অযোধ্যা : মসজিদের নিচের ধ্বংসাবশেষ
- ড. মোজাফফর হোসেন
- ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৩০
বাবরি মসজিদকে নিয়ে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে, সেটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত আর কতখানি আবেগঘনিষ্ঠ পক্ষপাতদযুক্ত, তা আলোচনার দাবি রাখে। বিশ্বহিন্দু পরিষদের দাবি আর মসজিদ নির্মাণে মুসলিমদের ঐতিহ্য নিয়ে একটি সরল সমীকরণে যেতে পারলে এ রায়টিতে যে কারসাজি রয়েছে সেটা বোঝা সহজ হতে পারে। আমরা জানি যে, বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালে উগ্র হিন্দুদের দ্বারা ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি ভেঙে ফেলা হলে ভারতজুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সঙ্ঘটিত হতে থাকে এবং সেই দাঙ্গায় দুই সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়। হিন্দু পরিষদের দাবি ছিল, বাবরি মসজিদ যে স্থানে তৈরি করা হয়েছে সেটি শ্রী রামচন্দ্রের জন্মভূমি। সেই ভূখণ্ডে মোঘল শাসনের সূচনাকারী সম্রাট বাবরের সেনাপতি মীর বাকি ১৫২৮ সালে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। হিন্দু পরিষদের আরো দাবি ছিল যে, এই মসজিদ স্থাপনার নিচে অবশ্যই শ্রী রামচন্দ্রের স্মৃতিঘনিষ্ঠ জন্মস্থানের ধ্বংসাবশেষ থাকতে পারে, যা মুসলিম নৃপতি স্বীয় ক্ষমতার জোরে নষ্ট করে সেখানে এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন।
এই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামা প্রশমনের উদ্দেশ্যে বিষয়টি আদালতে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর গত ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণা করা হয় যে, বাবরি মসজিদের স্থানে একটি মন্দির তৈরি করা যেতে পারে এবং সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে অযোধ্যার কেন্দ্রীয় এলাকায় মসজিদ নির্মাণের জন্য পাঁচ একর জমি প্রদান করা যেতে পারে। তবে এ রায়ে মুসলিমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি। না থাকার কারণ হলো শুধু বাবরি মসজিদ নয়, যেকোনো স্থানের একটি মসজিদ হলো সেই এলাকায় মুসলিম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের শক্ত ভিত ও তার প্রতীক। একটি মসজিদকে সরিয়ে দেয়া মানে, মুসলিম জাতিসত্তার ভিতকে উপড়ে ফেলা বলেই ভারতীয় মুসলিমরা বুঝে থাকে। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সেই জাতিসত্তার প্রতি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যে অসম্মান প্রদর্শন করল সেটা তীব্র ক্ষোভের কারণ হতে পারে স্বাভাবিকভাবেই।
ভারতবর্ষে আরব মুসলমানদের আগমন ঘটে সমুদ্রপথে ৬৪৪ সালে। আরব দেশে সে সময় চলছিল খলিফা হজরত ওমর রা:-এর শাসনকাল। আরব সেনাপতি সোহেল বিন আবদি ও হাকাম আল তাকবি সমুদ্রে রাজিলের যুদ্ধে ভারতীয়দের পরাজিত করে সিন্ধুতে পৌঁছে যান। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশের অনুমতি না থাকায় হজরত ওমরের নির্দেশে (ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ না করেই) তারা ফিরে গিয়েছিলেন। পরবর্তী খলিফা হজরত ওসমানের আমলে (৬৫২ সালে) আরবরা বর্তমান বালুচিস্তানের মাকরান এবং উমাইয়া খলিফা মোয়াবিয়ার আমলে (৬৬৪ সালে) পাঞ্জাব জয় করেন। এরপরে বিখ্যাত সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১০ সালে সিন্ধু জয় করে সেখানে স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। ১০৩০ সালে ভারতবর্ষ সফর করেছিলেন ইতিহাসবিদ আল বেরুনি। তারপর উজবেকিস্তান থেকে এসেছিলেন তৈমুর লং, গজনির সুলতান মাহমুদ ও শাহাবুদ্দিন মুহাম্মদ ঘোরিসহ অনেকে। ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি এসেছিলেন ১২০৩ সালে। প্রায় ৪০০ বছর এ মুসলমানরা ভারতবর্ষ শাসন করেছেন। জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে ভারত জয় করে মোঘল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেছিলেন। তখন থেকে পলাশীর যুদ্ধ পর্যন্তু ভারতবর্ষ মুসলমানদের অধীনে ছিল।
এরপর ভারত শাসনের হাল ধরে ঔপনিবেশিক ইংরেজরা। ইতিহাসের কোথাও দেখা যায় না যুদ্ধকালীন অথবা যুদ্ধ-পরবর্তী বিজিত অঞ্চলে মুসলমানদের দ্বারা ধর্মের কারণে কোনো নারী, শিশু, বৃদ্ধ লাঞ্ছিত হয়েছে কিংবা কোনো ধর্মীয় স্থাপত্য ধ্বংস করে সেখানে মুসলিম স্থাপত্য নির্মাণ করা হয়েছে। যদি সেটাই হতো তাহলে বিখ্যাত নালন্দা বিহার, সারনাথ, সাঁচি, চৈত্য, মথুরা, কাশী, গয়া, মহাস্থানগড়, সোমপুর ময়নামতিসহ ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে অসংখ্য বৌদ্ধবিহার ও স্থাপত্য নিদর্শন কোনো পর্যটকের চোখে পড়ত না। এমনকি হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোতেও গড়ে উঠতে পারত মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন। মুসলমানরা ভারতবর্ষে শক্তি প্রদর্শন করেননি; তারা ইসলামী সভ্যতা ও আদর্শ প্রচার করেছিলেন। তাদের সংস্পর্শে এসেই ভারতবর্ষ দেবতার উদ্দেশে নরবলি দেয়া, সতীদাহ প্রথা, জাত-পাত বিভেদ, বিধবা বিয়ে না করার মতো অসংখ্য মানবতাবিরোধী প্রথার মূল উৎপাটন করতে পেরেছিল। মুসলমানরা যুগে যুগে মানুষকে অন্ধকার পথ পরিত্যাগ করে আলোর পথে আসার জন্য আহ্বান করেছেন। সে আহ্বান জবরদস্তিমূলক কিংবা সহিংস ছিল না।
এই পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি এলাকা মুসলিম শাসনের অধীনে ছিল। যে স্থানেই মুসলমানরা আবাস গড়ে তুলেছে সেখানেই তারা ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদও নির্মাণ করেছে। মুসলিম অধিপতিদের এটা ছিল বৈশিষ্ট্য। বিজিত অঞ্চলে মসজিদ নির্মাণের আদর্শ নৃপতিরা নবী মুহাম্মদ সা:-এর জীবন থেকে গ্রহণ করেছেন। মসজিদ নির্মাণের শর্তের দৃষ্টান্ত মসজিদে নববী তৈরি করার ইতিহাস থেকে গ্রহণ করা হয়। নতুন মসজিদ তৈরির জন্য মসজিদের নামে স্বত্ব করে জমি ক্রয় করতে হয় কিংবা কোনো মুসলিম যদি মসজিদ নির্মাণের জন্য সম্পত্তি ওয়াকফকরত স্বত্ব ত্যাগ করেন, সেখানে মসজিদ নির্মাণে বাধা থাকে না। মদিনায় মসজিদে নববী যে স্থানে অবস্থিত এই জায়গাটির মালিক ছিল বনু নাজ্জার গোত্রের সোহেল ও সহল নামে দুই বালক। তাদের অভিভাবক ছিলেন আনসারদের প্রধান আসআদ ইবনে জোরারা। আল্লাহর রাসূল সা: এই স্থানে মসজিদ নির্মাণের সঙ্কল্প করেছেন জেনে ইবনে জোরারা জায়গাটি মসজিদ তৈরির জন্য দান করতে চাইলেন।
নবী করিম সা: এই প্রস্তাব গ্রহণ না করে নাজ্জার গোত্রের প্রধানদের ডেকে তাদের সামনে মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা পুনরায় ব্যক্ত করলেন এবং ওই ভূখণ্ডের উপযুক্ত মূল্য নির্ধারণ করে দিতে তাদের অনুরোধ জানালেন। অবশেষে জমির উপযুক্ত মূল্য নির্ধারিত হলো এবং রাসূল সা:-এর নির্দেশে হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা: জমির মালিকদের মূল্য পরিশোধ করে দিলেন। অতঃপর সেখানে আল্লাহর নবী মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করলেন। অর্থাৎ মসজিদ নির্মাণের জন্য একখণ্ড নিষ্কণ্টক জমির প্রয়োজন পড়ে। এই দৃষ্টান্ত মুসলিম অধিপতিদের অজানা থাকার কথা নয়। তা ছাড়া সম্রাট বাবরের সময় অযোধ্যায় উন্মুক্ত জায়গার এত সঙ্কট ছিল না যে, কোনো স্থাপত্য ভেঙে ফেলে সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। এ রকম হীনমানসিকতা মুসলমান সমাজে দেখা যায় না।
বাবরি মসজিদের ভিত্তি স্থান নিয়ে ভারতের প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের (এএসআই) জরিপ করা হয়েছে। সেই জরিপে মসজিদের নিচে প্রাচীন স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেসব ধ্বংসাবশেষকে সুনির্দিষ্টভাবে ‘মন্দির’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়নি। সেই ধ্বংসাবশেষ যে মুসলিম স্থাপত্যের নিদর্শন সেটাও জরিপে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাবরি মসজিদের ভিত্তিগহ্বরে নিচে যে ধ্বংসাবশেষ রয়েছে তা যদি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ না হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে মসজিদ নির্মাণে আপত্তি থাকার কারণ নেই। তা সত্ত্বেও ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট শুধু ধারণা ও কল্পনানির্ভর হয়ে যে রায় দিয়েছে, তা হিন্দু-মুসলিমের পরস্পর অবজ্ঞা ও অবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং এ রায় থেকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিস্তার লাভ করতে পারে। এমনিতেই ভারতে গরুর গোশত খাওয়া এবং আসামে ‘ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস্ (এনআরসি)’ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ রয়েছে। এই এনআরসি’ও মুসলমানদের সঙ্কটকে ঘনীভূত করতে পারে বলে মনে করা যেতে পারে। এ ছাড়াও শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গেও নাকি আসামের মতো করে এনআরসি কার্যকর করতে যাচ্ছে নয়াদিল্লি সরকার। এই পরিস্থিতিতে বাবরি মসজিদের রায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদীর দুরভিসন্ধিকে প্রকট করে তুলেছে।
শ্রী রামচন্দ্রের জন্মস্থান নিয়ে বাবরি মসজিদকে বিতর্কে ফেলে দেয়া হয়েছে। সেই রামচন্দ্রকে নিয়ে হিন্দুদের মধ্যে মতপার্থক্য লক্ষ করা গেছে। হিন্দুদের একাংশ শ্রী রামচন্দ্রকে স্বয়ং ভগবান বলে মনে করে এবং রামনবমী তিথিতে তার জন্ম উৎসব পালন করে। আবার অন্য অংশের লোকেরা মনে করে শ্রী রামচন্দ্র হলেন দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। রামচন্দ্র যদি স্বয়ং ভগবান হন তাহলে ভগবানের জন্মস্থান থাকার কথা নয়। আর যদি রামচন্দ্র ভগবানের অবতার হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রেও অবতার রামচন্দ্রের জন্মস্থান নিয়ে বহু মত রয়েছে। লোকবিশ্বাস মতে, রামের জন্ম স্থান অযোধ্যা। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে রামচন্দ্রকে ‘অযোধ্যার রাজা’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রামসংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনীর প্রধান উৎস হলো মহাকাব্য রামায়ণ। দেবর্ষি নারদ বাল্মীকিকে রামায়ণ রচনার জন্য নির্দেশ দিলে তিনি অকপটে স্বীকার করেছিলেন যে, তিনি শ্রী রামচন্দ্র সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এমনকি রামের নামও তিনি কোনোদিন শোনেনি। বাল্মীকিকে মহর্ষি শ্রী রামচন্দ্রের নাম শোনালেন এবং সেই গল্প নিয়ে রামায়ণ নামক মহাকাব্য রচনা করার নির্দেশ দিলেন।
রামায়ণ হলো রামভিত্তিক সাহিত্য গ্রন্থ। এই মহাকাব্য থেকে শ্রী রামের সঠিক জন্মস্থান নির্ণয় করা কতটা যুক্তিযুক্ত তা কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিমাত্রই ভালো উপলব্ধি করতে পারবেন। রামচন্দ্রের জন্মস্থান নিয়ে পরিব্রাজক পণ্ডিত রায় শঙ্করের মতামত আছে এবং তার সফরনামায় একজন রামচন্দ্রের উল্লেখ রয়েছে। ধারণা করা হয়, কবি বাল্মীকি শ্যামদেশের বাসিন্দা ছিলেন। থাইল্যান্ডকে পূর্বে ‘শ্যামদেশ’ বলা হতো। শ্যাম, কম্বোজ, বালি, সুমাত্রা ইত্যাদি সাগরকূলের দেশে রামচন্দ্রের কাহিনী প্রিয় হয়ে রয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। রায় শঙ্কর বলেছেন, থাইল্যান্ডে অবস্থিত অযোধ্যা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে থাইল্যান্ডের জাতীয় কোম্পানিরূপে দেখা হয় এবং রামায়ণ কাহিনীর বাস্তব পটভূমি ভেবে তিনি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় হিন্দুদের প্রাচীন তীর্থ শ্যাম-কম্বোজ অতি প্রসিদ্ধ। এখানে শিবের আদি তীর্থ ওঙ্কারধামও অবস্থিত। কৃত্তিবাস কর্তৃক রচিত রামায়ণ এবং বাল্মীকি রচিত রামায়ণে তথ্য-উপাত্তের তারতম্য লক্ষ করা গেছে।
ভারতবর্ষে রাম-রহিমের যে ইতিহাস রয়েছে সে ইতিহাস সময়ে সময়ে গতিপথ বদলিয়ে নিয়েছে। হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো খনন করা হলে সিন্ধু সভ্যতার প্রভাব নিয়েও ভারতীয় ইতিহাস তার পথ অতিক্রম করেছে। খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ শতকের হরপ্পা সভ্যতার সময় শ্রী রামচন্দ্র কোথায় ছিলেন তা নিয়েও গবেষণা হতে পারে। ধারণা করা হয়, দ্রাবিড়দের শহর ছিল হরপ্পা-মহেঞ্জোদারো। দ্রাবিড়দের অনার্য বলা হয়েছে। অনার্যদের তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে বসবাস গড়ে তুলেছে আর্যরা (খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০-১০০০)। আর্য হিন্দুরা ভারতের মূল অধিবাসী বলে নিজেদের দাবি করলেও ইতিহাস তাদের পরিচয় ভুলে যেতে দেয় না। বাবরি মসজিদ, এনআরসি গোমাংস ভক্ষণ ইত্যাদি নিয়ে যে অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে এগুলো অন্য কিছু নয়, একটি জাতিসত্তাকে বিলুপ্ত করে ফেলার অপচেষ্টা মাত্র। এই হীনম্মন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে ভারত দক্ষিণ এশিয়ার মোড়ল হতে ব্যর্থ হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা