারো রেহাই হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এখন সরাসরি প্রার্থীর ওপরও হামলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী নামার পরও আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা হামলা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তবে তিনি তরুণদের ভয়কে জয় করে দলে দলে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানান।
সিজিএস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমান সভাপতির বক্তৃতায় বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে। এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং। ইসির যে অবস্থা তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একাদশ নির্বাচনে দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষক কম থাকবে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তৃতা করেন- ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহরার আহমেদ, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আদিবাসী নেতা জঞ্জীব দ্রং, সিজিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, বিআরটিসিএর সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস প্রমুখ।