২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পণ্য আমদানির নামে বিদেশে মুদ্রা পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামে ২টি মামলা

-

অস্থিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য আমদানির নামে বিদেশে মুদ্রা পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো দু’টি মামলা দায়ের করেছে চট্টগ্রাম শুল্ক ভবনের এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট। দু’টি মামলায় আসামি করা হয়েছে পাঁচ ব্যক্তিকে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে গড়ে ওঠা সঙ্ঘবদ্ধ জালিয়াত চক্র কর্তৃক জাল নথিপত্র তৈরি করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে পণ্য আমদানির মাধ্যমে মুদ্রা পাচার বা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তবে শুল্ক কর্মকর্তাদের হাতে এ ধরনের ঘটনা মাঝে মধ্যেই ধরা পড়ে। কাস্টম সংশ্লিষ্টদের মতে সঙ্ঘবদ্ধ চক্রটির সাথে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাও জড়িয়ে পড়ছে।
কাস্টম সূত্র জানিয়েছে, এ ধরনের পণ্য চালান আটকের ক্ষেত্রে মুদ্রা পাচারের মামলা করতে অনেক কিছুই যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশের কাস্টম হাউজগুলোর মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম কাস্টমসেই এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিট রয়েছে। গত বছরের এপ্রিলের শেষে এবং মে মাসের শুরুতে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মেসার্স শ্রী ভারি ইন্টারন্যাশনাল(এসজি) প্রা: লি: নামীয় একই রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হতে দেশীয় দু’টি প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানিকৃত পণ্য চালান আটকের পর সরেজমিন খোঁজ নিয়ে শুল্ক কর্মকর্তারা জানতে পারেন প্রতিষ্ঠান দু’টিই ভুয়া। দু’টি চালানেই সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে বিদেশী ব্র্যান্ডের সিগারেট। কিন্তু ঘোষণা ছিল গার্মেন্ট পণ্য ফেল্ট এবং ব্র্যান্ড নিউ মেশিনারি ফর প্রিন্টিং উইথ স্ট্যান্ডার্ড এক্সেসরিজ। এই দু’টি চালানে দুই কোটি টাকার অধিক বিদেশে পাচারসহ প্রায় ১৩ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করা বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশেরও অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনা ১
কাস্টম সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, কন্টেইনার নম্বর সিএনসিইউ ১৫০৪৬২০ এবং বিল অব লেডিং (বিএল) নম্বর এসএলপিএলএসআইএনসিজিপি১৮০৮৭এর মাধ্যমে অবৈধ পণ্য আমদানি হয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক কর্তৃপক্ষ অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিএল ব্লক করে কন্টেইনারটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য কমিটি করা হয় ২৬ এপ্রিল শতভাগ কায়িক পরীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা হেফাজতে সংরক্ষণ করা হয়। শুল্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী চালানটির আমদানিকারক মেসার্স গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশন, ২৪/এ পুরানা পল্টন, ড. নওয়াব আলী টাওয়ার, পল্টন, ঢাকা। কিন্তু সরেজমিন যাচাই করে আমদানিকারকের কোনো অস্থিত্ব মিলেনি বলে কাস্টম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধির সম্মুখে কন্টেইনারটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য খোলা হলে কায়িক পরীক্ষায় কন্টেইনারটিতে ঘোষিত পণ্য ‘৩৩৭ বেলস ফেল্ট (৩৬৪৫ কেজি)’ এর পরিবর্তে ১৫ লাখ শলাকা বিদেশী মন্ড ব্র্যান্ডের সিগারেট এবং ৫০ লাখ শলাকা বিদেশী ৩০৩ ব্রান্ডের সিগারেট পাওয়া যায়।
প্রাথমিক তদন্তের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমতিক্রমে এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শেখ মঞ্জুরুল ইসলাম বাদি হয়ে গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের বন্দর থানায় মুদ্রাপাচার আইনে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলো, অস্থিত্বহীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী দেওয়ান বুলবুল ইসলাম, নুর আল মামুন এবং মেসার্স এ জান চৌধুরী অ্যান্ড সন্স-এর স্বত্বাধিকারী আওলাদ জান চৌধুরী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, মেসার্স গ্রাম বাংলা ফুড করপোরেশনের নামে দেওয়ান বুলবুল গত বছরের ২০ মার্চ তারিখে ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে ব্যাংক এশিয়া লি: উত্তরা শাখায় চলতি হিসাব নং-০১৫৩৩০২৪৬৮ খোলেন। ওই শাখায় একই ব্যক্তির স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মেসার্স গ্রিন হুইল লি: নামীয় অপর একটি হিসাব গত বছরের ১৪ মার্চ তারিখে খোলা হয়। শুল্ক কর্মকর্তারা নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেওয়ান বুলবুল ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালক বলে তথ্য পায়। গ্রাম বাংলা ফুডের হিসাবের লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই মামলার ২ নম্বর আসামি নুর আল মামুন ওই বছরের ২৯ মার্চ তারিখে অনলাইনে ব্যাংক এশিয়ার ঢাকা প্রিন্সিপাল শাখা হতে সাড়ে ৮ লাখ টাকা জমা করা হয়। গ্রাম বাংলা ফুডের আইআরসি নিবন্ধন সার্টিফিকেট এবং এক্সিম ব্যাংকের ইসলামপুর শাখার হিসাব পর্যালোচনায় গত ৫ জুন ২০১৬ হতে ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ৩৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা ও সমপরিমাণ উত্তোলনের তথ্য পায়।
মেসার্স এ জান চৌধুরী অ্যান্ড সন্স নামে ঢাকা ব্যাংক লি: এর রাজানগর শাখায় পরিচালিত হিসাব (নং২৩০.১০০.৪৩৬, প্রোপ্রাইটর-আওলাদ জান চৌধুরী) হতে ২২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে ১০ লাখ টাকা ক্লিয়ারিং এর মাধ্যমে গ্রাম বাংলা ফুডের এক্সিম ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হলেও ওই হিসাব হতে উত্তোলিত অধিকাংশ অর্থ পুনরায় মেসার্স এ জান চৌধুরী অ্যান্ড সন্সের ঢাকা ব্যাংকের হিসাবে জমা করা হয়েছে বলে নথিতে উল্লেখ রয়েছে।
নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাংক এশিয়া লি: এর উত্তরা শাখা কর্তৃক যথাযথ ডিউ ডিলিজেন্স না করায় এবং ওই শাখার কর্মকর্তাদের জ্ঞাতসারেই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিনে সিঙ্গাপুর হতে গার্মেন্ট পণ্য ফেল্ট আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়।
মামলার নথিতে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের মেসার্স শ্রী ভারি ইন্টারন্যাশনাল (এসজি) প্রা: লি: এর ও যোগসাজশের অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা এই চালানে ৪৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭১০ টাকা বিদেশে পাচার এবং প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঘটনা ২
কাস্টম সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৬ এপ্রিল কাস্টমসের এআইআর শাখার কর্মকর্তারা গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারেন যে, কন্টেইনার নং-সিসিএলইউ৬৫৫৮৯৭০ এবং বিল অব এন্ট্রি নং-এসএলপিএলএসআইএনসিজিপি১৮০৯১, এলপিএলএসআইএনসিজিপি১৮০৯৪ এর মাধ্যমে অবৈধ পণ্য আমদানি হয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে শুল্ক কর্তৃপক্ষ অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে বিএল ব্লক করে কন্টেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা হেফাজতে সংরক্ষণ করা হয় এবং শতভাগ কায়িক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হয়। শুল্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী চালানটির আমদানিকাক মেসার্স এন ইসলাম এন্টার প্রাইজ, রহমান ম্যানসন, ১৬১ মতিঝিল, ঢাকা এবং মেসার্স আনোয়ার অ্যান্ড কোং, ৯৯ যাত্রাবাড়ী ঢাকা। কিন্তু সরেজমিন যাচাই আমদানিকারকের কোনো অস্থিত্ব মেলেনি বলে কাস্টম সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গত বছরের ৬ এপ্রিল দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ড. এ কে এম নুরুজ্জামান, অতিরিক্ত কমিশনার, এআইআর প্রধান ও ডেপুটি কমিশনার নুর উদ্দিন মিলনসহ কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন সংস্থা ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধির সম্মুখে কন্টেইনারটি খোলা হয়।
কায়িক পরীক্ষায় কন্টেইনারটিতে ঘোষিত পণ্য ‘১৪ সেট ব্রান্ডনিউ মেশিনারি ফর প্রিন্টিং উইথ স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্সেসরিজ’ এবং ‘ওয়ান সেট প্যাকেজিং ব্যাগ’ এর পরিবর্তে ৬৬ লাখ ৯৪ হাজার শলাকা বিদেশী সিগারেট পাওয়া যায়। কাস্টম সূত্র জানায়, আটককৃত চালানটিতে ইজি স্পেশাল গোল্ড, ইজি লাইট, ব্ল্যাক, বেনসন অ্যান্ড হেজেজ, ডানহিল, ৩০৩ ব্র্যান্ডের সিগারেট রয়েছে। এতে ৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা শুল্ক ফাঁকির চেষ্টা করা হয়।
এই ঘটনায় চট্টগ্রাম শুল্ক ভবনের এন্টি মানি লন্ডারিং ইউনিটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা প্রসাদকুমার মণ্ডল বাদি হয়ে চট্টগ্রামের বন্দর থানায় মুদ্রা পাচার আইনে মামলা দায়ের করেন। গত ২৯ আগস্ট দায়েরকৃত মামলায় আসামি করা হয়েছে দুই ব্যক্তিকে। আসামিরা হলো অস্থিত্বহীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো: আবদুল বারিক ও মো: কবির হোসেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, এই মামলার এক নং আসামি আবদুল বারিক গত বছরের ৩ মার্চ তার প্রতিষ্ঠানের নামে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় একটি শর্ট নোটিশ ডেপোজিট হিসাব খোলেন ৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে। তিনি ওই ব্যাংকের গুলশান শাখায়ও ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর একটি চলতি হিসাব খোলেন। ২ নং আসামি কবির হোসেন গত বছরের ২১ মার্চ এবং ২৫ মার্চ গুলশান ও ধানমন্ডি শাখায় ২ লাখ ও ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা করেন। মেসার্স এন ইসলাম এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে সিঙ্গাপুরে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শ্রী ভারি ইন্টারন্যাশনাল(এসজি) প্রা: লি: এর নিকট হতে ৫ হাজার ১১০ মার্কিন ডলার মূল্যের ব্রান্ড নিউ মেশিনারি ফর প্রিন্টিং উইথ স্ট্যান্ডার্ড এক্সেসরিজ আমদানির জন্য সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড ক্রেডিট ব্যাংক লি: আমদানি ঋণপত্র খোলার জন্য ০৪.০৪.১৮ তারিখে অনুমোদন প্রাপ্ত হন।


আরো সংবাদ



premium cement
ফল আমদানি কি আদৌ অত্যাবশ্যক ‘শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের অনুকম্পায় দল গঠন করছে না’ সোনাইমুড়ী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খলিল গ্রেফতার এনডিএম ও গণধিকার পরিষদের সাথে বিএনপির লিয়াজোঁ বৈঠক বিনা শর্তে দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়ল শ্রমিকরা রেমিট্যান্স বাড়ায় দেশের রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে শরণার্থীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণ সুদান সরকারকে বিরোধ নিষ্পত্তির নোটিশ এস আলম গ্রুপের, নইলে আন্তর্জাতিক সালিশির হুমকি একনেকে ১ হাজার ৯৭৪ কোটি টাকার ১০ প্রকল্প অনুমোদন সালাহর চমকে উড়ল লিভারপুল ডেঙ্গুতে আরো ১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ১৭২

সকল