৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

আরব বিশ্বে প্রথম পারমাণবিক চুল্লি বসানোর অনুমতি আরব আমিরাতের

-

সংযুক্ত আরব আমিরাত গতকাল সোমবার বলেছে, তারা বারাকাহ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। আরব বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের অনুমতিকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছে দেশটি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের যথেষ্ট পরিমাণে উদ্বৃত্ত জ্বালানি মজুদ রয়েছে। তবে এক কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে সৌরবিদ্যুৎসহ বিকল্প বিদ্যুৎ উৎসের জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে।
আবুধাবির পশ্চিমে উপসাগরের উপকূলে অবস্থিত বারাকাহ চুল্লিটি ২০১৭ সালের শেষদিকে চালু হওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মকর্তারা নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে বিলম্ব হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিল। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিনিধি হামাদ আল কাবি বলেছেন, তবে জাতীয় পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি চুল্লির প্রথমটি চালু করার জন্য লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে।
কাবি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সংযুক্ত আরব আমিরাতই এ অঞ্চলের প্রথম আরব দেশ হিসেবে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছে’। ‘নেতাদের সুদূরপ্রসারী দূরদৃষ্টি এবং দেশটিতে ভবিষ্যতে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি কর্মসূচি তৈরির কারণে এই মাইলফলক অর্জনে সক্ষম হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।’ এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এই অঞ্চলে প্রথম। বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারী দেশ সৌদি আরব বলেছে, তারা ১৬টি পারমাণবিক চুল্লি তৈরির পরিকল্পনা করেছে, তবে প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আবুধাবি কর্তৃপক্ষ জানুয়ারিতে বলেছিল যে কয়েক মাসের মধ্যেই এই প্ল্যান্টটির কাজ শুরু হবে। সোমবার কোনো নতুন তারিখ ঘোষণা দেয়া হয়নি তবে শিগগিরই এটি হতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কাবি। তিনি বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে বরাকাহ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম সংযুক্ত আরব আমিরাতের উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টার জন্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এর বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নে প্রস্তুতির জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থা একটি নির্দিষ্ট সময় নেবে।’ কোরিয়া ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশনের নেতৃত্বে কয়েকটি কোম্পানি যৌথভাবে প্রায় ২৪.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে। যখন এটি পুরোপুরি চালু হবে তখন চারটি চুল্লি পাঁচ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা রাখবে। যা দেশে বিদ্যুতের মোট চাহিদার ২৫ শতাংশ হবে। তিনটি পারমাণবিক চুল্লি অপারেশনের জন্য প্রায় প্রস্তুত।
পারমাণু চুল্লিতে অস্বস্তি আরব উপদ্বীপে
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পারমাণবিক চুল্লি আরব উপসাগরে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। যখন পৃথিবীর সুস্থতা রক্ষার কথা আসে তখন জীবাশ্ম জ্বালানি ক্রমবর্ধমান বিতর্কিত শক্তির উৎস হয়ে দাঁড়ায়। পারমাণবিক অভিজ্ঞতা এবং বেসামরিক প্রযুক্তিটিকে সামরিক ব্যবহারে রূপান্তরিত করার সম্ভাবনা দেখে পারমাণবিক চিন্তাধারা আরো তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আরব উপদ্বীপের মতো ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এই অঞ্চলে যখন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হবে তখন ঝুঁকিগুলো আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যদিও এখান থেকে এই অঞ্চলের এগিয়ে যাওয়া শুরু হবে তাই, মার্চ মাসের শেষের দিকে আবুধাবির আল ধাফরা অঞ্চলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বারাকাহতে চারটি পারমাণবিক চুল্লির মধ্যে প্রথমটি আনতে চলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত যা দেখবে বিশ্ব। দেশটির প্রতিমন্ত্রী সুলতান বিন আহমদ আল জাবের আবুধাবি সাপ্তাহিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা নিরাপদ, বাণিজ্যিক ও শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তি সরবরাহকারীর জন্য এই অঞ্চলে প্রথম দেশ হয়ে উঠব’।

 


আরো সংবাদ



premium cement