২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ শাবান ১৪৪৬
`

অবিচার ও হাহাকার

অবিচার ও হাহাকার - ছবি : সংগ্রহ

মানবতার হাহাকার আজ চার দিকে। কোথাও যেন কেউ নেই তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর। সবখানেই ক্ষমতা এখন দুর্বৃত্তদের হাতে। মানবতার দুশমনদের দখলে যেন চলে গেছে সব। তাদের অবস্থা এখন রমরমা। মানবতার গতিপ্রকৃতি এখন চলে তাদেরই মর্জিতে ও ইচ্ছায়। জগতের সব বিত্ত-বৈভব এখন তাদের হাতে। দেশের আমলা-কামলা, আলেম, বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদেরাও সবাই যেন তাদের তাঁবেদার। সব এখন তাদেরই দলে ও দখলে। সবাই যেন এখন ক্ষমতাসীন দুর্বৃত্তদের দালাল ও লাঠিয়াল। এমনকি কবি-সাহিত্যিকদের মতো মুক্তচিন্তার কাণ্ডারিদের অনবদ্য শব্দাবলীও এখন নিথর এদের অতি অনাচারের কালচারে।

দুঃসহ এই অবস্থার মধ্যে কেউ যদিওবা মুখ খোলেন সাহস করে কিংবা ভুল করে, পরক্ষণেই তিনি হারিয়ে যান অজানায়। তারা নিজে থেকেই হারিয়ে যান নাকি তাদের হারিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, তা স্পষ্ট না হলেও সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দ্বিতীয় সম্ভাবনাই বেশি বলে ধারণা করা যায়। হঠাৎ মুখ হা-করা তেমনি এক কবির উচ্চারণে কিছুটা হলেও উঠে এসেছে আজকের জটিল অবস্থার ভয়াবহ চিত্র। অসহায় সেই কবি অকপটেই বলেছেন ‘দেখে শুনে মনে হয় বিধাতা যেন দুনিয়াটাকে বেচে দিয়েছেন শয়তানের কাছে’। দারুণ এক উচ্চারণ, কিন্তু ওই পর্যন্তই। সেই কবিও এখন নীরব, চলে গেছেন যেন অজ্ঞাতবাসে।

পরিস্থিতির শেষ বুঝাতে এমন বাক্যবিন্যাস অতি যথার্থ। চরম অসহায়ত্বের মুখে বিধাতাকে এভাবে একতরফা দায়ী করাও নতুন কিছু নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে পরম বিধাতার কোনো কাজ এমন সস্তা কেনা-বেচার বিষয় নয় বরং তাঁর সব কাজের পেছনেই রয়েছে সুনির্দিষ্ট কোনো না কোনো উদ্দেশ্য। মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাকের অনাদিকালের কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কারণ ও উদ্দেশ্যও।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক শুধু বিশ্বাসীদেরই স্রষ্টা নন, তিনি একইভাবে চরম নাস্তিকদেরও স্রষ্টা। তিনি বিশ্বাসীদের চাহিদা যেমনভাবে পূরণ করে থাকেন, ঠিক একইভাবে পূরণ করে থাকেন অবিশ্বাসীদের চাহিদাও। তিনি জানেন মানুষের মনের সুপ্ত আকাক্সক্ষাও, সে জন্যই তিনি সর্বজ্ঞ। তাই অবিশ্বাসীরা কী চায় তা তাঁর মোটেই অজানা নয়। আল্লাহ পাক তাঁর পবিত্র কালামে ওয়াদা করেছেন অবিশ্বাসীদের চাহিদা পূরণ করার। অবিশ্বাসীদের কাজের ফল তিনি তাদের চেষ্টা অনুপাতেই দিয়ে থাকেন, কিন্তু শর্ত হচ্ছে পরকালে তাদের প্রাপ্য হবে শূন্য যেহেতু তারা তাতে বিশ্বাসই করে না (সূরা ৩ : আয়াত ১৪৫; ৪২:২০ দ্রষ্টব্য)। তাই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসহীন ভালো কাজগুলোও বস্তুতপক্ষে একেবারেই মূল্যহীন।

আল্লাহ পাক ভালো করেই জানেন, ফেরাউনের করুণ পরিণতি জানা থাকা সত্ত্বেও দুনিয়াতে এমন বহু মানুষ থাকবে যারা মনে প্রাণে চাইবে ফেরাউনের মতো রাজত্ব, হতে চাইবে তার চেয়েও বেশি ক্ষমতাবান। দেশে-দেশান্তরের অনেকেই যে যেনতেন উপায়ে সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা ও তদবিরে ব্যস্ত থাকেন তা আমরা জানি সবাই। সেই তালিকায় আছে মুসলিম নামধারীরাও। বলাই বাহুল্য যে শুধুমাত্র মুসলিম নামের কারণে কেউ বিশ্বাসী হয় না। বরং অনেক সময় ভয়ঙ্কর অবিশ্বাসীরাও লুকিয়ে থাকে নিরীহ মুসলিম নামের আড়ালে। সেভাবেই বরং পাপাচার করা যায় নির্বিঘ্নে। কারণ তাতে ধরা পড়ার ভয় থাকে কম। কিন্তু তার পরও ধরা তাদের পড়তেই হয়। মাটি ফুঁড়ে চারা গাছ বের হওয়ার মতোই তাদের পাপাচারও একসময় বেরিয়ে পড়ে তাদের কথিত মুসলিম পরিচয়ের খোলস ফুঁড়ে। অতঃপর সেই পাপিষ্ঠকে আল্লাহ পাক উৎখাত করে থাকেন ফেরাউনের মতোই সমূলে। ফেরাউন হওয়ার স্বাদ মিটিয়ে দেন চিরতরে ফেরাউনের মতোই লোমহর্ষক পতনের মধ্য দিয়ে। সেটাই ঘটেছে সাদ্দাম ও গাদ্দাফির ক্ষেত্রে, সে পথেই চলছে আজকের সিসি ও সালমানেরা। এহেন শত ভাগ, আশি ভাগ ভোট খেকোদের পথ সাধারণত একমুখীই হয়ে থাকে, ফেরার রাস্তা এরা হারিয়ে ফেলে চিরতরে।

আল্লাহ পাক বস্তুত এভাবেই এদের মনোবাঞ্ছাগুলো পূরণ করে থাকেন যতটুকু তিনি চান, যেমন করেছিলেন ফেরাউনের ক্ষেত্রে। অতঃপর চোরের দশ দিনের পর আসবে সেই একটি দিন যখন এক লহমায় ক্ষান্ত হবে দলবলসহ সব অনাচারী এবং তাদের সব অনাচার। এটা মহান আল্লাহ পাকের এমনই এক সর্বময় কর্মপদ্ধতি যার মাধ্যমে তিনি ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকেন পাপিষ্ঠ স্বৈরাচারদের পাপকে (৩৫:৩৯ দ্রষ্টব্য)। তারা পাপ কামায় সম্পদ ও ক্ষমতা থেকে, সেই পাপ বাড়তে থাকে মজলুমের নিত্য আর্তনাদ আর অভিশাপের অব্যাহত ধারা থেকে। অতঃপর সেটাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে আল্লাহ পাক উৎপীড়িতের পাপগুলোকেও চাপিয়ে থাকেন ওইসব স্বৈর-পাপিষ্ঠদের ওপর। সবশেষে তাদের ভালো কাজের সওয়াবগুলোকেও কেড়ে নিয়ে বিলিয়ে দেন তাদের হাতে নির্যাতিতদের মধ্যে। এভাবেই সর্বস্বান্ত ও সর্বব্যাপী ধিক্কৃত হয়ে বিদায় নেয় স্বৈরশাসকেরা। সর্বশক্তিমানের এই অনবদ্য মহান বিচারব্যবস্থাই বস্তুত ইতিহাসের পরম শিক্ষা, যা থেকে দুর্ভাগ্যবশত কেউই কখনো শিক্ষা নেয় না। এই শিক্ষার উপসংহারে নির্যাতিত প্রজাদেরকেই সব সময় দেখা যায় টিকে থাকতে আর জমিদারদের রাজকীয় প্রাসাদগুলোকে পড়ে থাকতে দেখা যায় ভুতুড়ে বাড়ি হিসেবে। এমনই দুরবস্থা হয় অত্যাচারীদের প্রাসাদগুলোর যে অতি গরিব প্রজারাও থাকতে চায় না সেখানে। সেখানে বাসা বাঁধে সাপ-খোক, পাখি আর পশুদের দল। একালের প্রজাদেরও মুক্তির সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় ইনশাআল্লাহ।
লেখক : লস অ্যাঞ্জেলস, যুক্তরাষ্ট্র, প্রবাসী
লেখকের বই পেতে : Search Mainul Ahsan at amazon.com


আরো সংবাদ



premium cement
পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, মধ্যরাতে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বনশ্রীতে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ‘২০০ ভরি’ স্বর্ণালঙ্কার ছিনতাই পাঠ্যবই মুদ্রণে সফল ৩৫ প্রতিষ্ঠানকে এনসিটিবির সংবর্ধনা অপারেশন ডেভিল হান্টে আরো ৫৮৫ জন গ্রেফতার সেনা অফিসারদের হত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের দাবিতে সমাবেশ দেশের আকাশসীমায় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সচেষ্ট : বিমান বাহিনী রমজানে কোনো নিত্য পণ্যের দাম বাড়বে না : অর্থ উপদেষ্টা নতুন গবেষণা ইনস্টিটিউটের আত্মপ্রকাশ মিরসরাইয়ে উদয়ন মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ সম্পন্ন নাহিদের পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে যা জানা গেল জার্মান নির্বাচন : বুথ ফেরত জরিপে এগিয়ে সিডিইউ

সকল