এমন টকশোর সার্থকতা কী?
- মো: ইখতিয়ার উদ্দিন রিবা
- ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৪
প্রায় ১৫ বছর আগে, অনধিক ৩৫ বছর বয়সী গলায় পুঁতির মালা ও ললাটে তিলককাটা গ্রাম্য এক কথিত ঠাকুর আমন্ত্রিত হয়ে আসেন শিশুর কোষ্ঠী অর্থাৎ জন্মপঞ্জিকা (Horoscope) লেখার উদ্দেশ্যে। কথার মাঝে ঘন ঘন সংস্কৃত শ্লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে পাণ্ডিত্য বোঝাতে চাওয়ার কারণে অন্যদের বিরক্তি বোধে অগত্যা তাকে ক্ষান্ত হওয়ার অনুরোধ জানাতে হয়। না বোঝা ছাড়াও বয়স, অবস্থা ও পারিপার্শ্বিকতায় তার এমন শ্লোক শেখার বা জানার ব্যাপারে তথা উচ্চারণভঙ্গি সংস্কৃত ভাষাজনিত নয় বলেই সন্দেহের উদ্ভব হয়। ‘অগুণস্য হতং রূপস্’ অর্থাৎ, নির্গুণ ব্যক্তি রূপবান হলেও তার রূপ বৃথা। ‘অঙ্গার : শতধৌতেন মলিনত্বৎ ন মুঞ্চতি’, অর্থাৎ কয়লা শতবার ধৌত করলেও ময়লা যায় না। এ ধরনের সংস্কৃত প্রবাদবাক্য বাংলা স্বরভঙ্গির উচ্চারণে সঠিক না হওয়ারই কথা।
টেলিভিশন টকশোতে যদি অনুরূপভাবে, অর্থাৎ প্রতিপক্ষের বক্তব্যের বিপরীতে কেউ ভিত্তিহীন এবং দলীয় স্বার্থে মনগড়া যুক্তি বা তথ্য উপস্থাপন করে পাণ্ডিত্য জাহির করেন, তা ক’জন শ্রোতা-দর্শক বুঝতে পারেন? এ ছাড়াও উত্তরদাতার বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় সঞ্চালনকারী নিজে একই সাথে বলতে শুরু করে দিলে কারো কথাই না বোঝার অবস্থা সৃষ্টি হয়। বিদ্যুতের অপচয় ঘটিয়ে এমন টকশো শোনার আগ্রহ অনেকেরই হারানো স্বাভাবিক।
গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১টায় যমুনা টিভির ২৪ ঘণ্টার টকশোতে ফজলুল হক ও সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের মতো দু’জন শিক্ষাবিদসহ রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে টেলিফোনে যুক্ত হওয়া দু’টি নতুন মুখের উপস্থিতি হঠাৎ নজরে পড়ে। ফলে নিরপেক্ষ বক্তব্য শোনা ছাড়াও কিছু জানার ও শেখার আগ্রহে অন্য চ্যানেলে ভারতীয় গান শোনার পরিবর্তে অনুষ্ঠানটি দেখলাম। এর একপর্যায়ে প্রসঙ্গত, ফজলুল হক বলেন, ‘১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল কেন? এর জন্য আওয়ামী লীগ কতটুকু দায়ী, তা-ও দেখতে হবে। জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে তো গণতন্ত্র আশা করা যায় না। তারা এসেছে প্রতিবিপ্লব (counter revolution) করে।’
এই বক্তব্য শেষ হতে-না-হতেই এর প্রতিবাদী উত্তরের উদগ্রীবতায় চট্টগ্রামের ওই ভদ্রলোক বললেন, “আমাকে বলতে দিন, ’৭১-এ ওটা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধ- বিপ্লব নয়। প্রতিবিপ্লব হলো কর্নেল তাহের যেটা করেছেন, সেটা।” কিন্তু এই দ্বিমত খণ্ডনে সঞ্চালনকারী ফজলুল হককে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের কাছে অন্য প্রসঙ্গে তার অভিমত চান। এমন অবস্থায় ওই অনুষ্ঠানের হাজারো দর্শক-শ্রোতা এ প্রসঙ্গে কী বুঝলেন, জানলেন বা শিখলেন?
রেভুলিউশন এর শব্দার্থ বিপ্লব। এটা বিদ্যমান সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তনকল্পে ঘটানো হয়ে থাকে। ১৭৬০ সালে প্রথমে ইংল্যান্ডে এবং পরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠা শুরু হওয়াকে ইতিহাসে শিল্পবিপ্লব বলা হয়। আবার অনেক দেশের স্বাধীনতাও বিপ্লবেরই ফসল। Encyclopedia Britannica, Vol-15, Page-789- এ বিপ্লব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “In the former colonial regions, freedom from foreign domination was achieved in this way, but usually at the price of a reduction in civil liberties.”
Micropedia, Vol-I, Page-308-এ ‘আমেরিকান বিপ্লব’ শিরোনামে বলা হয়েছে, “18th- Century struggle by 13 American colonies to gain independence from Great Britain, culminating in victory through the war of independence, (1775-1783)। এর পরই রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনে ১৭৮৯-এ শুরু হওয়া ফরাসি বিপ্লবের ফলস্বরূপ গর্বভরা কথা হয় ‘নাগরিক’। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিপ্লবী স্লোগান হলো ‘কমরেড’।
বিপ্লবোত্তরকালে অর্জিত কিছু পরিবর্তনের চেষ্টাকে প্রতিবিপ্লব বলা হয়, যা ১৯৭০-এর দশকে লিন বিয়াও এবং জিয়াং কুইং চীনে ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তাই ফজলুল হকের সঠিক বক্তব্যে দ্বিমতের আদৌ কোনো অবকাশ নেই। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সঞ্চালনকারী এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য রাখার সুযোগ না দেয়া শ্রোতা হিসেবে অপমানের শামিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা